ইপসু`র উত্তরাধিকার বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর ঐক্য সংগ্রাম ঐতিহ্যের ৪০ বছর

প্রকাশিত: ৩:৪৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০২০

ইপসু`র উত্তরাধিকার বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর ঐক্য সংগ্রাম ঐতিহ্যের ৪০ বছর

সৈয়দ আমিরুজ্জামান, ০৬ ডিসেম্বর ২০২০ : বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে, শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী এদেশের ছাত্র সমাজের কাছে প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন। মহান ভাষা অান্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ইপসু`র উত্তরাধিকার এই সংগঠনটি ঐক্য সংগ্রাম ঐতিহ্যের ৪০ বছর পূর্ণ করলো অাজ।

মেহনতী জনতার সাথে একাত্ম হওয়ার রাজনৈতিক দিশা নিয়ে, মেহনতী মানুষের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাহসী ভূমিকার ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী। মহান ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাসের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার, সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত করার আহবান নিয়ে ১৯৫২ সালের ২৬ শে এপ্রিল গড়ে উঠে তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’। তারই ধারাবাহিকতা এবং উত্তরাধিকার বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী।
‘৬০-এর দশকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’ থমকে দাঁড়ায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের আন্তর্জাতিক মহাবিতর্কে। বিভক্ত হয় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন। আপোষকামিতা ও সুবিধাবাদকে পরিহার করে সাম্রাজ্যবাদ, স্বৈরাচার এবং সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আপোষহীনভাবে এগিয়ে নিয়েছেন ‘বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী’র পূর্বসুরীরা। ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ আসাদ আমাদের গর্ব। ‘৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং স্বৈরশাসন উৎখাতে লাখো শহীদ আমাদের প্রেরণা।
এদেশের প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে ধারাবাহিক ভাঙ্গন আমাদের আন্দোলনের ঐতিহ্যকে নিঃশেষ করছিল। সাম্রাজ্যবাদ, স্বৈরাচার এবং সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের এ রকম ক্রান্তিকালে, ১৯৮০ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান বুকে ধারণ করে তৎকালীন প্রগতিশীল ৪টি সংগঠন যথাক্রমে (১) জাতীয় ছাত্র আন্দোলন (২) জাতীয় ছাত্র দল (৩) জাতীয় ছাত্র দল এবং (৪) বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী’ গঠন করে প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের ধারাকে শক্তিশালী করে। অতীতের ভূল-ভ্রান্তিকে সচেতনতার সাথে এড়িয়ে ঐক্যের ধারাবাহিক সংগ্রামে ১৯৮১ সালে জাতীয় ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ, ১৯৮৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ‘বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন’-এর একটি অংশ, ১৯৮৮ সালের ৭ এপ্রিল বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের আরেকটি অংশের ঐক্যের মধ্য দিয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী’ সুস্থ ধারার ছাত্র আন্দোলনে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ১৯৮৮ সালের ২১ নভেম্বর ঐক্যের মোহনায় মিলেছে ‘জাতীয় ছাত্র সংসদ’।
অপরদিকে ঐক্যের ধারায় বিকশিত হয় ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন’। ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠন করে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন’। ১৯৮৭ সালের আগষ্টে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন’ ও ছাত্র ঐক্য ফোরাম ঐক্যবদ্ধ হয় ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়নে’। ‘৬০-এর দশকে থমকে পড়া পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সংগ্রামী ধারা ‘বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী’ এবং ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন’ ঐক্যের ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালের ২৩, ২৪ অক্টোবরে ‘বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী’ গঠন করে প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে দিয়েছে নতুন প্রাণ।
মেহনতী জনতার সাথে একাত্ম হওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে সমাজ বিপ্লবের সহযোগী শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী’র কর্মীরা গড়ে তুলেছেন নিজেদেরকে। জনমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করতে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী নিরলসভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

সৈয়দ অামিরুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট;
বিশেষ প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক নতুনকথা;
সম্পাদক, অারপি নিউজ;
সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, মৌলভীবাজার জেলা;
‘৯০-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক ও সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী।
সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন।
সাধারণ সম্পাদক, মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ অাদায় জাতীয় কমিটি।
প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ অাইন ছাত্র ফেডারেশন।
E-mail : rpnewsbd@gmail.com
মুঠোফোন: ০১৭১৬৫৯৯৫৮৯।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ