মৃত্যুদণ্ড দিলেই ধর্ষণ কমবে তা মনে করি না: মেনন

প্রকাশিত: ৬:২২ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২০

মৃত্যুদণ্ড দিলেই ধর্ষণ কমবে তা মনে করি না: মেনন

বিশেষ সাক্ষাৎকার || ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০২০ : ‘রাজনীতির কারণেই সামাজিক কাঠামোগুলো ভেঙে পড়ছে। মানুষ প্রতিরোধ করতে শক্তি হারিয়ে ফেলছে। সরকারি এবং বিরোধী দল এর জন্য দায়ী। এখানে দুটি বড় দল। দুটি বড় দলই ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে দুর্নীতি করেছে। আর দুর্নীতির এই মহামারি থেকেই সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।’

সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এছাড়া প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এমতাবস্থায় ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি উঠেছে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অাজ মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করবেন।

তবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন মনে করেন, ধর্ষণ প্রতিরোধে মৃত্যুদণ্ডই যথেষ্ট নয়। তার মতে, এ সমস্যার সমাধানের জন্য মূলে যেতে হবে। সমাজের পতন কেন ঘটল, তা খুঁজে বের করতে হবে।

ধর্ষণ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। এ সময় তিনি কথাগুলো বলেন।

ধর্ষণ ইস্যুতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হচ্ছে দেশব্যাপী। এই ইস্যু রূপ নিচ্ছে রাজনীতির ইস্যুতেও। কীভাবে দেখছেন পরিস্থিতি?

রাশেদ খান মেনন : যা ঘটছে, তা রীতিমতো অস্বস্তির। এটি সামাজিক অপরাধ এবং তা ক্রমশই সমাজকে বিষিয়ে তুলছে। আমরা সম্প্রতি ধর্ষণের যে কটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম, তা নিঃসন্দেহে সমাজ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করে। সামাজিক আন্দোলন বা সচেতনতার কথা বলা হচ্ছে ধর্ষণের মতো অপরাধ কমিয়ে আনতে। কিন্তু সচেতনতার অভাবেই ধর্ষণ হচ্ছে। এটি এখন আর একতরফাভাবে বলা যাবে না। রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে যে দুর্বৃত্তায়ন ঘটছে, তা ধর্ষণের মতো অপরাধকে উসকে দিচ্ছে।

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কথা বলছেন। এই প্রশ্নে ভোট, নির্বাচনের প্রসঙ্গও আসে…

রাশেদ খান মেনন : আমি তা মনে করি না। ভোট, নির্বাচন আর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এক জিনিস নয়। এর সঙ্গে ভোট, নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকারের কোনো সম্পর্ক নেই। সমাজের সর্বত্রই দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য। আর তাদের কারণেই সামাজিক অপরাধ বেড়ে চলছে।

তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী?

রাশেদ খান মেনন : সামাজিক প্রতিরোধ আর বিচারের ক্ষেত্রে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ দেখাতে হবে। প্রশাসনের ওপর আস্থার যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনতে হবে।

সামাজিক প্রতিরোধের যে শক্তি, তা তো ক্রমশই নিষ্ক্রিয় হচ্ছে…

রাশেদ খান মেনন : রাজনীতির কারণেই সামাজিক কাঠামোগুলো ভেঙে পড়ছে। মানুষ প্রতিরোধ করতে শক্তি হারিয়ে ফেলছে। সরকারি এবং বিরোধী দল এজন্য দায়ী। এখানে দুটি বড় দল। দুটি বড় দলই ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে দুর্নীতি করেছে। আর দুর্নীতির এই মহামারি থেকেই সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।

আপনি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে ভোট, নির্বাচনকে আলাদা করছেন। কিন্তু সিলেটের এমসি কলেজ বা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষমতাসীনদের নাম এসেছে। ভোট, নির্বাচনেও এই শক্তিই কাজ করে।

রাশেদ খান মেনন : রাজনীতির সঙ্গে ঢালাওভাবে এমন ঘটনাকে সম্পৃক্ত করা ঠিক না। আর সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনায় অপরাধীকে কিন্তু ছাত্রলীগের এক নেতাই আটক করে দিয়েছে। ফলে ধর্ষণের জন্য ছাত্রলীগকে এককভাবে দায়ী করতে পারি না। তবে হ্যাঁ, ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে অপরাধ ঘটানো সহজ হয়। তার মানে এই নয় যে, রাজনৈতিক শক্তি সরাসরি এমন অপরাধে ইন্ধন দিচ্ছে।

ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড রাখার দাবি উঠেছে এবং সরকার হয়তো এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আপনি কী ভাবছেন?

রাশেদ খান মেনন : মৃত্যুদণ্ড দিলেই ধর্ষণ কমবে, আমি তা মনে করি না। এমন সাজা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। আমাদের মূলে যেতে হবে। সমাজের পতন কেন ঘটল, তা খুঁজে বের করতে হবে।

সৌদি আরবে ধর্ষককে প্রকাশ্যে হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে কি ধর্ষণ হচ্ছে না? নারীর প্রতি সহিংসতা আরও বাড়ছে সেখানে। কাজেই আমি মনে করি না, ফাঁসি হলেই সমাধান হয়ে যাবে।

অনেক কারণেই সমাজের এই অস্থিরতা। কেন রাজনীতি, অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়ন তা নিয়ে আগে ভাবতে হবে।

আপনারাও ক্ষমতার অংশীদার। এই পরিস্থিতি আপনাকে অস্বস্তি দেয় কি-না?

রাশেদ খান মেনন : সরকারে আছি বলে অস্বস্তি নয়, একজন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই অস্বস্তি বোধ করছি। সমাজের একজন মানুষ হিসেবে এমন পরস্থিতিতে কেউ ভালো থাকার কথা নয়।

কিন্তু আপনার রাজনৈতিক পরিচয়েরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে…

রাশেদ খান মেনন : রাজনীতিক হিসেবে আমি এমন ঘটনার প্রতিবাদ করছি। আমার দল প্রতিবাদ করছে। আমরা সংসদে বলছি। সরকারে আছি বলেই ধর্ষণের দায় নিতে পারি না।