সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৩২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ : জেলায় মোটর শিল্পে নীরব বিল্পব ঘটেছে। কিছুদিন আগেও ছোটখাটো মোটর পার্টসের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন আর সেই নির্ভরতা নেই। দেশেই তৈরি হচ্ছে অধিকাংশ মোটর পার্টস। এমনকি বাস ও ট্রাকের বডিও। রীতিমতো সরব বিপ্লব ঘটেছে মোটর শিল্পে। শিল্পটির উন্নতি হয়েছে অভাবনীয়। কয়েক বছরের মধ্যে কুমিল্লায় গড়ে উঠেছে ইঞ্জিন পার্টস, গাড়ির পার্টস, লাইটিং, ডেন্টিং, পেন্টিং ও অটোমোবাইলসহ প্রায় শতাধিক চোখ ধাঁধানো কারখানা। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মোটর শিল্প এতটা এগিয়ে গেছে, যা অনেকের কাছেই কল্পনাতীত। অন্ধকার ছাপিয়ে ক্রমাগতভাবে উদ্ভাসিত হচ্ছে আলোয়।
সরেজমিনে কুমিল্লার শহরের পশ্চিমাঞ্চল নোয়াপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মোটর শিল্প শ্রমিকদের প্রাণে ফুর্তির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তারা লোহা, রড়, পাইপ ও স্টিল সিট হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সোজা ও বাঁকা করছে। ওয়েল্ডিং ও ঝকঝকে রঙে তৈরি করছে বাস ও ট্রাকের শক্ত বডি। লোকাল বাস ও ট্রাকের চেসিসও তৈরি হচ্ছে। ইঞ্জিনের খোলনলচে পাল্টে লক্কড়-ঝক্কড় বাস ও ট্রাক নিখুঁতভাবে তৈরি করে একেবারে নতুন করা হচ্ছে। নোয়াপাড়া এলাকার দুইপাশে মোটর শিল্পটিকে ঘিরে অসংখ্য মোটর পার্টস, লোহা, অটোমোবাইল, টায়ার-টিউব ও লেদ মেশিনের ওয়ার্কসপ গড়ে উঠেছে। যা বিস্তৃত হয়েছে শাসনগাছা, ঝাগুড়ঝুলি পর্যন্ত। বিভিন্ন স্থানে ডেন্টিং, লাইটিংসহ শিল্পটির আনুষঙ্গিক কাজকর্ম হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে। মোটর শিল্প কারখানা থেকে তৈরি ইঞ্জিন পার্টস এবং বাস ও ট্রাকের বডি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে আমদানিকৃত বাস ও ট্রাকের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
কুমিল্লা ওয়ার্কসপ মালিক সমিতির সভাপতি কাইয়ুম খান বলেন, তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে ছিলেন ওয়ার্কসপের একজন শ্রমিক। এখন তিনি ওয়ার্কসপের মালিক। তার কারখানা থেকে হিনো, টাটা, ভলবো ও চেয়ার কোচ এবং ট্রাকের বডি তৈরি হয়। তিনি আরো বলেন, আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে একসময় চোরাইপথে বিদেশ থেকে মোটর গাড়ির কাটা চেসিস আসা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। তার তথ্য মতে, ১৯৯৭ সালের প্রথম দিকে কুমিল্লা শহরে অটোমোবইল ওয়ার্কশপের যাত্রা শুরু হয়। এরপর শহরেরর শাসনগাছা, নোয়াপাড়া, আলেখারচর, ধর্মপুর এলাকায় এর বিস্তার ঘটে। বিকাশমান শিল্প হিসেবে দ্রুত এর প্রসার ঘটতে থাকে। কুমিল্লায় বাস ও ট্রাকের বডি তৈরি এবং ইঞ্জিন পার্টস ও অটোমোবাইল, ডেন্টিং-পেন্টিং ও লাইটিংসহ সংশ্লিষ্ট শতাধিক ওয়ার্কশপ গড়ে উঠেছে।
সূত্র জানায়, কুমিল্লা শহর ও উপজেলাগুলোতে প্রায় শতাধিক ওয়ার্কশপ রয়েছে। এগুলোতে কাজ করে দুই হাজারের বেশি শ্রমিক। এসব ওয়ার্কশপে প্রতিমাসে অর্ধশত বাস ও ট্রাকের বডি তৈরি হয়। আর মেরামত কাজ যে কি পরিমাণ হয় তার হিসেব নেই। এর মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়। শুধু নতুন বডি তৈরি নয়, অনেকে ওয়ার্কশপ গাড়ি রিমডেলিংয়ের কাজ করে থাকে। অর্থাৎ বডি নষ্ট হয়ে যাওয়া অতি পুরনো জরাজীর্ণ গাড়ির চেসিসে মেরামত করে নতুন বডি তৈরি করা হয়- যা ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত টেকসই হয়। অটো-মোবাইলসের মালিক মোঃ মোহন বাসসকে জানান, এখানে কাজের মান ভালো হওয়ায় আশপাশের ১৬ উপজেলার ছাড়াও পাশ্ববর্তী জেলার গাড়ি মালিকরা বডি তৈরির জন্য কুমিল্লায় আসেন। এদিকে এখানে শুধু বডি তৈরি নয় ইঞ্জিন, পার্টস লাগানো, ওয়ারিং, ডেন্টিং, পোন্টিং, লোহার কাজসহ যাবতীয় লোহার কাজ করা হয়। এজন্য গাড়ি মালিকরা এখানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ওয়ার্কশপ মালিকরা বলেন, এ শিল্পে ঋণদানে ব্যাংকগুলো তেমন সাড়া দেয় না। যে ঋণ পাওয়া যায় তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যে কোনো মডেলের গাড়ির বডি তৈরি করা সম্ভব বলে আশাবাদ মালিকদের। এ খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলেও তারা অভিমত জানান।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D