জনগণকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনার হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষা করতে হবে: ওয়ার্কার্স পার্টি

প্রকাশিত: ৩:২৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২০

জনগণকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনার হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষা করতে হবে: ওয়ার্কার্স পার্টি

ঢাকা, ২৫ জুলাই ২০২০: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা দূর করে সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতি বাস্তবায়নে অবিলম্বে স্বাস্থ্য খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের হাত থেকে সুরক্ষা পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি তথা নিয়মিত হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পরিধানের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঐ স্বাস্থ্যবিধি কঠোর অনুসরণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ ২৫ জুলাই সকাল ১০টায় ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামগ্রিক আচরণে জনগণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তারা এই দুর্যোগ মুহূর্তে কোনভাবেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে পারছেনা। জনগণকে তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মধ্য দিয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নিজেদের ও পরিপ্বার্শজনের সুরক্ষার দায়িত্ব নিজেদেরই তুলে নিতে হবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার এখন প্রায় একই জায়গায় ওঠানামা করলেও দেশ ঐ সংক্রমণের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে তা বলা যাবে না। বরং ঈদকে কেন্দ্র করে এর বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। অন্যদিকে করোনা ভ্যাকসিন আবিস্কারে সহযোগিতার ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ যেভাবে গয়ংগচ্ছ চালে চলছে তাতে পৃথিবীতে ঐ ভ্যাকসিন আবিস্কৃত হলেও বাংলাদেশের মানুষের তা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ঐ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে যোগাযোগ করা, বিশেষ করে চীন কর্তৃক উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ে ট্রায়ালে অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি এর প্রমাণ। অথচ ব্রাজিল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের দেশে এই কার্যক্রম শুরু করেছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর করোনা সংক্রমণরোধে ভাল নম্বর পাওয়ার আত্মতৃপ্তিমূলক বক্তব্য বালখিল্যতা আখ্যা দিয়ে বলা হয়, উনি সম্ভবতঃ নিজেই নিজেকে নম্বর দিচ্ছেন। বাংলাদেশে করোনা মৃত্যুহারের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মৃত্যু হারের তুলনাও কতখানি নির্বোধের আনন্দ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মৃত্যুহার তার প্রমাণ। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সামগ্রিক দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদত্যাগকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে বলা হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যদিও সবের নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে সরে যেতেন তা’হলেও দেশবাসী মনে করত যে এদের সবার বোধোদয় হয়েছে। কিন্তু এক কান কাটা রাস্তার পাশ দিয়ে গেলেও দু’কানকাটা রাস্তার মধ্য দিয়ে কাউকে তোয়াক্কা না করে এগিয়ে যায়। এক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবে বন্যা পরিস্থিতিতে জনজীবনে দুর্ভোগে দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয় এখানেও বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে চুরি, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এই বন্যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটপূর্ণ করেছে।
প্রস্তাবে বন্যাত্তর পুনর্বাসনে সর্বোত উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান হয়।
ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভা সংবিধান ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত নীতির বিপরীতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলসমূহ বন্ধ করে দেয়া, পাট পণ্যবাজার অন্যের হাতে তুলে দেয়া, পাটকলের জমি ও সম্পদ লুটপাটকে আনুষ্ঠানিকতার শামিল বলে উল্লেখ করা হয় এবং অবিলম্বে ঐ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে রাষ্ট্রায়ত্ব খাতে পাটকল আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান হয়।
ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবে স্বাস্থ্যখাত ও পাটখাত নিয়ে ১৪ দলের আলোচনা ও সরকারকে সে বিষয়ে অবহিত করতে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র ও সংশ্লিষ্ট দলসমূহের প্রতি আহবান জানান।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভা শুরুতে অকাল প্রয়াত পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মোস্তাফিজুর রহমান কাবুল, ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাংস্কৃতিক নেতা কামাল লোহানী, বিশিষ্ট অধ্যাপক প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান হয়।
পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির ভার্চুয়াল এই সভায় পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা রাজনৈতিক রিপোর্ট করেন।
শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড কামরূল আহসান।
সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড নুর আহমদ বকুল, পার্টির তহবিল সংক্রান্ত রিপোর্ট করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড তপন দত্ত চৌধুরী।
ভার্চুয়াল সভায় সংযুক্তি ছিলেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, কমরেড ড.সুশান্ত দাস, কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক, কমরেড অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হক্কানী। ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড হাজী বশিরুল আলম, কমরেড জ্যোতি শংকর ঝন্টু, কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড নজরুল ইসলাম, কমরেড লিয়াকত আলী লিকু, কমরেড এ্যাড. নজরুল ইসলাম, কমরেড এ্যাড. আবু হানিফ, কমরেড সেকান্দর আলী, কমরেড জাকির হোসেন রাজু, কমরেড দেবাশীস প্রমাণিক দেবু, কমরেড এ্যাড. জোবায়দা পারভীন, কাজী মাসুদ, কমরেড হাফিজুর রহমান, কমরেড কিশোর রায়, কমরেড শাহানা ফেরদৌসী লাকী, কমরেড মুর্শিদা আক্তার নাহার, কমরেড মোঃ সবদুল হোসেন খান, কমরেড আবু বকর, কমরেড মহিবুল মোড়ল, কমরেড এ্যাড. কিসলু, কমরেড পাওয়ার চৌধুরী, কমরেড কাজী মাহমুদুল হক সেনা প্রমুখ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ