ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদনের তুলনায় নেহাতই কম: সৈয়দ অামিরুজ্জামান 

প্রকাশিত: ২:১৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২০

ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদনের তুলনায় নেহাতই কম: সৈয়দ অামিরুজ্জামান 
সৈয়দ অারমান জামী, নিজস্ব প্রতিবেদক || মৌলভীবাজার, ০১ অক্টোবর ২০২০ : “সরকারের সর্বশেষ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালায় যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে (ক) উৎপাদক কৃষকদের উৎসাহ মূল্য প্রদান, (খ) খাদ্যশস্যের বাজারদর যৌক্তিক পর্যায়ে স্থিতিশীল রাখা, (গ) খাদ্য নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলা ও (ঘ) সরকারী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থায় সরবরাহ অব্যাহত রাখা। কিন্তু খাদ্য পরিস্থিতি এসব লক্ষ্য উদ্দেশ্যের বিপরীত দিকই নির্দেশ করছে। কৃষকদের উৎসাহ মূল্য দেয়ার যে কথা বলা হয় তা নিছক কৌতুক মাত্র।আমন মৌসুমে প্রতি কেজি ধানে উৎপাদন খরচের উপর মাত্র এক টাকা বাড়তি মূল্যে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বাজার দরের থেকে অনেক বেশী দরে ধান ক্রয় করা হয়। ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রাও অনেকগুণ বেশী। কিন্তু বাংলাদেশে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা যেমন উৎপাদনের তুলনায় নেহাতই কম, তেমনি দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে এমনই কৃপণতা করা হয় যে মনে হয় কৃষকদের করুণা করা হচ্ছে। আর ঐ নির্ধারিত দামও কৃষকরা পান না। ক্রয়কেন্দ্রে তাদের হয়রানির সম্মূখীন হতে হয়। আর সংগ্রহ শুরু হয় যখন প্রান্তিক ও মধ্যচাষীদের হাত থেকে ধান চলে যায়। সুতরাং উৎসাহ মূল্য প্রদান কথার কথাই থেকে যাচ্ছে।” মৌলভীবাজারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জনাব মোখলেছুর রহমানের মাধ্যমে মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের প্রাক্কালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ অামিরুজ্জামান এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা শাখার পক্ষ থেকে অাজ ১ অক্টোম্বর বৃহস্পতিবার ২০২০ সকাল ১১টায় চালের উর্ধমূল্যরোধ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ৮ দফা দাবিতে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি প্রদানের সময় অারও উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড অাফরোজ অালী ও পার্টির জেলা শাখার সদস্য কমরেড দেওয়ান মাসুকুর রহমান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ”দেশে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের পরও চালের দাম প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সরকার চলতি মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তার চেয়ে ৯ লাখ টন কম সংগ্রহ হয়েছে। চালকল মালিকরা চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে চাল দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর ঘাটতি মেটাতে সরকারের কাছ থেকে চাল আমদানীর অনুমোদন নিয়ে রেখেছে। ফলে ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে চাল রপ্তানীকারক দেশসমূহ চালের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে এর সাথে যুক্ত হয়েছে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এর ফলশ্রুতিতে সারা বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষের আশংকা প্রকাশ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে এখনও সেধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও ভোক্তা জনগণ বিশেষ করে গরীব ও প্রান্তিক মানুষ, নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তরা দুঃসহ অবস্থায় পড়েছে সন্দেহ নাই। দেশে সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা সংকটের মুখে।”
স্মারকলিপিতে অারও বলা হয়, “এবার আমন ও বোরো মৌসুমে ভাল উৎপাদনের খাদ্যশস্য দেশের চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রযেছে। অথচ প্রতিদিনই চালের দাম বাড়ছে।ধানের দাম বেশী অজুহাতে চালকল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে কেবল নয়, সরকারের   সাথে চুক্তিমত চাল সরবরাহ করতেও সরাসরি অস্বীকার করছে। চালের দাম বাড়বে এই ধারণায় বিপুল পরিমাণ ধান-চাল মজুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খাদ্য মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার মজুতবিরোধী আইন প্রয়োগ করতে পারে, কিন্তু সেরকম কিছু ভাবা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। চালকল মালিকদের চুক্তিমত চাল সরবরাহ করতে বাধ্য করার জন্য জরিমানাসহ দণ্ডারোপেরও বিধান আছে। আসলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের কাছে প্রতিবারের মত এবারও সরকার অসহায় আত্মসমর্পণ করছে। খাদ্য নিরাপত্তার মজুত   গড়ে তুলতে খাদ্য অধিদপ্তর যে কি নিদারুণভাবে   ব্যর্থ হয়েছে তার প্রমাণ ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা বাড়িয়েও লক্ষ্য মাত্রার ৯ লাখ টন চাল সংগ্রহ কম হওয়া। এই মজুদ যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না তা কাউকে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। সর্বোপরি সরকারী খাদ্য   বিতরণ ব্যবস্থায় সরবরাহ অব্যাহত রাখা এ কারণে কঠিন সাধ্য হয়ে পড়বে। সরকারকে অমূল্য বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে খাদ্য আমদানী করতে হবে যার জন্য খাদ্য অধিদপ্তর মুখিয়ে আছে বলেই প্রতীয়মান হয়। এই অবস্থায়   চালের মূল্য ভোক্তা জনগণের ক্রয় সীমার মধ্যে   রাখতে ও অতীতের মত খাদ্য থাকার পরও কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ থাকে যাতে কেউ সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য ব্যবস্থ্যা নিতে এখনই নিম্নোক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে-
১। সরকারি ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রায় যে ঘাটতি হয়েছে তা পুরণে-ক. চালকল মালিকদের চুক্তিমত চাল দিতে বাধ্য করা, অন্যথায় জামানত বাজেয়াপ্ত জরিমানাসহ দন্ডাদেশ প্রদান।
২। মজুত বিরোধী আইন প্রয়োগে মজুত করা খাদ্য উদ্ধার ও মজুতকারিকে দন্ড প্রদান,
৩। চালের বাজারে সক্রিয় সিন্ডিকেট কঠোরহস্তে দমন,
৪। কৃষকদের ধানসহ কৃষি পণ্যের উৎসাহ মূল্য প্রদানের জন্য উৎপাদনের খরচ বিবেচনায় উপযুক্ত মূল্য ও ধান চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পূর্বে নির্ধারণ করা,
৫। গুদাম সংকট, ক্রয় কেন্দ্রের অপ্রতুলতা ও হয়রানি বন্ধের জন্য প্রতি উপজেলায় প্যাডি সাইলো নির্মাণ ও সমবায় ভিত্তিতে তার পরিচালনা,
৬।  উৎপাদক কৃষকদের সমবায় করে তাদের সাশ্রয়ী সুদে ঋণ দেয়া যাতে ধান উঠার সময় নিজেদের উদ্বৃত্ত নিজেরাই কিনে প্যাডি সাইলোসহ সুবিধাজনক স্থানে গুদামজাত করা ও অবস্থা বুঝে তা বিক্রি করে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পারে,
৭। বছরের ৫ মাস ১০ টাকা কেজি মূল্যে ৩০ কেজি চাল প্রদানের কর্মসূচী বছরব্যাপী বিস্তৃত করা,
৮। সারা দেশে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি করোনাকালীন এই দুঃসময়ে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।”