অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.৫১

প্রকাশিত: ৬:১১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.৫১

ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০: মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং ১ কোটি ১৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রেখে অষ্টম (২০২১-২০২৫) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল (এনইসি)।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এসইসি সভায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রেস ব্রিফিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ১ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে অষ্টম (২০২১-২০২৫) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার। এর মধ্যে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রবাসে। বাকি ৮১ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থান দেশে।
কোন সালে কত কর্মসংস্থান তৈরি হবে, তার একটা ধারণাও দেয়া হয়েছে। যেমন, ২০২১ সালে ২১ লাখ ৬০ হাজার, ২০২২ সালে ২২ লাখ ৩০ হাজার, ২৩ সালে ২৩ লাখ ৩০, ২৪ সালে ২৪ লাখ ২০ এবং ২০২৫ সালে ২৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। সভায়, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পিছিয়ে পড়া জেলাগুলো থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরির লক্ষে সঠিক তথ্য, প্রশিক্ষণ ও অভিবাসন ব্যয় মেটাতে ঋণ সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প ও নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে পরিকল্পনা নীতির ধারাবাহিকতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। এছাড়া, টেকসই উন্নয়ন অভিষ্টের (এসডিজি) লক্ষ্যগুলো অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এসব লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। গত জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন করবে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জানান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কালে বার্ষিক গড় জিডিপি অর্জন হবে ৮ শতাংশ হারে এবং পরিকল্পনার শেষ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। এতে দেশের মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে, চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হবে। পরিকল্পনায় বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হয়েছে মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থবছর ভিত্তিক লক্ষ্য হচ্ছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে জিডিপির ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ বিনিয়োগ হবে।
ড. আলম বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ কর জিডিপির অনপাত বর্তমানের ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ করা হবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য শুল্কের ওপর নির্ভরতা কমাতে এই দুই লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাজস্ব আইন অধিকতর সংস্কার এবং কর প্রশাসনে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালীকরণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পরিকল্পনায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ওপর গুরুত্ব পেয়েছে।
কোভিড মহামারি মোকাবিলা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ২৪৪টি উন্নয়ন কৌশল নেওয়া হয়েছে পরিকল্পনায়। শুধু করোনা মোকাবিলায় আসছে পাঁচটি কৌশল। এছাড়া, আন্তঃসম্পর্কিত উন্নয়ন কৌশল রয়েছে ছয়টি। এর বাইরে পশ্চাৎপদ অঞ্চলের দারিদ্র সমস্যা মোকাবিলেয় ছয়টি কৌশল ও খাতভিত্তিক উন্নয়ন কৌশল রয়েছে ২২৭টি। ১৪টি অধ্যায়ে এসব কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।
কোভিডের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা ও প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের হার বাড়াতে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের পূর্ণাঙ্গ করা হবে। এক্ষেত্রে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে-সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প ও নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে পরিকল্পনায় ধারাবাহিকতার দিকটিতে বিশেষ গুরত্বারোপ। এক্ষেত্রে, যেসব কার্যসম্পাদক সূচকে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে আছে সেসব ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা বাড়ানো। এছাড়া, অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়া খাতগুলো সংস্কারের গতি বাড়ানোর বিষয়টি কোভিডের কারণে আরও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট সাময়িক বেকারত্বসহ বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে কোভিড মহামারিসহ ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে ক্রমান্বয়ে একটি সার্বজনীনন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রর্বতনের প্রস্তাব করা হয়েছে।