শ্রীমঙ্গলে ৩য়দিনেও চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান

প্রকাশিত: ৪:৫২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২০

শ্রীমঙ্গলে ৩য়দিনেও চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান

বিশেষ প্রতিনিধি || শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ০৮ অক্টোবর ২০২০ : ন্যূনতম দৈনিক মজুরী ১৫০ টাকা নির্ধারণ, ২ মাসের মজুরীর সমপরিমাণ উৎসব বোনাস, বিদ্যমান সকল সুযোগ সুবিধা অানুপাতিকহারে বাড়ানো, বকেয়া মজুরী পরিশোধসহ দূর্গাপূজার অাগেই চা সংসদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিবার্ষিক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদনের দাবীতে তৃতীয় দিনেও দুই ঘণ্টাব্যাপী কর্মবিরতি পালন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন শ্রীমঙ্গলের ২৬টি চা বাগানের শ্রমিকেরা।

শ্রীমঙ্গলের ২৬টিসহ সারাদেশের ২৫০টি চা বাগানের পক্ষে খাইছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি পুষ্প পাইনকা ও সম্পাদক অনিরুদ্ধ ভূঁইয়া, ভাড়াউড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নূর মোহাম্মদ ও সম্পাদক সজল হাজরা, মাকড়িছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি কাশি নারায়ণ, ফুলছড়া চা বাগানের সভাপতি জগবন্ধু রায় ও সম্পাদক বিষামিত্র বুনার্জি স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি গ্রহণকালে শ্রীমঙ্গলের সুযোগ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, “অাপনারা একটি স্মারকলিপি পেশ করেছেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে যাবে। স্মারকলিপিতে উল্লিখিত অাপনাদের দাবী যথাসময়ে সম্পাদিত হোক এটাই প্রত্যাশা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অাপনাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। নিশ্চয়ই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।”
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে পেশকৃত স্মারকলিপিতে বলা হয়, “চা শিল্পে বিগত ৭০ বছর যাবত চা সংসদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিপক্ষীয়ভাবে মজুরী বোনাস সহ অন্যান্য সুবিধাদি নিয়ে দ্বিবার্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হয়ে অাসছে। এছাড়াও সরকার এ পর্যন্ত তিনবার নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠন করেছেন। যখনই মজুরী বোর্ড গঠন হয়েছে তখনই চা শ্রমিকেরা ভাল কিছু পেয়েছে।
চা সংসদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে সম্পাদিত সর্বশেষ চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। এরপর নতুন দাবিনামা নিয়ে অালোচনা শুরু হয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ২২ মাস অতিক্রম হতে চলেছে। মালিকপক্ষের বিভিন্ন টালবাহানা ও অসহযোগিতার কারণে চুক্তি সম্পাদন হচ্ছে না। মালিকপক্ষ দূর্গাপূজার অাগেই চুক্তি সম্পাদনের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। পূজার অাগে চুক্তি সম্পাদন না হলে নতুন মজুরী, বকেয়া সহ নতুন বোনাস কিছুই পাওয়া যাবে না।”

এদিকে, এরঅাগে অাজ বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনেও সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর এসব বাগান থেকে চা শ্রমিকেরা শ্রীমঙ্গল শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌমুহনা চত্বরে সমাবেশে বক্তব্য দেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ এ কন্দ, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী এবং বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা ও সাধারণ সম্পাদক দেবেন্দ্র বাড়াইক প্রমূখ।
সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন, বর্তমানে দিনে ১০২ টাকা মজুরি দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ বহন করাও সম্ভব হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে কিন্তু মজুরি সেই অনুযায়ী বাড়েনি।

কালীঘাট চা-বাগান, সোনাছড়া চা-বাগান, ভাড়াউড়া চা-বাগান, ভুরভুরিয়া চা-বাগান, জাগছড়া চা-বাগান, খাইছড়া চা-বাগান, লাখাইছড়া, মিজাপুর, সাতগাঁওসহ সর্বমোট শ্রীমঙ্গলের ২৬টিসহ সারাদেশের প্রায় ২০০টি চা-বাগানে একযোগে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেছে বলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ এ. কন্দ জানিয়েছেন।

সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা-বাগানে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা চা-বাগানের দুর্গাবাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী প্রমুখ।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা জানান, মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে ৩০০ টাকা মজুরি দাবি করা হয়েছিল। মালিকপক্ষ ১২০ টাকা দিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ২৩ মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো ১০২ টাকা হারে মজুরি দেওয়া হচ্ছে।

বিজয় হাজরা বলেন, ‘দুর্গাপূজার আগেই চা শ্রমিকদের নতুন মজুরিসহ বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবি জানাই। আমাদের দাবি না মানলে আগামীকালও সারা দেশের চা শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করবেন। এ ছাড়া দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

এ সম্পর্কে ফিনলে টি কোম্পানির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিইও) তাহসিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকার মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে দিয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত বোর্ডের সঙ্গে ৫টি বৈঠক হয়েছে। গত মার্চ থেকে করোনার কারণে সভা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। তা ছাড়া করোনাকালে অন্যদের মতো চা শিল্পেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের উৎপাদিত অনেক চা-পাতা অবিক্রীত রয়ে গেছে। যেহেতু মজুরি বোর্ড কাজ করছে, সেহেতু হঠাৎ করে শ্রমিকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি অযৌক্তিক।

ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ

মজুরি বৃদ্ধিসহ দুর্গাপূজার আগেই উৎসব বোনাস পরিশোধের চা শ্রমিকদের দাবিকে সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান।

মজুরি বৃদ্ধিসহ দুর্গাপূজার আগেই উৎসব বোনাস পরিশোধের চা শ্রমিকদের দাবিকে সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের মৌলভীবাজার জেলা যুগ্ম অাহবায়ক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান মাসুকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন এবং শ্রীমঙ্গল পৌর শাখার সভাপতি শেখ জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক রোহেল অাহমদ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ