ঘুরে এলাম প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি জাফলং

প্রকাশিত: ৬:০৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০২০

ঘুরে এলাম প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি জাফলং

ইমদাদুর রহমান ইমদাদ:
প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি জাফলং। জাফলং, বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত একটি পর্যটন এলাকা। জাফলং, সিলেট শহর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত।
জাফলং এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মূলত পিয়াইন নদীর অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত।
সিলেট জেলার জাফলং-তামাবিল-লালাখাল অঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ী উত্তলভঙ্গ। এই উত্তলভঙ্গে পাললিক শিলা প্রকটিত হয়ে আছে, তাই ওখানে বেশ কয়েকবার ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এটি সিলেট বিভাগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। জাফলং সিলেট শহর হতে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে খাসিয়া পল্লীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত। এখানকার নদী ভারতের হিমালয় থেকে উৎপত্তি হয়ে জাফলং দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় অনেক ছোট বড় পাথর বয়ে নিয়ে আসে। এই পাথরগুলির উপর নির্ভর করে অনেক মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এখানে নদীতে নৌকা ভ্রমণের সময় পাথর ও বালু আহরণ করার অপরূপ সৌন্দর্য সত্যি উপভোগ করার মতো।
জাফলং পুরোপুরি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পাহাড়ি এলাকা, যেখানে পাহাড়ের সাথে বন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। পাহাড ভেদ করে আচড়ে পড়া স্বচ্ছ ঝরনার পানিতে তাকালেই দেখা যায় পাথর গড়িয়ে গড়িয়ে আসছে। নৌকা,ট্রলার নিয়ে একটু এগোলেই পাওয়া যায় বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত। সীমান্ত ওপারে দেখা যায় খাসিয়াদের ঘরবাড়ি। এখানে আরো দেখতে পাওয়া যায় বিএসএফ, বিজিবির ঘুরাঘুরি এবং ছোট ছোট টং দোকান। বল্লাঘাটের তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ভারতের ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি সেতু, মারি নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়ের গহীন অরণ্য ও সুনসান নীরবতার কারণে জাফলং পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। এখানে প্রতিদিন দেশি-বিদেশী অসংখ্য পর্যটক এই প্রাকৃতিক ঝরনাধারাটি দেখতে আসেন। এই এলাকায় যেমন সাধারণ বাঙালিরা বসবাস করেন, তেমনি বাস করেন উপজাতিরাও। জাফলং-এর বল্লা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর জুড়ে রয়েছে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জি।
ফাগুনের আগমনে ফুল, পাখি আর শিমুল পলাশে যখন নতুন প্রাণের স্পন্দন! ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতিতে একটা উৎসব আছে যুগ-যুগান্তর ধরে। তাই বসন্ত ঋতুর মাস ফাল্গুনকে প্রতিবারই ভিন্নরূপে নতুনভাবে বরণ করে নেন ভ্রমণপিপাসুরা। শীতের চাদরের আবরণ ফেলে, ফাল্গুনের নতুন সূর্যালোকের টানে সবাই ছুটে যেতে চাই প্রকৃতির সান্নিধ্যে। ঠিক এমন সময়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, যুব রেড ক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের যুব সদস্যরা মেতে উঠেন বিভিন্ন আনন্দ আয়োজনে। “যুব রেড ক্রিসেন্ট সদস্য মোরা করি নিবেদন, মানবতার তরে আসুন উজাড় করি মন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, যুব রেড ক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের সকল সদস্যরা মেতে উঠেছিলেন পিকনিক ও বনভোজনে।
দিনটি ছিল ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ইংরেজী, শুক্রবার। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, যুব রেড ক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের উদ্যোগে সিলেটের জাফলং ডাকবাংলো স্থানে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক বনভোজন।সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত যুব সদস্যরাও আনন্দে দিনটি অতিবাহিত করেন। এতে অনেক মহিলাও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে অংশ গ্রহন করেছিলেন।
সিলেট ক্বীন ব্রিজ থেকে সকাল ৯ টায় বাসযোগে রওয়ানা হন যুব রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা। প্রায় ৩ ঘন্টা জার্নির মাঝ পথে শ্রীপুর পিকনিক সেন্টারে ৩০ মিনিট যাত্রা বিরতি দিয়ে স্হানীয় ডাকবাংলোতে পৌছেন। যাত্রার শুরুতে স্বাগত ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, যুব প্রধান মোঃ মিনহাজুুল আবেদীন, জনসংযোগ ও পরিকল্পনা বিভাগীয় প্রধান আফজাল হোসেন তুহিন, উপ যুব প্রধান তোফায়েল আহমদ, ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক প্রধান ফারহান আহমদ সুয়েব। জার্নির সময় বাসে আনন্দ দিতে গান, কবিতা, কৌতুক, অভিনয় করে মাতিয়ে রাখেন, আতিকুজ্জামান , ইমদাদুর রহমান ইমদাদ, মৌসুমী বেগম, আফজাল হোসেন তুহিন, ফারহান আহমদ সুয়েব, রুহেল খান, রাজিব আহমদ ও রাসেল আহমদ প্রমুখ। প্রায় ৩ ঘন্টা জার্নি শেষে ডাকবাংলোতে দুপুরের লাঞ্চ করা হয়। লাঞ্চ শেষে আনন্দ যোগ করতে ভিন্নধর্মী খেলার আয়োজন করা হয়। এতে ছেলে-মেয়েদের জন্য কমলা বদল খেলায় প্রায় ৪০ জন অংশ গ্রহণ করেন। উক্ত খেলায় বিজয়ী মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন যুব সদস্য মাইশা বেগম, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন রিনা বেগম। ছেলেদের মধ্যে বিজয়ী পুরস্কার লাভ করেন, যুব সদস্য মিজানুর রহমান, যুব সদস্য ইমদাদুর রহমান ইমদাদ।
খেলা শেষে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আমাদের উৎসাহ প্রধান ও অনুপ্রাণিত করেন, রেড ক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের সেক্রেটারি জনাব আব্দুর রহমান জামিল। যুব প্রধান মোঃ মিনহাজুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং উপ-যুব প্রধান১ নাজিম খানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেড ক্রিসেন্ট সিলেটের কার্যকরী কমিটির অন্যতম সদস্য সুয়েব আহমদ, সাবেক যুব প্রধান এনামুল হক চৌধুরী সুহেল ও আজীবন সদস্য তাজ খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অতিথিদৃন্দকে সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে ভ্রমণ পিপাসুরা বেরিয়ে পড়েন প্রকৃতির ঝরনাধারা, টুকরো টুকরো পাথর, ঝিকিমিকি বালুকার চরে। স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কাটা, হৈ হুল্লোড, খেলা, গ্রুপ ছবি ও আনন্দমনে মোঠোফোনের সাহায্যে সেলফী তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই। দিনব্যাপী পিকনিকের আনন্দ উপভোগ করতে করতে যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে তখন টাক আসে এবার ঘরে ফিরার পালা। প্রশান্ত মন তখনও মগ্ন। প্রকৃতি কন্যার কাছ থেকে মন ফিরে আসতে চায়না কংক্রিটের যান্ত্রিক এই শহরে! সত্যি এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে স্মৃতির সোনালি পাতায়।
সুন্দর এ আয়োজনে যাঁদের সবর উপস্থিতিতে এই মিলনমেলা মুখরিত হয়ে উঠেছিলো তারা হলেন- যুব রেড ক্রিসেন্ট, সিলেট ইউনিটের যুব প্রধান মোঃ মিনহাজুল আবেদীন, উপ-যুব প্রধান১ নাজিম খান, উপ যুব প্রধান২ তোফায়েল আহমদ, জনসংযোগ ও পরিকল্পনা বিভাগীয় প্রধান আফজাল হোসেন তুহিন, প্রশিক্ষণ বিভাগীয় প্রধান শাহনুর চৌধুরী সাথি, বিভাগীয় উপ-প্রধান প্রশিক্ষণ আতিকুজ্জামান, সেবা ও স্বাস্থ্য বিভাগীয় প্রধান পারভেজ আহমদ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি বিভাগীয় উপ-প্রধান ফারহান আহমদ সুয়েব, বিভাগীয় প্রধান রক্তদান রিনা বেগম, সাংস্কৃতি বিভাগীয় উপ-প্রধান সুমা বেগম এবং যুব রেডক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের সাধারণ সদস্য ইমদাদুর রহমান ইমদাদ, রুহেল খান, রাজিব আহমদ, আলী হায়দার জামি, সাহেল আহমদ, জাকির আহমদ, মিজানুর রহমান, মোঃ কামরান আহমদ, পলাশ, রাসেল আহমদ, শারমিন ইসলাম, মাইশা বেগম, বদরুল আজাদ শুভ, খাদিজা বেগম, জাকিয়া আক্তার, আয়শা ফরাজি, সুমি বেগম, সিপা বেগম, শাপলা বেগম, রিতা বেগম, মুর্শেদা খানন, শেখ জুহিন রহমান, নাহিদ খান, জামাল আহমদ, শামছুল ফাহিম, হিমেল, বিজয় দাস, জয়ন্ত পাল, ইমন আলী, ইমরান আলম, আব্দুর রহমান খান রুহেল, ইমরানা বেগম, নাইমা বেগম, পৃর্ণিমা বেগন, হোসনে আরা আক্তার সুমি প্রমুখ।
সিলেট মহানগরীর সাথে জাফলং- এর ৫৫ কিলোমিটার সড়ক তৈরি হওয়ার মাধ্যমে দেশের অন্যান্য সকল অঞ্চল থেকে এই এলাকার সাথে সড়ক-যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সড়কপথে সিলেট সদর থেকে এই স্থানের দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার।জাফলং জিরো পয়েন্টে রয়েছে তামাবিল স্থল বন্দর, এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতের সাথে পণ্য আমদানি রপ্তানী করা হয়। বিশেষ করে ভারত থেকে কয়লা আমদানি করা হয়।

লেখকঃ রোটারেক্টর ইমদাদুর রহমান ইমদাদ, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক সিলেট ছাত্র ও যুব কল্যাণ ফেডারেশন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ