সকল নারীরা স্ব-উপার্জনের তাগিদ অনুভব করুক

প্রকাশিত: ৮:২২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৯, ২০২১

সকল নারীরা স্ব-উপার্জনের তাগিদ অনুভব করুক

ফাহমিদা শাহেদ || ঢাকা, ০৯ মার্চ ২০২১ : আমার একটা বদনাম আছে – আমি পারতপক্ষে ভাবীদের আড্ডায় বসি না (মেয়ের বন্ধুর মায়েদেরকে কিংবা স্বামীর বন্ধুর স্ত্রীদেরকে সবাই ভাবী বলেই সম্বোধন করে থাকে)। আমার কখনোই ভাবীদের আড্ডায় বসে থাকতে ভালো লাগে না। কারন এসব আড্ডায় বেশিরভাগ সময়ই পরনিন্দা বা পরচর্চা ছাড়া তেমন কিছুই আলোচনার বিষয় থাকে না।

কয়েকদিন আগে বাধ্য হয়েই এরকম এক আড্ডায় এক পাশে চুপচাপ বসে ছিলাম। সেখানে এক ভাবী যখন জানলেন আমি একজন দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা, খুব তাচ্ছিল্যের সাথেই বললেন “ও আচ্ছা, করোনাকালীন তৈরি হওয়া শখের উদ্যোক্তা!” কথাটা খট করে খুব কানে লাগলো। আমার উদ্যোক্তা জীবনের বয়স যদিও প্রায় চার বছর এবং আমি কোনো শখের উদ্যোক্তা নই, তবুও কথাটা শুনতে ভালো লাগলো না। সেই ভাবীকে তখন বললাম সবাই তো আর শখের উদ্যোক্তা না, কেউ কেউ পরিবারের প্রয়োজনেই কাজে নেমেছে, কেউ বা নিজের মূল পেশা হিসেবেই এটাকে বেছে নিয়েছে, তো সমস্যা কী করলে? উনি তখন আরো ঝাঁজের সাথেই বললেন আরে ধুর, এসব করে কয় টাকাই বা রোজগার হবে, আর সংসার তো উচ্ছন্যে যাবে। বুঝলাম ওনার সাথে তর্ক করা বৃথা।

পরে জানতে পারলাম উনি একজন রিটায়ার্ড কর্নেলের বউ। মনে মনে বললাম- সারাজীবন সরকারি গাড়ি বাড়ি লোকবল নিয়ে চলেছেন, স্বামীর টাকায় শাড়ি গয়না কিনেছেন, দেশ বিদেশ ঘুরেছেন, উনি কী করে বুঝবেন নিজের উপার্জনের তাগিদ বা প্রয়োজনীয়তা??? ওনার নিজের নামটাই মনে আছে কিনা কে জানে, সবাই তো কর্নেল ভাবী বলেই ডাকছিল! 😊

এই করোনাকালীন সময়ে কত মানুষ কর্মহীন হয়ে শহরের আরাম আয়েশ ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। বিলাসী বড় বাসা ছেড়ে দিয়ে ছোট্ট দুকামরার বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। সকলের তাচ্ছিল্যের পাত্রী এই উদ্যোক্তা নারীরাই তখন শক্ত হাতে ডুবু ডুবু নৌকার হাল ধরেছে। ছিড়ে যাওয়া স্বপ্নের জাল নতুন করে বুনতে শুরু করেছে। আজ ই কমার্স দুনিয়ায় চায়নার পরে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশের নাম আসছে তা এইসব অনলাইন উদ্যোক্তাদের কারণেই।

জগতের সকল নারীরা স্ব-উপার্জনের তাগিদ অনুভব করুক, স্বামীর বৈভবে নয়, নারী তার নিজের পরিচয়ে পরিচিতি পাক।

নারী দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে।