সিলেট ১১ই এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে চৈত্র, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৩৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
বিশেষ প্রতিনিধি || ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ : আধুনিকায়ন করে পাটকল চালু, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ নয়, আধুনিকায়ন ও বহুমুখীকরণ, বদলি শ্রমিকসহ সকলের বকেয়া পাওনা পরিশোধ, পিপিপি বা ব্যক্তিমালিকানার নামে লুটপাট বন্ধ, পাটচাষি-আখচাষি রক্ষা, বিরাষ্ট্রীয়করণ বাতিলের দাবিতে আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে সারাদেশের হাজার হাজার শ্রমিক-কৃষক বিক্ষোভ করেছে। পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ এবং বাংলাদেশ আখচাষি ও চিনিকল রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহবানে আজ সকাল থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার শ্রমিক-কৃষক সমবেত হন। সকাল ১১টায় বাংলাদেশ আখচাষি ও চিনিকল রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল সভাপতিত্বে ও শ্রমিকনেতা কামরূল আহসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, প্রবীণ শ্রমিকনেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী, খেতমজুর নেতা মোস্তফা লুৎফুলা এমপি, কৃষক নেতা মাহমুদুল হাসান মানিক, শ্রমিকনেতা মোঃ মছিউদদৌলা, আসলাম খান, খুলনা-যশোর শিল্পাঞ্চল নেতা হারুন রশিদ মল্লিক, চট্টগ্রামের পাটকল শ্রমিক নেতা দিদারুল আলম, নাটোর সুপার মিল মিজানুর রহমান, সেতাবগঞ্জ চিনিকল নেতা শহীদুল ইসলাম হীরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রমিকনেতা মোবারক হোসেন, শ্যামপুর চিনিকল রক্ষা কমিটি আহবায়ক আলতাফ হোসেন।
ঘোষণা পাঠ করেন চিনিকল ও আখচাষী রক্ষা কমিটির নেতা সুকুমার সরকার।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ , দেশের রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল বন্ধ ও চিনিকল বন্ধের অপতৎপরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের স্বার্থ রক্ষা না করে লুটেরাদের স্বার্থে পাট-চিনি কল ধ্বংস করা হচ্ছে। সমাবেশ থেকে পাট ও চিনি শিল্প রক্ষায় দাবি আদায়ে আগামী ১৬ মার্চ দেশের সকল পাটকল, চিনিকল ও আকচাষ এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান এবং ঐদিন ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংহতি সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সমাবেশে সংহতি জানিয়েছে সংগীত পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। এছাড়া ছাত্র-যুব, নারী, খেতমজুর, কৃষিফার্ম শ্রমিক, গার্মেন্টস, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক, হকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগঠন মিছিল নিয়ে সমাবেশের সাথে সংহতি জ্ঞাপন করেন। সমাবেশ শেষে লাল পতাকার এক বিশাল মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাই কোর্ট, তোপখানা রোড হয়ে পুরানা পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়। সমাবেশে আখচাষি ও চিনিকল রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা, ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, পাটকল- চিনিকল লোকশানের জন্য শ্রমিকরা দায়ী নয়। কর্পোরেশনের দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তারাই দায়ী। পাট ও চিনি শিল্প আধুনিকীকরণ করে চালু করার জন্য আমরা জোর দাবী জানাচ্ছি। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে শিল্পের প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ করা হয়েছিল। সেই সকল প্রতিষ্ঠানের বিরাষ্ট্রীয়করণ আমরা কোন ভাবেই মেনে নেব না। প্রবীণ শ্রমিক নেতা পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারের ভুলনীতি ও দুর্নীতির কারণে আজ পাটকল, আখকল লোকসান দেখানো হচ্ছে। যার সাথে শ্রমিক- কর্মচারীদের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব কারখানা বন্ধ করে হাজার হাজার শ্রমিককে বেকার করা হচ্ছে। অন্যদিকে কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্তখাত মুক্তিযুদ্ধের অর্জন। রাষ্ট্রায়ত্তখাত বিলুপ্ত হলে এর দায় বঙ্গবন্ধুর ওপরও পড়ে। এটি হলে বিএনপি আর আওয়ামী লীগের পার্থক্য থাকবে না। আমলা ও লুটেররা এটা বুঝবে না। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এটা না বুঝলে তা হবে দেশের জন্য অত্মঘাতি। তিনি আধুনিকায়ন করে বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল চালু, চিনিশিল্প ও চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানান। তিনি দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত খাত হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্তখাত রক্ষার সংগ্রাম বেগবান করতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
মোস্তফা লুৎফুল্লা এমপি বলেন, রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল-চিনিকল বন্ধের মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সংসদে আলোচনা ছাড়া সিন্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সংসদীয় কমিটির মতামতও উপেক্ষা করা হচ্ছে। তিনি এই সব বিষয় সংসদে আলোচনা আহবান জানান। সমাবেশের ঘোষণায় বলা হয়, “ঐতিহাসিকভাবে পাটের অর্থনীতি আমাদের গোটা অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণঅভ্যূত্থানসহ বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের আন্দোলনের দাবীর সাথে পাট শিল্প অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। অথচ আজ এই শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” ….“সংবিধানের মূলনীতির ভিত্তিতে দেশের সকল ভারী শিল্পের সঙ্গে চিনিশিল্পকেও জাতীয়করণ করা হয়।”
“আজ এইসব শিল্প বন্ধ করে দিয়ে কয়েক কোটি মানুষের কর্মস্থানে আঘাত হানা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, জাতীয়করণকৃত পাট ও চিনিকলের জায়গা-জমি, সম্পদ অনেকের লোলুপ দৃষ্টিতে পড়েছে। এ সকল রাষ্ট্রীয় সম্পদ গ্রাস করার জন্য লুটপাটকারী শ্রেণী মুখিয়ে আছে। ‘পিপিআর’ বা লিজের নামে এই সম্পদ লুটে নিতে তারা নানা চক্রান্ত করছে। বিশ^ব্যাংকের এদেশীয় দোসর মন্ত্রীবর্গ ও কতিপয় আমলার কারসাজি বিএনপি-জামাত সরকারের গৃহীতবিরাষ্ট্রিয়করণ নীতিরই পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে।”
ঘোষাণায় বলা হয়, পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ এবং বাংলাদেশ আখচাষি ও চিনিকল রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সুপারিশ ও প্রস্তাবনাসহ সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পাট ও পাটশিল্প, চিনি ও চিনিশিল্প এবং আখচাষীরা রক্ষা পাবে। পাট-চিনির অর্থনীতি চাঙ্গা হলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। বাংলাদেশের ব্রান্ড পাট তার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। সমাবেশ থেকে পাট ও চিনি শিল্প ধ্বংস করার যে কোন চক্রান্ত রুখে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
সমাবেশ থেকে ঘোষিত কর্মসূচি:
পাট ও চিনি শিল্প রক্ষায় উপরোক্ত দাবি আদায়ে আগামী ১৬ মার্চ দেশের সকল পাট-চিনি কল ও আখচাষ এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান। ঐ দিন (১৬মার্চ)।
ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১ ঘন্টার সংহতি সমাবেশ।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D