আহমদ ছফা প্রধানমন্ত্রী হলে যা করতেন : (ছফার ডায়েরী থেকে)

প্রকাশিত: ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২০

আহমদ ছফা প্রধানমন্ত্রী হলে যা করতেন : (ছফার ডায়েরী থেকে)

Manual3 Ad Code

সাইদুর রহমান || ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০২০ : আহমদ ছফা প্রধানমন্ত্রী হলে যা করতেন : (ছফার ডায়েরী থেকে)-

১. আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলে প্রথমে বানান মন্ত্রণালয় স্থাপন করব। যাতে করে বাংলাভাষার অপপ্রয়োগ ঠেকানো যায়;

২. আমার মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য কোন ধরনের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করা একেবারে নিষিদ্ধ হবে। কারণ আমাদের সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের একটি প্রধান কারণ মন্ত্রীদের বক্তৃতা, বিবৃতি;

৩. সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসকে আমি অসম্ভব করে তুলব। ছাত্ররাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক; তারা আছে বলেই সেখানে রাজনীতি হয়, শিক্ষকরা পড়ান, ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করে। ছাত্রদেরকে আমি অনুপ্রাণিত করব তাদের অধিকার সম্পর্কে। আর তাতে করেই সন্ত্রাস আপনা-আপনি বন্ধ হবে;

Manual4 Ad Code

৪. আমি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ইউনিয়ন কাউন্সিল সদস্যদের নির্দেশ দেব। তিন বছরের মধ্যে তাদের এলাকায় একজন মানুষ বাড়লে তারা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না। এ ব্যাপারে আলেম ও মাওলানা সাহেবদের সাহায্য নেয়ার জন্যও তাদের নির্দেশ দেব;

৫. আমি আমার পার্টির প্রধান কার্যালয় গ্রামে নিয়ে যাব। কারণ ঢাকায় কার্যালয় থাকলে এরা জড়িয়ে যায় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আর দুর্নীতি করে;

৬. আমি ক্ষমতায় বসলে ঢাকা শহরের বাসস্থান সমস্যার সমাধান করব। শহরের ৭৮ ভাগ জমির মালিক মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ। আর পনের লক্ষ মানুষ ঘুমায় পথের ওপর। বনানী, ধানমন্ডী, বারিধারা, উত্তরা প্রভৃতি এলাকায় এক-একটি বাড়িতে চার থেকে পাঁচজন লোক থাকে। এসব এলাকায় ফ্লাট বাড়ি তৈরি করে বহু মানুষের আবাস গড়ব;

৭. গ্রাম ও শহরের মাঝে দূরত্বকে কমিয়ে আনব;

Manual7 Ad Code

৮. মাদ্রাসাগুলোতে আধুনিক কারিগরি শিক্ষা চালু করব;

৯. আমি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বদলে দেশে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতষ্ঠনগুলোকে শক্তিশালী করব। কল-কারখানা বা মাঠে এক বছর কাজ না কররে তাকে ডিগ্রী দেয়া বন্ধ রাখব;

১০. পণ-প্রথাকে একটি মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধ বলে আমি গণ্য করব;

১১. আমি শিক্ষিত বেকার যুবকদের নিয়ে একটি শক্তিশালী বাহিনী তৈরি করব। যারা পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে দেশের শতকরা এক শ’ ভাগ লোককে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করে তুলবে;

১২. উত্তর-বঙ্গের সঙ্গে পূর্ব ও দক্ষিণ বঙ্গের যে উন্নয়ন বৈষম্য আছে তা দূর করার পদক্ষেপ নেব। সাবেক পূর্ব-পাকিস্তানের সঙ্গে পশ্চিম-পাকিস্তানের যে বৈষম্য ছিল এখন উত্তর-বঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গের সেই বৈষম্য বর্তমান;

১৩. আমি রাজশাহীতে পদ্মার পাড়ে একটি সাংস্কৃতিক সন্মেলন ডাকব। এই সন্মেলনে পশ্চিম-বাংলা ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের বাংলা ভাষাভাষী মানবপ্রেমিক, কবি-সাহিত্যিকদের নিমন্ত্রণ করে আনব। তাদের দেখাব ফারাক্কার ফলে আমাদের দেশের কী সর্বনাশ হচ্ছে। সে কথা তাদের ভারতের জনগণের কাছে পৌছে দেয়ার অনু্রোধ জানাব;

১৪. প্রতি পাঁচ বছর অন্তর কিছু কিছু লেখককে পেনশন দেব। যাতে করে তারা আর নুতন কোন লেখা না লেখেন। এবং কারা নিয়মিত পেনশন পাবেন এবং বিভিন্ন সভা-সমিতির সভাপতিত্ব করবেন তারও একটা তালিকা আমি প্রণয়ন করব;

১৫. রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব পদক দেয়া হয় সেগুলো দেয়ার আগে জাতীয়ভাবে শ্রদ্ধেয় সদস্যদের সমন্বয়ে একটি কমিটির অনুমোদন নেয়ার ব্যবস্থা নেব;

১৬. মেয়েদের জন্য প্রাথমিকভাবে শতরা কুড়িভাগ চাকরি সংরক্ষিত করব। মেয়েদের অধিকারের লড়াইকে আরো তীব্রতর করার জন্য দেশের সর্বত্র নারী ব্রিগেড গঠন করব;

১৭. কলে-কারখানায় ধর্মঘন সুলক্ষণ নয়। এসব বন্ধ করার জন্য শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব রাখব এবং কারখানা পরিচালনায় তাদের অংশীদারিত্ব দেব;

১৮. আমি আমলাতন্ত্রকে ভেঙে ভেঙে খন্ড খন্ড করব। নুতন আমলা তৈরি করব যারা হবে জনগণের বন্ধু;

১৯. গ্রামীণ দারিদ্র দূর করার জন্য সমবায় পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেব;

Manual8 Ad Code

২০. আমি ঢাকাসহ অন্যনা্য শহরে রিকশা বন্ধ করে দেব এবং বিকল্প যানবাহনের ব্যবস্থা করব;

২১. দেশের নদ-নদীকগুলোকে খনন করে নাব্যতা বৃদ্ধি করব এবং বন্যা ঠেকানোর স্থায়ী ব্যবস্থা নেব;

২২. দেশের দুধ, ডিম, মাখন, মাংস, সবজিতে স্বাবলম্বী ও রফতানি করার মত ক্ষেত্র তৈরি করব;

২৩. বাংলাদেশকে মধু রফতানিকারক দশে পরিণত করব;

২৪. শহরে যাদের দুইয়ের অধিক বাড়ি আছে সেই মালিকদের বাড়িতি আয় গ্রাম উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ করতে বাধ্য করব;

২৫. আমি দশ বছরের কর্মসূচি নেব, যে কর্মসূচি অনুযায়ী ছড়িয়ে থাকা গ্রামের বাড়িগুলোকে নতুনভাবে বিন্যাস করব;

২৬. আমি একটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি পরিষদ গঠন করব। দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেব;

Manual8 Ad Code

২৭. আমার সরকার সাম্প্রদায়িক হানাহানি সম্পূর্ণ নির্মূল করার জন্য সব ধর্মের লোক নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বোর্ড গঠন করব;

২৮. আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিসহ সব উপজাতির সাংস্কৃতিক অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করব। তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেব এবং আধুনিক মানুষ হিসেবে তাদের বিকাশের সুযোগ দেব;

২৯. আমি সেনাবাহিনীতে আমূল পরিবর্তন ঘটাব, পেশাদার সেনাবাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে ৩০ লক্ষ লোকের একটি গণমিলিশিয়া গড়ে তুলব;

৩০. বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিকে গণতান্ত্রিক বলা হলেও এতে গণতান্ত্রিক নীতির প্রতিফলন নেই। সৎ মানুষের বদলে পয়সাওয়ালা মানুষ সর্বত্র নির্বাচিত হয়- আমি নতুন পদ্ধতি দেব;

৩১. দেশের ৬৫ শতাংশ ভূমিহীন জনগণকে উন্নয়ন কর্মকান্ডে যুক্ত করব এবং এতে করে সমগ্র দেশের জন্য একটি নতুন পরিস্থিতি তৈরি করব।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ