মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রমৈত্রীকে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে: বাদশা

প্রকাশিত: ৪:৫৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রমৈত্রীকে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে: বাদশা

বিশেষ প্রতিনিধি || ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ : মহান মুক্তিযুদ্ধে যে স্বপ্নকে ধারণ করে বাঙালি জাতি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলো সেই স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে ছাত্রমৈত্রীকে আরও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রমৈত্রীর জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রমৈত্রীর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা এমপি এসব কথা বলেন।

জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে আমরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলাম। স্বাধীনতার এতো বছর পরে এসেও আমাদের ভাবতে হয়- প্রকৃত অর্থে সেই স্বপ্নগুলোর কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে? সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ উত্তর আমাদের যে সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিলো- সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে ছাত্রমৈত্রীকেই নিষ্ঠার সাথে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

এ সময় পাট শিল্প নিয়ে কথা বলেন জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা।
তিনি বলেন, পাটশিল্প ধ্বংস মানে; উদারনৈতিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির সুযোগ করে দেয়া। একসময় আমাদের দেশের প্রধান শিল্প ছিল ‘পাট’। যে পাট শিল্পের শ্রমিকরা স্বাধীনতার পক্ষে ঊনসত্তরে গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলো। পাট শিল্প সম্পর্কে তৎকালীন বহু নেতা বলেছিলেন, ‘এই শিল্প আমরা কোনদিন বন্ধ হতে দেবো না।’ পাকিস্তানি শাসকেরা আমাদের দেশের পাটশিল্পের টাকা লুট করে নিয়ে গিয়ে তাদের দেশ গড়েছিল। অতএব আজকে যদি আমাদের সরকার পাটশিল্প বন্ধ করে উদারনৈতিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির সুযোগ করে দেয়- তবে আমাদের দেশে আবারও পাকিস্তানি ধারা ফিরে আসলো কি না; তা ভেবে দেখতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার অংশ ছাঁটাই সংবিধান লঙ্ঘনের সামিল মন্তব্য করে ফজলে হোসেন বাদশা আরও বলেন, অনেকে জাতীয় চার মূলনীতি নিয়ে বক্তৃতা করেন। আবার মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত ‘সমাজতন্ত্র’ নিয়ে কথা বলতে ভয় পান। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, জাতীয় চার মূলনীতি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের মূল ধারা। এই মূল ধারার একটির সাথেও আপোস আমরা মেনে নিতে পারি না। কিছুদিন আগে সংবিধান দিবসে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণ পরিবেশন করা হয়েছিল। যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু জাতীয় চার মূলনীতির ব্যাখ্যা করেছিলেন। সেই ভাষণ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে কেটে-ছেঁটে, সমাজতন্ত্রকে আড়ালে রেখে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে- তা সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন। এমনটা আমাদের কখনোই কাম্য ছিল না।

রাকসুর সাবেক ভিপি ফজলে হোসেন বাদশা আরও বলেন, কিছুদিন আগে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি তদন্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দিয়েছেন। তাদের আমি জিজ্ঞেস করি, একটি কথা স্পষ্টভাবে বলুন- ধর্মবাদী শক্তি যদি ক্ষমতা দখল করে তাহলে দেশে কোন ধরনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে? এই গণতন্ত্রের তার স্বাদ ৭১-এ বুদ্ধিজীবী হত্যার মধ্যদিয়ে পাওয়ার পরও কেন এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট বক্তব্য সেই চিঠিতে দিলেন না। সেই চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি বলতেন, বাংলাদেশে কোন ধর্মভিত্তিক দল গঠন করা যাবে না। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। এই কথাগুলো যদি সেই চিঠিতে অন্তর্ভুক্ত করতেন- তবে আপনাদের প্রগতিশীলতা পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতো। কিন্তু আপনারা তা করেননি।

ছাত্রমৈত্রীর সারাদেশের নেতকর্মীদের প্রতি উদ্দেশ্য করে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন এই সভাপতি বলেন, ছাত্রমৈত্রীর জাতীয় সম্মেলন তার নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করবে। আমি সেই নেতৃত্বে শুধু সভাপতি-সম্পাদককে দেখিনা। আমি দেখি সেই নেতৃত্ব কোন রাজনীতি সৃষ্টি করবে। সেই রাজনীতির পেছনে দাঁড়িয়ে কতগুলো ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা গেছে। আমি বিশ্বাস করি ছাত্রমৈত্রী অবশ্যই ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। এ সময় তিনি একমুখী শিক্ষানীতির গণজাগরণ; ঊনসত্তরের গণ আন্দোলনের মতো আবারও জেগে উঠবে এবং ছাত্রমৈত্রীর আদর্শ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি ফারুক আহমেদ রুবেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে উদ্বোধন করেন অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। এছাড়াও সমাবেশে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য নূর আহমেদ বকুলসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ