শ্রমিকশ্রেণীর প্রথম রাষ্ট্র প‍্যারি কমিউনের ১৫০ বছর

প্রকাশিত: ৪:২১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২১

শ্রমিকশ্রেণীর প্রথম রাষ্ট্র প‍্যারি কমিউনের ১৫০ বছর

সৈয়দ আমিরুজ্জামান || ১৮ মার্চ ২০২১ : পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রমিকশ্রেণীর প্রথম রাষ্ট্র প‍্যারি কমিউনের ১৫০তম বার্ষিকী আজ। ১৮৭১ সালের ১৮ মার্চ ফ্রান্সের বুর্জোয়া শ্রেণী প্রুশিয়ান আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণীর সাহায্য নিয়ে লড়াই করার বদলে যখন আত্মসমর্পণ করে বসলো, তখন প‍্যারির শ্রমিকরা বিদ্রোহ করে ক্ষমতা দখল করে নিল। তারা বুর্জোয়া পার্লামেন্টের বদলে স্থাপন করল কমিউন– যার প্রশাসনিক ও আইন তৈরির দু’রকম ক্ষমতাই ছিল। এর সদস্যরা নির্বাচিত হত সার্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে, এবং যে-কোনো মুহূর্তে তাদেরকে প্রত‍্যাহার করে নেওয়া যেত। স্থায়ী সৈন‍্যবাহিনী তুলে দিয়ে তার বদলে জনতাকে সশস্ত্র করা হল। পুলিশরা পুরোপুরি জনতার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে এলো। ম‍্যাজিস্ট্রেট ও অন‍্যান‍্য সরকারি কর্মচারীরা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হত, তারা মাইনে পেত শ্রমিকদের মজুরির হারে। ইতিহাসে এই প্রথম সর্বহারাশ্রেণী বুর্জোয়াদের উৎখাত করে নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল। আর এই কমিউনার্ডরা যদিও মার্কসবাদী ছিল না তবুও তাদের হাতে এই নতুন রাষ্ট্র সর্বহারা একনায়কত্বেরই রূপ পেল– মার্কস ও এঙ্গেলস যেমনটা ভেবেছিলেন।

এঙ্গেলস লিখেছিলেন : আপনারা জানতে চান, সর্বহারা একনায়কত্ব কেমন দেখতে? প‍্যারি কমিউনের দিকে তাকান। এটাই হচ্ছে সর্বহারা একনায়কত্ব।
কমিউন মাত্র কয়েক সপ্তাহ টিকে ছিল। শ্রমিকশ্রেণীর কোনো পার্টি ছিল না, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন তখনও ছিল নিতান্তই শৈশবে, আর অভিজ্ঞতার অভাবে নেতারাও কয়েকটি মারাত্মক ভুল করেছিলেন। শত্রুদের প্রতি তারা খুবই কোমল ছিলেন, শ্রমিক কৃষক মৈত্রীও তারা গড়ে তুলতে পারেননি। সবচেয়ে বড় কথা, শহর-অবরোধকারী শত্রু সৈন্যদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের জন্য তাদের এত বেশি ব‍্যস্ত থাকতে হত যে, সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্যের জন্য তারা আদৌ সময়ই পাননি।…(লেনিন)
মে মাসের শেষে কমিউনের পতন ঘটলো এবং নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে প‍্যারির শ্রমিকরা সেই বুর্জোয়াদেরই রাইফেলবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হল, যারা মাত্র আশি বছর আগে সাম‍্য, স্বাধীনতা ও মৈত্রীর ধ্বনি দিয়ে সামন্তবাদী রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটিয়েছিল।
কিন্তু তবুও, ঐতিহাসিকভাবে দেখতে গেলে, প‍্যারি কমিউন ব‍্যর্থ হয়নি।… এটা যে শুধু প্রথম সর্বহারা একনায়কত্ব ছিল তাই নয়, উপরন্তু এর সাংগঠনিক একক কমিউন ছিল রাশিয়ার শ্রমিক-প্রতিনিধিদের সোভিয়েতগুলোর– যা সেখানে ১৯০৫ সালে, এবং আবার ১৯১৭ সালে গড়ে উঠেছিল– আদি রূপ। লেনিন লিখেছিলেন : পুঁজিবাদের অধীনে, এমনকি সবচেয়ে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রগুলিতেও, আমলাতান্ত্রিক ও বিচারবিভাগীয় বুর্জোয়া যন্ত্রটিকে বজায় রাখতে হয়, বাস্তবত শ্রমিকশ্রেণী ও সমগ্র মেহনতী মানুষের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবেই। একমাত্র রাষ্ট্রের সোভিয়েত সংগঠনই এই সেকেলে অর্থাৎ বুর্জোয়া যন্ত্রটিকে অবিলম্বে ও চিরদিনের জন্য চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পারে। এ পথে প্রথম যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল প‍্যারি কমিউন। আর দ্বিতীয় পদক্ষেপ সোভিয়েত শাসনের।
১৮৭১ সালের অভিজ্ঞতা থেকে আহরিত শিক্ষাকেই লেনিন মূর্ত করে তুলেছিলেন তার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং তারই নেতৃত্বে পরিচালিত বিপ্লবী পার্টির কাজের মধ‍্য দিয়ে।

#

সৈয়দ আমিরুজ্জামান

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক ;
বিশেষ প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক নতুন কথা
সম্পাদক, আরপি নিউজ;

সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, মৌলভীবাজার জেলা।

ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com

০১৭১৬৫৯৯৫৮৯

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ