করোনাকালে একজন পাঠকের দায়মুক্তি

প্রকাশিত: ৯:২২ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০২০

অারশাদ সিদ্দিকী, ২৯ এপ্রিল ২০২০ : বাংলা সাহিত্যের পাঠক হিসেবে খানিক শ্লাঘা ছিলো। একটা সময় হাতের কাছে যা পেয়েছি তাই পড়েছি। ভালো মন্দ বাছ- বিচার করিনি। বয়স বেড়েছে। মগজ আর অমন নির্বিচার অত্যাচার নিতে পারেনা।

অারশাদ সিদ্দিকী

তাই পাঠের আগে নির্বাচনের দায়ও বর্তেছে।

পাঠের আগে পাঠযোগ্য গ্রন্থ নির্বাচন আমার মত নিরীহ পাঠকের জন্য আরেক বিড়ম্বনা। আর এদিকে তো হাজার হাজার পুস্তক বছর বছর কুষ্মান্ডের মত প্রসবিত হচ্ছে। তকমা আঁটা ঊন লেখকদের আস্ফালন আর প্রচারিত হওয়ার কৌশল দেখে, পাঠক হিসেবে বড্ড বিপন্ন লাগে।

ফলে সাহিত্যের নিবিড় পাঠ থেকেও নিজেকে দূরে রাখি। সামান্য পাঠক আমি। আমার পাঠ বিরতিতে বাংলা সাহিত্যের মাঠে মৌসুমী-অমৌসুমী ঘোড়সাওয়ারদের থোরাই কিছু যায় আসে। টনে টনে সাদা কাগজে লক্ষ লক্ষ কালো অক্ষর উৎপাদিত হতে থাকে।

আমার আর সাগর সেঁচে মুক্ত তুলে আনা হয় না। পেটের দায়ে পাঠের দায় পাত্তা পায় না। ফলে অপঠিত গ্রন্থের ভিড়ে কোনো হীরা- চুনি-পান্না আছে কি না, জানা হয় না। করোনাকালের গৃহান্তরীন সময় সেই অজ্ঞানতা থেকে মুক্তির খানিকটা সুযোগ তৈরি করে দেয়।

প্রায় বছর পঁচিশ আগে বাংলা সাহিত্যের আবির্ভূত একজন লেখকের দু-চার খানা কিতাব হাতে তুলে নিই। তিনি শক্তিমান লেখক জানতাম। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তাঁর লেখার ধার এতটা শানিত হয়েছে তা ছিলো আমার উপলব্ধির বাইরে। যতই তাকে নিবিড় পাঠিয়ে মনোযোগী হতে থাকি, আমার অপরাধ ও লজ্জা ততই ঘনীভূত হয়।

এরেন্ডদের ভিড়ে বৃক্ষও জন্মাতে পারে। এই বোধ ফিরে আসতে থাকে। সমকালে প্রায় অনালোচিত-অনুচ্চারিত এই লেখক যে মহীরুহ হয়ে উঠেছেন। বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ পাঠকদের কাছে নিভু নিভু প্রদীপ শিখার ভিড়ে নিজ মহিমায় দীপ্তি ছড়াবেন। পাঠক হিসেবে এ আমার বোধদয়।

এতোকাল তাকে না পড়ার অপরাধে, আমি নিজের কাছে কুণ্ঠিত। এতোকাল পরে তাকে পড়তে পারার আনন্দে বিভোর। এ যেনো সাগর সেঁচে ধনরত্ন-মণিমাণিক্য আবিষ্কারের অনাবিল আনন্দ। পাঠক, আপনিও এই মহারত্ন আবিষ্কারে নিবিষ্ট হতে পারেন।

তার নাম বলছিনা। পাঠক হিসেবে খুঁজে নেয়ার কিছুটা দায় আপনারও। তবে তাকে খুঁজে পাওয়ার কয়েকটা ইশারা দিতে পারি।

এ লেখক:

১. কর্পোরেট সেলিব্রেটি নন

২. পুরস্কার ও সম্মাননা ভারে জর্জরিত নন

৩. মিডিয়ার পিঠ চাপড়ানিও জোটেনি তার
ভাগ্যে

৪. সাহিত্যের শেরিফদের আনুকূল্য পাননি

৬. সাহিত্যের সিন্ডিকেট/ঠিকাদারদের কাছে
তার গুনতি হয় না ‌

৭. তার বই প্রকাশের জন্য বড়ো
ছাপাখানাগুলোর ঝাঁপ বন্ধ

প্রাজ্ঞ পাঠক, এবারে আপনি তাকে নিজ দায়িত্বে খুঁজে নিন। এতোকাল তাকে অপঠিত রাখার খানিকটা দায় আপনার উপরও বর্তায়।

সাম্প্রতিককালে বাংলা ভাষায় রচিত অক্ষরমালার প্রতি নতুন করে শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করবার জন্য লেখককে অভিবাদন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ