ন্যাপ নেতা শ্রীমঙ্গলের স্বপনদা গুরুতর অসুস্থ

প্রকাশিত: ১২:৪৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২০

ন্যাপ নেতা শ্রীমঙ্গলের স্বপনদা গুরুতর অসুস্থ

|| প্রকাশ রায় || প্যারিস (ফ্রান্স), ২৫ অাগস্ট ২০২০ : আমার দাদা, আমার মাসতুতো ভাই স্বপনদা অসুস্থ, শ্রীমঙ্গলবাসীদের অনেকেরই পরিচিত পূর্বাশা আবাসিক এলাকার « স্বপন মাষ্টার »।

গতকাল থেকে দেশ থেকে খবর পাচ্ছিলাম দাদাকে সিলেটের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, কিছুক্ষণ আগে উনার সাথে থাকা ভাতিজীর সাথে কথা বলে জানলাম দাদার শরীর খুবই খুবই খারাপ, ব্রেনস্ট্রোক সহ আরও সমস্যা।
প্রবাসে থেকে দাদার জন্য প্রার্থনা করা ছাড়া কিছুই করার নাই।
প্রিয় স্বপন দার এই সংকটজনক অবস্থায় উনাকে স্মরণ করা মানেই স্মৃতি কাতরতায় সিক্ত হওয়া ।
যারা স্বপনদা চিনেন না বা জানেন না তাদের জন্য সংক্ষিপ্তাকারে জানাচ্ছি, আমার এই দাদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে গিয়েছেন কয়েক বছর পূর্বে, দাদার মেয়ে
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে চিকিৎসক হিসেবে ইন্টারনি করছে আর ছেলে এইচএসসি দিবে।, আর বৌদি একজন স্বস্ত্যয়নী, গৃহে সেবা দিয়েই সুখী হচ্ছেন।
স্বপনদা কে নিয়ে এই স্মৃতি কাতরতার মূল বিষয় হচ্ছে, দাদার আদর্শ ও নৈতিকতার বিষয়গুলো মনে দাগ ফেলে দেওয়া।
আমার মেষ অর্থাৎ দাদার বাবা ছিলেন কাস্টমসের সুপারেনডেনট। শ্রীমঙ্গলের মত জায়গায় এই পদে থেকে অবসর জীবনে অর্থ কষ্ট আর অন্ন কষ্টে ভোগা, এটা ছিল দাদার অহংকার !
দাদা কুঁড়ে ঘর পার্টি করতেন। জানিনা নতুন প্রজন্মের সবাই এই দলটিকে চিনতে পারছেন কিনা !
কমরেড মুজাফফর আহমেদের ন্যাপ, ধর্ম কর্ম সমাজতন্ত্রের ন্যাপ, কুঁড়ে ঘর নির্বাচনী প্রতীক।
আমাদের শ্রীমঙ্গলে উনার নেতা ছিলেন এবং আছেন সাইয়িদ মুজিবুর রাহমান স্যার, কমরেড রাসেন্দ্র দত্ত, মরহুম শাহজান ভাই।
পেশায় রাজমিস্ত্রি শাহজান ভাই জীবিত থাকলে আজকের সমাজে কোন চেয়ার পেতেন কিনা এটা বর্তমান সমাজই বলতে পারে।
স্বপনদার ঘরে একটা বাঁধানো ছবি ছিল সিন্ধুরখানের মাটির রাস্তায় দাদা ও শাহজান ভাই দাঁড়িয়ে আছেন এবং ব্যাক গ্রাউনডে কজন কৃষক ভার দিয়ে ধান নিয়ে যাচ্ছেন। শাহজান ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে এবং ছেলের রাজমিস্ত্রির কাজের খোঁজখবর নেওয়ার দায়িত্ব ছিল দাদার।
সর্বোপরি, মুজিবুর রহমান স্যার স্বপনদার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মুরব্বিও বটে, দাদার সকল ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যাতেই সার ছিলেন পুরোহিত।
দাদার অকপটে সত্য বলা, অন্যায়ের সাথে আপোষ না করা এবং গড্ডলিকা প্রবাহে গাঁ না ভাসানোর কারণে অনেকেই দাদাকে খুব একটা গ্রহণ করতে পারেননি, যদিও এই বৈশিষ্ট্যটা আমারও খুব পছন্দ।
স্বপনদার রসবোধ, সাহিত্য আলোচনা, ইংরেজি সাহিত্যের রসউদ্ঘাটন এবং বিরল রম্যতা ও সরলতা সম্পর্কে কার জানা আছে জানিনা ! আমার মনে পড়ে বিজুদা (শ্রীমঙ্গলের কৃতি সন্তান পূর্বাশার স্বর্গীয় বলাই ভট্টাচার্যের সুযোগ্য সন্তান), প্রয়াত বুলবুল শী দাদা, তপন ভট্টাচার্যে, ইমন দত্ত (স্বর্গীয় অধ্যক্ষ অরুণ দত্তের সুযোগ্য সন্তান বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) এবং জননেতা, জীবদ্দশায় বহুবারের সংসদ সদস্য, সর্বোপরি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মরহুম ইলিয়াছ সাহেবের পরিবারের লোকজন, আমার জহরদার কথা যাদের সাথে দাদার একান্ত আড্ডা হয়েছে।
একবার, আমাদের প্রিয় ইউসুফ ভাই, অর্থাৎ আমাদের প্রিয় রহিম ভাইয়ের ভাই, আওয়ামীলীগের ইউসুফ ভাইয়ের পূর্বের পোষ্ট অফিস রোডের দোকানে ইউসুফ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে পল্লী বিদ্যুতের একজন সদস্যকে দোকানের লোকজন শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন, স্বপনদা ঘটনা স্থলে উপস্থিত। একসময় ইউসুফ ভাইয়ের নামে বাঘে মহিষে এক ঘাটে পানি খেয়েছে অবস্থা ছিল ! পল্লী বিদ্যুতের ওই কর্মী মামলা করার জন্য কাউকে সাক্ষী হিসাবে না পেয়ে স্বপন দার নামটা দিয়ে মামলা করে দিল, এবং স্বপনদা নির্ভয়ে সাক্ষীও দিলেন। ইউসুফ ভাইও স্বপনদাকে ছোট ভাই হিসাবে জানতেন এবং স্বপনদার নৈতিকতা সম্মান করতেন।
আমাদের শ্রীমঙ্গলের মুরব্বী আহাদ চাচা, স্বপনদার প্রতিবেশী। যার নাম শুনলে এখনও বাঘে মহিষে এক ঘাটে পানি খাবে হয়ত।
আহাদ চাচা সারা পূর্বাশার সবার ভোটের আশা করলেও স্বপনদার ভোটের আশা করতেন না। এবং স্বপনদাও আহাদ চাচাকে ভোট দেবেন বলে উনাকে নিশ্চয়তা দিতেন না। আহাদ চাচাও এই স্বপন মাস্টারকে ভোট না দিলেও মূল্যায়ন করতে একটুও কার্পণ্য করতেন না।
আজকের দিনে যখন মূল্যবোধ, সততা ও নৈতিকতা নিয়ে আমরা খুব আলোচনা করি, তখন আমার স্বপনদাকে শুধু প্রণাম দিতেই ইচ্ছে করে।
দাদা সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুন এই কামনা ও প্রার্থনা । (ছবিতে দাদা ও বৌদি, মরহুম ইলিয়াস সাহেবের কন্যাদের আপ্যায়নের এক মুহূর্তে)