করোনা ঝুঁকিতে থাকা শ্রমজীবীদের সার্বিক সুরক্ষায় ৯ দফা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দাবি স্কপের

প্রকাশিত: ২:৫৩ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২০

করোনা ঝুঁকিতে থাকা শ্রমজীবীদের সার্বিক সুরক্ষায় ৯ দফা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দাবি স্কপের

ঢাকা, ২০ জুন ২০২০: করোনাকালে ছাঁটাই, লে-অফ বা কারখানা বন্ধ করে শ্রমিককে কর্মহীন করার যেকোন চেষ্টা সহ্য করবে না শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপ।

করোনা ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা, জরুরী ঘন শ্রম শিল্পের শ্রমিকদের প্রতি এক লাখ শ্রমিকের জন্য করোনা পরীক্ষা যন্ত্র ও আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন, করোনা মহামারীকালে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, শ্রমিকের কাজের ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা, কাজ হারানো অপ্রাতিষ্টানিক খাতের শ্রমিকদের খাদ্য সরবরাহ, নগদ প্রণোদনা প্রদান, কর্মহীন হয়ে বিদেশ প্রত্যাগত শ্রমিকদের পুনর্বাসনে প্রশিক্ষণ, সহজলভ্য ব্যাংক ঋণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি, পাটকল, চিনিকলসহ রাষ্ট্রায়াত্ব কলকারখানার শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ এবং রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান সমূহ ছেড়ে দেওয়ার আমলাতান্ত্রিক দুরভিসন্ধি পরিহার করাসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এর উদ্যোগে আজ ২০ জুন ২০২০, শনিবার, সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতীকী মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপ এর বর্তমান যুগ্ম সমন্বয়কারী ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু এর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল আহসান, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামীম আরা, ট্রেড ইউনিয়ন সঙ্ঘের সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান। কর্মসূচী সঞ্চালনা করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল। মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা দুর্যোগ প্রমাণ করেছে সম্পদ সৃষ্টি তথা অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি শ্রমজীবী মানুষের শ্রম। তাই শ্রমজীবী মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের কর্মক্ষম রাখা এবং প্রতিদিনের উৎপাদিত শ্রমকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্র তৈরী করা না হলে রাষ্ট্রের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর কোন সুযোগ নেই। আর দেশের বিভিন্ন শিল্প মালিকরা জনগণের মেধা, শ্রম আর রাষ্ট্রিয় সুবিধা ব্যবহার করে সম্পদশালী হয়েছেন অথচ দুর্যোগের সময় সেই শ্রমজীবী মানুষকে রক্ষায় দায়িত্বশীল আচরণ করছেন না। শ্রমিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরিবর্তে শ্রমিককে ছাঁটাই করে শ্রমজীবী পরিবারগুলিকে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে অনাহারে, বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুা ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন। যা সামাজিক অস্তিরতা ও ভারসাম্যহীনতা তৈরী করবে। তাই করোনা যুদ্ধে রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে শ্রমজীবী মানুষদের সুরক্ষাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক ছাঁটায়ের ফলে যে শ্রম অসন্তোষ তৈরী হচ্ছে তার ফলে উদ্ভুত যেকোন অস্তিরতার দায় মালিকদের বহন করতে হবে বলে সাবধান বাণী উচ্চারন করেন। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, দুর্যোগের মধ্যে শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাইয়ের মত অমানবিক পদক্ষেপ মেনে নেবে না স্কপ।

মানববন্ধন থেকে নিম্নলিখিত ঘোষণা পত্র পাঠ করা হয়-

করোনা পরীক্ষা, চিকিৎসা সহ শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা, শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা লে অফ বন্ধ, কর্মহীন ও প্রবাস ফেরত শ্রমিকদের পুনর্বাসন সহ ৯ দফা দাবিতে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ স্কপ এর মানব বন্ধন এর ঘোষণা-

বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন ও জীবিকার ঝুঁকি মোকাবিলায় শ্রমিক কর্মচারীদের পক্ষ থেকে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মহামারীতে মহাদূর্যোগে পড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের কর্মজীবি মানুষ। স্বাস্থ্য ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করে চলেছেন স্বাস্থ্যকর্মী,মিডিয়া,পরিবহন, রাষ্ট্র, পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। নতুন রূপের এই ভাইরাস মোকাবিলা করতে যেয়ে আমরা আমাদের সফলতা ও দুর্বলতা এবং সচেতনতা, সক্ষমতা সবকিছু সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল হয়েছি। সিদ্ধান্ত থাকার পরও নির্দেশনা না মানা এবং সমন্বয়হীনতার কারনে পরিস্থিতি জটিল এবং শ্রমজীবীদের সংকট তীব্র হয়েছে। মালিক শ্রেণী এতটাই ক্ষমতাশালী এবং শক্তিধর যে তাঁরা কোন শ্রম আইনের তোয়াক্কাই করছে না। তাদের অধিকাংশের মধ্যেই ন্যুনতম মানবিকতার লেশ তো নাই বরং তাঁরা একদিকে রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে জনগণের টাকা হাতিয়ে নিতে যেমন তৎপর অন্যদিকে শ্রমিকদের কোন দায় নিতে তাঁরা রাজী নয়। বরং এই দুর্যোগের সময় তারা মজুরি কম দেওয়া,স্বেচ্ছা অবসরে বাধ্যকরা, ছাঁটাই, লে অফ সহ নানা ভাবে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা ও নানা ধরণের হয়রানি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলেছে। তারা কোন আইন কানুন নির্দেশনার তোয়াক্কাই তারা করছেন না। ফলে জীবন ও জীবিকার তাগিদে শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ আজ দিশেহারা । স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন সুযোগই তাদের কাছে নাই। এমনি এক কঠিন বাস্তবতায় আমরা মনেকরি রাষ্ট্রের উচিত শিল্প ও কৃষি তথা অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর করা।
১। করোনা ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা মালিক এবং সরকারকে বহন করতে হবে। জরুরী ঘন শ্রম শিল্পের শ্রমিকদের প্রতি এক লাখ শ্রমিকের জন্য করোনা পরীক্ষা যন্ত্র স্থাপন এবং আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করতে হবে।
২. করোনা মহামারী কালে কোন শ্রমিককে কর্মচ্যুত ও ছাঁটাই করা চলবে না। শ্রমিকের কাজের নিশ্চয়তা দিতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার খর্ব করা চলবে না।
৩। করোনার কারনে কাজ হারানো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা নগদ অর্থ দেয়ার প্রনোদনা দিতে হবে।
৪। সকল শ্রমিককে ভর্তুকি মুল্যে রেশনিং ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. প্রবাসী শ্রমিক যারা দেশে ফিরেছেন তাদের পুনর্বাসনে কর্মসুযোগ তৈরী, প্রশিক্ষণের ও স্বল্প সুদে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা যাতে তারা নিজস্ব উদ্যোগে কাজের ব্যবস্থা করতে পারে।
৬। রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান (পাটকল,চিনিকল) সহ সকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা। রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেয়ার আমলাতান্ত্রিক দুরভিসন্ধি পরিহার করতে হবে।
৭। আগামী ছয় মাসের জন্য অপ্রাষ্ঠিানিক খাতের শ্রমিকদের পরিবার প্রতি বিনা মুল্যে প্রতি মাসে ১০ কেজি করে চাল সহ খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা।
৮। অপ্রাষ্ঠিানিক খাতের শ্রমিকদের মাসিক নগদ সহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে ৫০০০/- টাকা দিতে হবে।
৯। ডাক্তার, নার্স সহ স্বাস্থ্য কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের এবং নৌ ও সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের ঝুঁকি ভাতা এবং কভিড আক্রান্ত অপ্রতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ স্কপ এর পক্ষ থেকে এই ৯ দফা মেনে নেয়ার জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর দাবী জানাই। যে সমস্ত মালিক সরকারের সহযোগিতা নিয়েও শ্রমিক ছাঁটাই, লে অফ করছে তাদের শাস্তি দেয়ার জন্যও আমরা দাবী জানাই। করোনা দুর্যোগকে কাজে লাগিয়ে যে কোন ধরণের শ্রমিক নিপীড়ন করা হলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আমরা আহবান জানাই। শ্রমিক ছাঁটাই করে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির যে কোন পাঁয়তারা বন্ধ করার জন্য আমরা এই সমাবেশ থেকে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।