ন্যূনতম মজুরী, সুরক্ষা ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার দাবি

প্রকাশিত: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২০

ন্যূনতম মজুরী, সুরক্ষা ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক || ঢাকা, ০৩ অক্টোবর ২০২০ : বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ‘‘একাধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিক ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম অব্যাহত: শোষনমুক্ত, সামাজিক ন্যায়বিচার সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়’’ শীর্ষক শ্লোগানে ৩রা অক্টোবর বিশ্বব্যপি ‘এ্যাকশন ডে’ পালনের অংশ হিসাবে বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন বাংলাদেশ কমিটির উদ্যোগে আজ ৩ অক্টোবর ২০২০, বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকার পল্টনস্ত ফেনী সমিতি মিলনায়তনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি শ্রমিক নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন বাংলাদেশ কমিটির সমন্বয়ক ও জাতিয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল আহসান।
বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব নোমানুজ্জামান আল আজাদ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সহসভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরি সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ প্রমুখ।

আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় শ্রমিক শ্রেনী যে নিপীড়নের শিকার তা আরো তীব্ররুপ লাভ করেছে করোনা মহামারিতে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে, বেকারত্ব বেড়েছে ভয়াবহভাবে, শ্রমজীবীদের অর্থনৈতিক দুর্দশা বেড়েছে বহুগুণ । কিন্তু পুজিবাদী শোষণের ফলে কর্পোরেট পুঁজির মুনাফাও বেড়েছে বিপুলভাবে। ফলে বিশ্বব্যাপী করোনা বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে । মজুরী, চাকুরীর নিশ্চয়তা সহ শ্রম আইনে শ্রমিকদের যে সুরক্ষা দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল তা আবার কেড়ে নেয়ার পায়তারা চলছে বিশ্বব্যাপী। গোটা পৃথীবী এখন পুঁজিবাদী আগ্রাসনের শিকার। বহুজাতিক কর্পোরেশনের দৌরাত্ব সীমা ছাড়িয়েছে। মুনাফার একাধিপত্য বিস্তারে তারা মরিয়া। মুনাফা লুন্ঠনের নেশায় তারা বিশ্ব প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসের উমত্ত নেশায় মগ্ন। এই বাস্তবতা প্রমাণ করেছে একমাত্র শ্রেণী সচেতন ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনই শ্রমিকশ্রেনীকে দুর্দশা থেকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশেও করোনার অজুহাতে মালিকরা রাষ্ট্রের কাছে যত সুবিধা নিয়েছে তার কোন সুফল শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে নাই। বরং মালিকরা এই করোনাকালে প্রণোদনা নিয়েও গার্মেন্টস এবং চামড়া শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই, সময়মত মজুরী পরিশোধ না করা, মজুরী কম দেয়া সহ

নানাভাবে শ্রমিকদেরকে বঞ্চিত করেছে। আর সড়ক ও নৌযানসহ পরিবহণ শ্রমিক, পর্যটন, হোটেল, রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা চরম দুর্দশায় জীবন অতিবাহিত করেছে। তারা জীবন বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের এই শ্রমে দেশের উৎপাদন ও অর্থনীতি সচল থাকলেও শ্রমিকদের জীবন হয়েছে দুর্বিষহ। কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। আউটসোর্সিং এর নামে শ্রমিকদের চাকুরীর নিশ্চয়তা হরণকরা হয়েছে। করোনার এই সংকটের সময় নতুন কর্মসংস্থান করা যখন রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব সেই সময় ক্ষয়িস্নু পুঁজিবাদের প্রতিনিধি বর্তমান সরকার, আমলাতন্ত্র আর নীতিনির্ধারকদের ভূলনীতি, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপচয়ের দায় শ্রমিকদের কাঁধে চাপিয়ে রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে, চিনিকলগুলো বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্ব ব্যাংক, আই.এম.এফ‘র পরামর্শে অতীতেও রাষ্ট্রীয় কারখানা লোকসানের অজুহাতে ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল, এর ফলে লুটপাট হয়েছে কিন্তু রাষ্ট্রের বা দেশের জনগণের কোন লাভ হয়নি। নেতৃবৃন্দ, রাষ্ট্রের এই দায়িত্বহীন আচরনের নিন্দা জানিয়ে বন্ধ বা ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর নয়, আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রিয় মালিকানায় পাটকলসমূহ চালু করার দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ, প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা, করোনার কারনে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসা শ্রমিকদের পুনর্বাসন, পুনরায় কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়ে বলেন, সকল খাতের শ্রমিকদের জন্য আইন প্রণয়ন করে জাতীয় ন্যুনতম মজুরী ঘোষণা, সকল শ্রমজীবী মানুষের তালিকা তৈরী করে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ আন্তর্জাতিক ঘোষিত নীতি ও আইএলও কনভেনশন অনুসারে শ্রমিকের অধিকার রক্ষার এবং শ্রম আইন ও বিধিমালায় বিদ্যমান সকল শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী কালাকানুন বাতিলের দাবী আদায়ে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে শ্রেণী সচেতন ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনসমূহের ঐক্যবদ্ধতার বিকল্প নেই।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ