সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, জুন ৬, ২০২০
ড. সুশান্ত দাস, ০৬ জুন ২০২০ : ‘বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয়’। বিখ্যাত বাংলা প্রবাদ। করোনা আক্রান্ত হবার পর, পৃথিবীর সকল দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল হকিকত নতুন করে পরীক্ষার মুখোমুখি। ফিরে দেখতে হবে সবাইকে। শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতকে সামনে রেখে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভালো না মন্দ তা পরিমাপ করার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে। সে সকল পরিমাপ পদ্ধতি মেনে পৃথিবীর সকল দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটা গ্রেডও আছে। পৃথিবীর কোন দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা ভালো তা এই গ্রেডিং সংখ্যা দিয়ে সাধারণতঃ বিচার করা হয়। জার্মানীর প্যাঞ্জার বাহিনী তত্বগতভাবে পৃথিবীর অজেয় সামরিক বাহিনী ছিল। তার ব্লিতসক্রিগ আক্রমনে পৃথিবীর অন্য কোন সামরিক শক্তি টিকে থাকতে পারে, তা প্রায় অকল্পনীয় ছিল। সেই বাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মস্কো, লেনিনগ্রাদ আর স্টালিনগ্রাদে মুখ থুবড়ে পড়লো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সেই অজেয় কথিত জার্মান বাহিনীর পরাজয় হয়েছিল স্তালিনের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত জনগণের অপরিসীম বীরত্ব ও আত্মত্যাগের ফলে। না হলে প্যাঞ্জার বাহিনীর প্রথম ধাক্কায় ফ্রান্সের ম্যজিনো লাইন উড়ে গিয়েছিল, লন্ডন তখন ধুঁকছে, আমেরিকা শুরুই করেনি, কোনদিকে যাব ঠিক করেনি। হিটলার ভুল করে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমন করেই তার খেসারত দিল। ইতিহাস তার সাক্ষী। দেখা যাক, করোনা যুদ্ধের ইতিবৃত্ত কি হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হবার পর আবার এই ইতিহাসও অনেকের কাছে শ্রুতিকটু মনে হয়। তেমনি, করোনা আক্রমনের পর পৃথিবীর বিখ্যাত স্বাস্থ্যব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়লো কেন তা আজ বিচার করা উচিত। বর্তমানের জন্য তো বটেই, ভবিষ্যতের জন্যও। তার উপর, যে স্বাস্থ্যব্যবস্থাগুলো সমাজতান্ত্রিক বলে পরিচিত বা চিহ্নিত, তাদের সফলতার ফলে, সমাজচিন্তার মৌলিক বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা আসলে মানুষের জন্য কতটা প্রয়োজন।
##কয়েকটি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সহজ তুলনাঃ-
এই করোনাকালে যে দেশগুলো সবচাইতে আলোচিত তাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মূল্যায়ন এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য ভান্ডার থেকেই নেওয়া এবং যে কোন কারুর জন্যেই সহজলভ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচাইতে ধনী দেশ। ফ্রান্স পৃথিবীর সবচাইতে ভালো স্বাস্থ্যব্যবস্থার দেশ। চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার দাবীদার। (অনেকে তা ভাবেন না, সেটা তাদের ব্যাপার)। দক্ষিণ কোরিয়া করোনা মোকাবিলায় অন্যতম সফল দেশ। সমাজতান্ত্রিক না হলেও তাদের দেশে এখন বামপন্থী সরকার। নিউজিল্যান্ডের কথা আসতে পারতো। তাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আর দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবস্থার মিল আছে। সেজন্য এ কয়টি দেশের ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্যগুলো সংক্ষেপে দেবার চেষ্টা হলো।
১।‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সেবা অনেক পৃথক পৃথক সংস্থা থেকে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবা মূলতঃ ব্যক্তিমালিকানার ব্যবসায়িক ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। ৫৮% কমিউনিটি হাসপাতাল অলাভজনক ভাবে পরিচালিত, ২১% সরকারি মালিকানায়, ২১% লাভজনক ব্যক্তিমালিকানায় চলে। জনপ্রতি বরাদ্দ ৯,৪০৩ ডলার, জি ডি পি র ১৭.১% শতাংশ বরাদ্দ হয়। কিন্তু নীতিগতভাবে অন্যান্য উন্নত দেশের মত যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা সার্বজনীন নয়। জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নাগরিকের নিজের।‘
২।‘চীনের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সরকারি ও বেসরকারি খাতে রয়েছে। কিন্তু তাদের সংবিধানে সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যের দায় রাষ্ট্রের। সেখানে ৯৫% নাগরিক স্বাস্থ্য বীমার আওতাধীন।স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংস্কারের প্রক্রিয়ায় “স্বাস্থ্যকর চীন ২০২০” এই উদ্যোগে চীন সরকার ২০২০ সালের মধ্যে সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।‘ বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে এই পরিকল্পনা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। করোনার আঘাত নিঃসন্দেহে চীনকে নতুন করে ভাবাবে।
৩।কিউবার স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীন এবং সকল নাগরিকের জন্য নিশ্চিত ও সহজলভ্য। কিউবায় কোন বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নেই। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় কিউবা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্যেও বিস্ময়ের বিষয়। সেখানে ৬ টি স্তরে বিভক্ত পরিকাঠামো তৃণমূল জনগণের দোরগোড়ায়। সেখানে রোগী ডাক্তারের কাছে যায় না, ডাক্তার মানুষের কাছে যায় স্বাস্থ্য নিশ্চয়তার জন্য। জনসংখ্যার অনুপাতে ডাক্তারের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দ্বিগুণ।
৪।ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যপরিকাঠামোও ৫ স্তরে বিভক্ত এবং তা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত। ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণ সার্বজনীন। ভিয়েতনাম তার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কারের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যব্যয় সকল জনগণের ব্যয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা এবং অপেক্ষাকৃত গরীব ও ৬ বছরের শিশুদের জন্য স্থায়ী বরাদ্দের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এবারে করোনা যুদ্ধে ভিয়েতনামের সাফল্য তাদের পরিকল্পনার সাফল্যের চিহ্ন বহন করে।
৫।দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্যসেবা সকল নাগরিকের জন্য সার্বজনীন এবং জাতীয় বীমা পদ্ধতির আওতায় তা ৯৭% নাগরিকের জন্য নিশ্চিত। দেশের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যান মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত মূলতঃ রাষ্ট্রের মৌলিক কল্যানের উদ্যোগের অংশ।
৬।ফ্রান্সের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর হিসেবে পরিগণিত। এটা সার্বজনীন এবং সরকারের স্বাস্থ্যবীমা কর্তৃক অর্থায়ন করা হয়। ফ্রান্স সরকার সাধারণভাবে রোগীদের ৭০% ব্যয়ভার বহন করে এবং দীর্ঘমেয়াদী বা অত্যধিক ব্যয়বহুল হলে সরকার পুরোটাই বহন করে।
খুব সাদা চোখেই এই ব্যবস্থাগুলোর মিল অমিল ধরা পড়ে।
দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যব্যবস্থা মূলতঃ ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং অন্য উন্নত দেশগুলোর মত সার্বজনীন নয়। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সার্বজনীন মূখ্যতঃ সরকারি অর্থে চলে। চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা মৌলিকভাবে একই দৃষ্টিভংগী বহন করে, অর্থাৎ জনগণের স্বাস্থ্যর দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী তার পরিকাঠামোর উতকর্ষতা নির্ভর করে, কিন্তু, কোন অবস্থাতেই তা মৌলিক দৃষ্টিভিংগীর বাইরে নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থা কল্যান রাষ্ট্রের চিন্তার আদলে বিন্যস্ত। সেখানে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা জাতীয় বীমার অর্থদ্বারা পরিচালিত। ৯৭% মানুষ তার অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোঃ-
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিকে তাকানো যাক। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা মধুর নয়। ভাষার মাধুর্যে তাকে ভালো বানানো যাবে না। তবুও এর প্রকৃত চিত্রটা অনুভব করার জন্য সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশের বাজেট বরাদ্দ ২৯,৪৬৪ কোটি টাকা, যা জি ডি পির ১.০২ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ৫.৬৩%। কিউবার স্বাস্থ্যখাতে বাজেট তার জি ডি পির ১১.৭%। (কিউবা তার পুরো বাজেটের ৫১% ব্যয় করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সমাজকল্যান খাতে।)
বাংলাদেশে উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৪৭২ টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে যাতে শয্যার সংখ্যা প্রায় ১৮, ৮৮০ টি। গড়ে প্রতি ৬০০০ জন মানুষের জন্য একটি বেড । জেলা, বিভাগ ও মহানগর (ঢাকা সহ) প্রায় ১২৬ টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য স্থাপনায় মোট বেড সংখ্যা প্রায় ২৭,০৫৩ টি। বেসরকারি খাতে আছে ২,৯৮৩ টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক যেখানে বেডের সংখ্যা প্রায় ৪৫, ৪৮৫ টি।
এখন বাংলাদেশে রেজিষ্টার্ড ডাক্তারের সংখ্যা প্রায় ৬,৪৪৪ জন, ৬০৪ জন ডেন্টিষ্ট, ২,৫১৬ জন নার্স, প্রায় ২৭,০০০ ধাত্রী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য-প্রযুক্তিবিদের ন্যূনতম অনুপাত হওয়া উচিত ১ঃ ৩ঃ৫, আমাদের আছে ১ঃ০.৪ঃ০.২৪ । চিত্রটি পরিষ্কার।
( বর্তমানে উপাত্ত অনুসারে ডাক্তার, নার্স, হাসপাতাল ইত্যাদির সংখ্যা সামান্য বাড়তে পারে। )
##স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভালমন্দের মাপকাঠি কি ভাবে পরিমাপ করা হয়?
একটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা কার্যকর এবং দক্ষ তা মূলতঃ ৫টি নির্দেশক ( indicator) দিয়ে সাধারণতঃ বিজ্ঞানী মহলে পরিমাপ করা হয়। নির্দেশিকগুলো হলোঃ
(১) স্বাস্থ্যগত অবস্থা (২৫%) ( Disability-Adjusted Life Expectancy, or DALE.),
(২) স্বাস্থ্য বৈষম্য (health inequality) (২৫%) , (৩) সংবেদনশীলতা মাত্রা (responsiveness-level) (১২.৫%) অর্থাৎ কত দ্রুত জনগণের স্বাস্থ্যগত দুর্যোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
(৪) সংবেদনশীলতা প্রতিক্রিয়া বিতরণ (responsiveness-distribution) (১২.৫%) অর্থাৎ সব স্তরের মানুষের জন্য এই প্রতিক্রিয়া কতটা কার্যকর ,
(৫) ন্যায্য অর্থায়ন fair-financing) (২৫%) অর্থাৎ যথাযথ পরিমানে অর্থায়ন হচ্ছে কিনা। পরিমানগত পরিমাপের জন্য আপাতঃদৃষ্টিতে এই গণনা যুক্তিযুক্ত মনে হয়। বাস্তবে এর পরীক্ষা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গাণিতিক গণনার জন্য এই ৫টি নির্দেশকের বিভিন্ন শতাংশ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়, যা পাশে উল্লেখিত রয়েছে। এই গণনার ভিত্তিতে ফ্রান্স ১ নম্বর দেশ, ইতালী ২, দক্ষিণ কোরিয়া ৪, সিংগাপুর ৬, জাপান ১০, যুক্তরাজ্য ১৮, যুক্তরাষ্ট্র ৩৭, কিউবা ৩৯, বাংলাদেশ ৮৮, চিন ১৪৪, ভিয়েতনাম ১৬০ । এই গণ্নার নিরিখে কিউবা আর দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়া বহু দেশের স্বাস্থ্যসেবার দক্ষতার মাপকাঠি এবার করোনা আক্রমনে ভয়ংকর ভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন। তাই আজ এটা ভাবতে হবে জনস্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই এমন কোন নীতিগত বিষয় রয়েছে, যা এই পরিমাপক কাঠামোর বাইরে কিছু নির্দেশ করে। সেটাই বিবেচনার বিষয়।
##সমাজতান্ত্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পুঁজিবাদী স্বাস্থ্যব্যবস্থার মৌলিক দৃষ্টিভংগীগত পার্থক্যঃ
সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে যখনই তুলনা বা বিতর্ক তৈরি হয় তখন স্বাস্থ্যসেবার প্রশ্নটি সামনে চলে আসে। সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভিংগীতে স্বাস্থ্যসেবাকে কিভাবে দেখা হবে? এখানে বিস্তৃত ব্যাখ্যার সুযোগ নাই, তাই ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ রেখেই সংক্ষেপে মূল বিষয়গুলি চিন্তা করা যায়। যে মৌলিক ভিত্তিটা সমাজতান্ত্রিক চিন্তায় স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূলভিত্তি হতে পারে তাহলোঃ
(১) সকল স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ সকল নাগরিকের জন্য বিনা মূল্যে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করতে হবে। যে কোন নাগরিকের কোন দূর্ঘটনা, অসুস্থতা ও মাতৃত্বকালীন সময়ে রাষ্ট্রকে তার দায় বহণ করতে হবে।
(২) স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় প্রতিরোধ ( prevention) ব্যবস্থাই প্রাধান্য পাবে। অসুস্থ হলে শুধু স্বাস্থ্যসেবাই নয়, যাতে মানুষ অসুস্থ না হতে পারে সেটাই নীতিগতভাবে প্রাধান্য পাবে।
(৩) স্বাস্থ্যসেবা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসেবার সংগে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব নয়, এটা মানূষের শিক্ষা, বাসস্থান, কাজের নিশ্চয়তা যা মানুষকে সুন্দর স্বাস্থ্য দিতে পারে সে ব্যবস্থা তৈরি করাও এর সংগে সংশ্লিষ্ট।
(৪) চিকিৎসক ও রোগীর অন্তঃসম্পর্ক কখনই ব্যবসায় বা মুনাফা দ্বারা নির্ধারিত হবে না।
এই মৌলিক ৪টি বিষয় বিবেচিনা করলেই পুঁজিবাদী স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও সমাজতান্ত্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে যায়। ৫টি সূচক বা নির্ধারক যদি এই মৌলিক বিষয়গুলিকে অন্তর্ভূক্ত না করে তাহলে সূচকের মান বাড়তে পারে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়ে না। করোনা আক্রমন এটাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। যে পূঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো যতটা জনকল্যাণমূলক স্বাস্থ্যকাঠামোর কাছাকাছি থাকতে পেরেছে তারা ততটাই কার্যকরভাবে করোনা ভাইরাসের আক্রমন থেকে জনগণকে রক্ষা করতে পেরেছে। তবে মনে রাখতে হবে, কোন দেশের অর্থনীতির সামর্থ্যটাও বিবেচ্য বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত দেশে মৌলিকভাবে সমাজতান্ত্রিক নীতিমালায় পরিচালিত হলে সে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা জনগণের জন্য আরও কল্যানকর হয়ে উঠতে পারে। সে দেশের মানুষ তাদের মত করে তা ভাবছে। ঘরের কাছে কিউবা তার প্রমান।
##ভবিষ্যতটা কি হতে হবে?
করোনা ভাইরাসের আক্রমন বিশ্বমানবতার সামনে আজ এই প্রশ্ন তুলে ধরেছেঃ-
(ক)আমাদের কোনদিকে এগুতে হবে?
(খ)যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন না হাসপাতাল?
(গ) সবার জন্য স্বাস্থ্য না মুনাফার জন্য স্বাস্থ্য? (ঘ)মুনাফার জন্য প্রকৃতিকে ধ্বংস না প্রকৃতিকে
রক্ষার দায় গ্রহণ?
(ঙ)সকল মানুষের কল্যানের জন্য সম্পদের সুষ্ঠ বন্টন নাকি মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে সম্পদের কুক্ষীভবন?
(চ) মুনাফার জন্য উৎপাদন না কি মানুষের প্রয়োজনে উৎপাদন?
(ছ)সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নাকি একদিকে খাদ্যের প্রাচুর্য অন্যদিকে ক্ষুধা?
(জ)যুদ্ধ না শান্তি?
এর নিষ্পত্তি এই দশকের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান প্রজন্মকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
#
— ড. সুশান্ত কুমার দাস
অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) শাবিপ্রবি
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D