ট্রেড ইউনিয়ন গঠন কিভাবে?

প্রকাশিত: ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০২১

ট্রেড ইউনিয়ন গঠন কিভাবে?

বিশেষ প্রতিনিধি || ঢাকা, ২২ মার্চ ২০২১: ট্রেড ইউনিয়ন গঠন কিভাবে? শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা, শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং শ্রমিক শ্রেণীর কল্যাণে ট্রেড ইউনিয়ন হলো একটি আইন স্বীকৃত সংগঠন। মূলত: মালিক বা নিয়োগ কর্তার কাছ থেকে মানবিক আচরণ ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মালিকের সঙ্গে দরকষাকষি করাই ট্রেড ইউনিয়নের কাজ।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৭৫-২০৮ ধারায় ট্রেড

ইউনিয়ন ও শিল্প সম্পর্কিত বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ট্রেড ইউনিয়নের সংজ্ঞা

এই আইনের ২(১৫) ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীন রেজিস্ট্রিকৃত শ্রমিকদের বা মালিকদের ট্রেড

ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত হবে। শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ক বা শ্রমিক এবং শ্রমিকের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে কোনো পার্থক্য ছাড়াই সব শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র সাপেক্ষে তাদের নিজস্ব ট্রেড

ইউনিয়নে যোগদানের অধিকার থাকবে।

প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন

কোনো প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমিকদের নূ্যনতম ৩০ শতাংশ শ্রমিক

সভায় একত্রিত হয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের লক্ষ্যে বিধি অনুযায়ী নির্দিষ্টসংখ্যক কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি কার্যকরী কমিটি গঠন

করতে হবে। প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমিক যাঁরা ইউনিয়নের সদস্যতা গ্রহণ

করেন তাঁদের সংখ্যানুপাতে কার্যকরী কমিটি গঠিত

হয়। সদস্য সংখ্যা ৫০-এর বেশি না হলে কার্যকরী কমিটি হবে ৫

জনের। শ্রমিক সংখ্যা ৫১ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত ৮ জন, ১০১ থেকে ২০০ পর্যন্ত ১০ জন, ২০১ থেকে ৩০০ পর্যন্ত ১২ জন, ৩০১

থেকে ৪০০ পর্যন্ত ১৪ জন, ৪০১ থেকে ৫০০ পর্যন্ত ১৬ জন, ৫০১

থেকে ৬০০ পর্যন্ত ১৮ জন, ৬০১ থেকে ১০০০ পর্যন্ত ২০ জন, ১০০১ থেকে ৫০০০ পর্যন্ত ২৫ জন এবং ৫০০০ ঊর্ধ্বে সদস্য যত জনই হোক কার্যকরী কমিটি হবে অনূর্ধ্ব ৩০ জন। ওই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য দরখাস্ত সংশ্লিষ্ট এলাকার রেজিস্ট্রার অব ট্রেড

ইউনিয়ন বা শ্রম পরিচালকের দপ্তরে পেশ করতে হবে।

দরখাস্তে যেসব বিষয় উল্লেখ করতে হবে

(ক) ট্রেড ইউনিয়নের নাম ও ঠিকানা।

(খ) ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের তারিখ।

(গ) ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের নাম, বয়স, ঠিকানা,

পেশা এবং ইউনিয়নে তাঁদের পদ।

(ঘ) সব চাঁদা দানকারী সদস্যের বিবরণ।

(ঙ) যে প্রতিষ্ঠানের সহিত ট্রেড ইউনিয়ন সংশ্লিষ্ট তাঁর নাম এবং ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোট শ্রমিকের সংখ্যা। উপরোক্ত উপায়ে দরখাস্ত প্রস্তুত করার পর এর সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রের

তিনটি কপি এবং সভাপতির স্বাক্ষরসংবলিত ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব গ্রহণের একটি কপি।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রিকরণের জন্য আবেদন দাখিলের ক্ষমতা প্রদান

করে প্রস্তাব গ্রহণের একটি কপি।

প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন

প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ বলতে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় একই প্রকারের কোনো নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে বা শিল্পে নিয়োজিত এবং অনধিক ২০ জন শ্রমিক নিযুক্ত আছেন_এরূপ সব প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়।

এ ধরনের প্রতিষ্ঠানপুঞ্জের শ্রমিকরা সম্মিলিতভাবে শ্রম

পরিচালকের কাছে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রির জন্য আবেদন

করতে পারেন। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১৮৩(৩)

উপধারা অনুসারে প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক সংখ্যা যাই হোক না কেন

সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ বলে গণ্য হবে। ট্রেড

ইউনিয়ন গঠনের সুবিধার্থে নিম্নে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানগুলোক

ে আইনে প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ক) ব্যক্তি মালিকানাধীন সড়ক পরিবহন, রিকশাসহ।

খ) ব্যক্তি মালিকানাধীন অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন।

গ) অনূর্ধ্ব ১০০ শ্রমিক নিয়োজিত দর্জি ও পোশাক প্রস্তুতকারী শিল্প।

ঘ) চা শিল্প

ঙ) জুট বেলিং

চ) চামড়া শিল্প

ছ) বিড়ি শিল্প

জ) হস্তচালিত তাঁত

ঝ) হোসিয়ারি

ঞ) ছাপাখানা

ট) অনধিক ২৫ অতিথি বিশিষ্ট হোটেল

অথবা মোটেল।

ঠ) হোটেলের অংশ হিসেবে নয় এমন

রেস্তোরাঁ।

ড) ক্ষুদ্র ধাতব শিল্প

ঢ) বই বাঁধাই

ণ) সিনেমা ও থিয়েটার।

ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন

এ আইনের ১৮২ ধারায় শ্রম পরিচালক ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের আবেদন প্রাপ্তির পর তৎসম্পর্কিত আইনানুগ বিষয়াদি যাচাই-বাছাই করে সন্তুষ্ট হলে নির্ধারিত রেজিস্টারে ট্রেড

ইউনিয়ন নিবন্ধন করবেন। আবেদন প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে একটি নির্ধারিত ফরমে ট্রেড ইউয়িনটির নিবন্ধনকরণ প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবেন। নিবন্ধনের জন্য দাখিল করা দরখাস্তে কোনো তথ্যের অসম্পূর্ণতা থাকলে শ্রম পরিচালক ১৫

দিনের মধ্যে আবেদনকারী ট্রেড ইউনিয়নকে লিখিতভাবে অবগত করবেন এবং সংশ্লিষ্ট ট্রেড ইউনিয়ন ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দেবেন। শ্রম পরিচালক নিবন্ধনের দরখাস্ত প্রত্যাখ্যান করলে আবেদনকারী ট্রেড ইউনিয়ন ৩০ দিনের মধ্যে শ্রম

আদালতে আপিল করতে পারবেন। শ্রম আদালত আপিল মঞ্জুর করলে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন পাওয়ার অধিকারী হবেন এবং যদি শ্রম আদালত আপিল খারিজ করেন সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ট্রেড ইউনিয়ন ৩০ দিনের মধ্যে আপিল আদালতে আপিল দায়ের

করতে পারবেন। শ্রম আপিল আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন নিবন্ধন

একই ধরনের বা একই প্রকারের শিল্পে নিয়োজিত বা শিল্প

পরিচালনারত প্রতিষ্ঠানগুলোয় গঠিত এবং রেজিস্ট্রিকৃত দুই বা ততোধিক ট্রেড ইউনিয়ন সম্মত হয়ে তাদের সাধারণ সভায় প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে ফেডারেশন দলিল সম্পাদন করে কোনো ফেডারেশন গঠন করতে এবং নিবন্ধনের জন্য দরখাস্ত

করতে পারবে। ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন নিবন্ধনের দরখাস্তে ফেডারেশন দলিলের তিনটি কপি সংযুক্ত করবে। ট্রেড

ইউনিয়ন নিবন্ধনের বিধি-বিধান ফেডারেশন নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও

একইভাবে প্রযোজ্য হবে।

তবে শ্রমিকদের কোনো ট্রেড ইউনিয়ন মালিকদের কোনো ফেডারেশনে বা মালিকদের কোনো ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকদের

কোনো ফেডারেশনে যোগদান করতে পারবেন না।

জাতীয় ভিত্তিক ফেডারেশন গঠন

পদ্ধতি

উপরোক্ত শিল্পভিত্তিক বা পেশাভিত্তিক ফেডারেশন

ছাড়া আইনের জাতীয়ভিত্তিক ফেডারেশন গঠনের অধিকার রয়েছে।

একাধিক শিল্পের বা একাধিক

প্রকারের শিল্পের রেজিস্ট্রিকৃত ২০ বা ততোধিক ট্রেড ইউনিয়ন সম্মিলিত হয়ে বা সম্মিলিতভাবে উপরোক্ত পদ্ধতিতে জাতীয়ভিত্তিক ফেডারেশন গঠন করতে পারে।

আইনে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ব্যবস্থা থাকলেও দেশে বহুসংখ্যক সংগঠন রয়েছে,

যারা ট্রেড ইউনিয়ন না হয়েও বে-আইনিভাবে ট্রেড ইউনিয়ন ধরনের৷ আন্দোলন-সংগ্রাম করে থাকে।

বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা এমনকি সরকারি কর্মচারীরা পর্যন্ত বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের নামে আন্দোলন-সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে দাবি-দাওয়া আদায় করে।