আওয়ামী-ছদ্মবেশে রাজাকার-পোষ্যের কলমবাজি

প্রকাশিত: ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২১

আওয়ামী-ছদ্মবেশে রাজাকার-পোষ্যের কলমবাজি

।।|| জিয়াউল হক মুক্তা ||।।

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২১ : এক. জনৈক সৈয়দ বোরহান কবীর [সৈবোক] গত ২৪ এপ্রিল২০২১ খ্রিস্টাব্দে দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকায় ‘হেফাজতের আত্মসমর্পন’ শিরোনামের এক রচনায় হেফাজতে ইসলাম নিয়ে লিখতে গিয়ে অহেতুক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রসঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক ও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। এই সৈবোক লোকটি কে, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, কোথায় পড়াশোনা করেছেন বা রুটিরুজির জন্য কী করেন তা জানা নেই— তবে জাসদ নিয়ে তার মন্তব্যগুলো পড়ে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ইতিহাস বিষয়ে সৈবোকের কোন সাধারণ জ্ঞান তো নেইই, এমনকি কোন কাণ্ডজ্ঞানও নেই।একে একে দেখা যাক।

দুই.
সৈবোক ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামীলীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন: ‘জনগণকে ছাড়া, জনগণকে সংঘবদ্ধ না করে, জনগণকে আন্দোলন মুখী না করে এবং পরিষ্কার আদর্শ সামনে না রেখে কোনো রকম গণআন্দোলন হতে পারেনা।’ আর: ‘আন্দোলন গাছের ফল নয়।আন্দোলন মুখ দিয়ে বললেই করা যায়না।আন্দোলনের জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হয়।আন্দোলনের জন্য আদর্শ থাকতে হয়।’সে সময় জাসদের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং হঠ কারিতার প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু সম্ভবত এরকম মন্তব্য করেছিলেন বলে লিখেছেন সৈবোক।

সৈবোক নিজে নিশ্চিত নন বঙ্গবন্ধু কেন ও কাদের প্রসঙ্গে এসব কথা করেছেন, আর সেজন্যই তিনি নিজ বাক্যে ‘সম্ভবত’ শব্দটি যোগ করে রেখে লেজ নামিয়ে পলায়নের পথ তৈরি রেখেছেন। অথচ নিজে নিশ্চিত না হয়ে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিয়ে এরকম ‘সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং হঠকারিতার’ অভিযোগ তোলা গর্হিত অপরাধ— কাণ্ডজ্ঞান থাকলে সৈবোকের তা জানা থাকা উচিত।

এবারে দেখা যাক বঙ্গবন্ধু উদ্ধৃত বাক্য দিয়ে আসলে কাদের কথা বলতে চেয়েছেন। ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু প্রথমত একটি রেফারেন্স দিয়েছেন; এতে তিনি খুব স্পষ্টভাবে ১৯৪৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক বিটি রণদিভের দেয়া তত্ত্ব অনুসরনকারী ভারত ও পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির অতীত সশস্ত্র রাজনীতির কথা বলেছেন। উল্লেখ্য পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির উত্তরাধিকার হলো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।দলটি পাকিস্তান আমলের শুরুর দিকে বিটি রণদিভের তত্ত্ব অনুসরণ করে চরম হঠকারিভাবে তীর-ধনুক-লাঠি-বল্লম নিয়ে কৃষকদের আধুনিক মারনাস্ত্রে সজ্জিত সরকারি বাহিনীর মুখোমুখি করার মাধ্যমে প্রান্তিক আদিবাসী কৃষকদের—বিশেষত দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের হাজং ও কোঁচ জনগণকে— গণহারে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল।মান্দি [গারো] জনগণ এসব কমিউনিস্টদের সাথে সেভাবে জড়িত না হওয়ায় তাদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য হতে হয়নি। এসব মাঠপর্যায়ে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ; এ নিয়ে আরও গবেষণার সুযোগ রয়েছে। এক ফোঁটা শিশিরের মতো এ তথ্য ইতিহাসের পাতায় রেখে দিলাম। উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের সাঁওতাল জনগণও কমিউনিস্ট হঠকারিতার ফলে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

বিটি রণদিভের রেফারেন্স দেয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু একই ভাষণে তাঁর সময়কাল সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘আর এখন একটা সুবিধা হয়েছে, রাত্রের অন্ধকারে গুলি কইরা মাইরা বলে— আমরা মাওবাদী।’ বলা বাহুল্য, জাসদ কখনোই নিজেকে মাওবাদী বলে দাবি করেনি; যারা নিজেদের মাওবাদী হিসেবে দাবি করতেন, বঙ্গবন্ধু ঠিক তাঁদের কথাই বলেছেন।

অতএব প্রমাণিত হয় যে— হয় সহজ-সরল বাংলায় দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পাঠ ও অনুধাবনের বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা সৈবোকের নেই, নয় ইচ্ছাকৃতভাবে তিনি বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বিকৃত উপস্থাপন করেছেন নিজের মনোবিকলনের খোরাকি যোগাতে।

তিন.
সৈবোক-হীনমানস লিখেছেন, ‘জাসদ সে সময় সে কাজগুলোই করত যা ২৬ ও ২৭মার্চে এবং ২০১৩-তে হেফাজত করেছে।’

এটা লেখা হয়ে থাকতে পারে দুটো কারণে; হয় ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি [মানে, যেদিন বঙ্গবন্ধু এ ভাষন দিয়েছেন] পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে সৈবোকের কোন ধারণা নেই, নয় হেফাজতের গত দশ বছরের কৃতকর্ম আড়াল করতে বা তাদের অপরাধ হালকা করতে সৈবোক ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি পূর্বকালের জাসদের রাজনৈতিক কর্মসূচির দোহাই দিচ্ছেন— আদতে যেগুলো ছিল খুবই সহিষ্ণু কর্মসূচি। আশঙ্কা করছি তিনি দ্বিতীয়টি করছেন— যার মানে হেফাজতকে রক্ষা করছেন। এরকম ধারণার কারণ হলো— সৈবোক বিএনপি-জামাত-জঙ্গির পক্ষ হয়ে ১৪ দলের ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে দীর্ঘদিন ধরে ১৪ দলের শরিক বামপন্থি দলগুলোর নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যাচার ভিত্তিক কুৎসা রটনা করে চলছেন। তিনি আওয়ামী লীগকে একলা করে দেয়ার জন্য তারেকের মিশনের অংশীদার হয়ে চাল চেলে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, সৈবোক সম্ভবত জানেন যে ১৯৯০ সালের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনেও এককভাবে আসন পেয়ে ক্ষমতায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।

এখানে বাংলাদেশে ২০২১ সালের ২৬-২৭ মার্চ ও ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত যা করেছে, ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারির আগের জাসদের সেরকম অন্তত একটি কর্মসূচি উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য সৈবোকের প্রতি চ্যালেঞ্জ রাখছি। এ চালেঞ্জ গ্রহণ করে তিনি যদি কোন প্রমাণ দিতে না পারেন ও জনগণের কাছে লিখিতভাবে নিজ অপকর্মের জন্য ক্ষমা না চান, তাহলে কিন্তু খবর আছে! জনতার আদালতে তিনি মিথ্যাবাদি শঠ প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

চার.
পুওর-ম্যান সৈবোক লিখেছেন, ‘জাসদ ও হেফাজতের লক্ষ্য এক, অভিন্ন।জাসদ সে সময় চেয়েছিল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত করতে।আর এসময়ের হেফাজত ভেবেছিল শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করে ‘ইসলামী বিপ্লব’ ঘটাবে।’

এ কথা লিখে, প্রথমত, তৎকালের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও একালের ইসলামী বিপ্লবকে এক কাতারে ফেলে সৈবোক তার মনোবিকলনজাত নৈতিক ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করেছেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক সমাজের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার সাথে ইসলামী বিপ্লবের সমকালীন বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা মিলিয়ে দেখার বা তুলনা করার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য যে সৈবোকের একদমই নেই তা তার এ কথা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।সেজন্যই তিনি জাসদ ও হেফাজতের লক্ষ্যকে এক ও অভিন্ন বলতে পারেন এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও ইসলামি বিপ্লবকে সমরূপ মনে করেন।

দ্বিতীয়ত, উপরন্তু, বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে অপরাপর রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হবার আগ পর্যন্ত চর্চায় ও দলিলদস্তাবেজে জাসদ নির্বাচনী ও গণঅভ্যুত্থানমূলক রাজনীতি করেছে। সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্য ও বিপ্লবী বা জাতীয় সরকারগঠনের দাবি উপেক্ষা ও নাকচ করে বঙ্গবন্ধু নিজেই ১৯৭২ সাল থেকে সরকারি দল ও বিরোধী দল ভিত্তিক পরষ্পর-বিরোধিতার রাজনীতির প্রবর্তন করেছেন। সেটা কি ভুলে যাবার? সে সময় জাসদ সরকার অপসারনের রাজনীতি করেছে— এটা জাসদ কোনদিনও অস্বীকার করেনি, এখনও করেনা, এবং এজন্য জাসদ কোন ধরনের হীনমন্যতায়ও ভোগে না, বরং ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্বে নিজ ভূমিকার জন্য গৌরব বোধ করে।

সে সময় কেবলমাত্র নাপ-সিপিবি ছাড়া আর সকল প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য রাজনৈতিক দলও সরকার অপসারন করতে চেয়েছে। সৈবোকেরএ সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানটুকুও নেই যে এমনকি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মানেও হলো গণরায় নিয়ে সরকার অপসারনের-প্রতিস্থাপনেররাজনীতি। বর্নপরিচয়জাত পাণ্ডিত্য দেখানোর আর জায়গা পেলেন না!

নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় গণরায় গ্রহণের সুযোগ অপসৃত হলে প্রকাশ্য গণঅভ্যুত্থানের রাজনীতিই করতে হয়! নাকি? মাত্র চার মাস সাত দিন বয়সী জাসদকে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচন থেকে তো বের করে দেয়া হয়েছিল! নাকি মিথ্যা বললাম? সে নির্বাচন কেমন হয়েছিল সে বিষয়ে তৎকালীন সরকারের মিত্র র‍্যপি-সিপিবি ও অপরাপর সকল দলের কিন্তু হুবহু এক ধরনের বক্তব্য ছিল! আর গণঅভ্যুত্থানের সুযোগ নস্যাৎ করা হলে তো সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থানের সংগ্রামই করতে হয়! নাকি? মাত্র সাড়ে ষোল মাস বয়সী রাজনৈতিক দল জাসদ ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে শান্তিপূর্ণভাবে স্মারকলিপি প্রদান করতে গিয়ে যে বেআইনী ও বর্বর আক্রমণের শিকার হয়েছিল, তার পরিণতিতে জাসদকে গণঅভ্যুত্থানের রাজনীতির চর্চা করতে হয়েছিল। আর পরে দল নিষিদ্ধ হলে সশস্ত্র সংগ্রাম করতে হয়েছিল। এ সবই অবশ্য ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারির পরের ঘটনা। নির্বাচন ও গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে সারা দুনিয়ার অভিজ্ঞতা কী বলে? ধারণা করছি যে এজাতীয় ঐতিহাসিকতা বিষয়ে সৈবোক জ্ঞাত নন। জানা থাকলে অবশ্যই তিনি এরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন অপলাপ রচনার সাহস করতেন না। ছ্যাঃ!

পাঁচ.
সৈবোকের কাঁঠাল-পাতা খাওয়া জ্ঞানের চরমতম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই বাক্যাংশে: ’৭৪ এজাসদ …ব্যর্থ হয়ে এখন আওয়ামীলীগের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে…।

বিষয়টি একদম সমকালীন। তবুও এর বিবরণী সৈবোকের জানা নেই; অথচ লিখতে বসেছেন রাজনৈতিক বিষয়ে কলাম! আর যদি জেনেও থাকেন, লেখায় তার উল্লেখ না করে এবংসত্যের উল্টো কথা বলে তিনি পাঠক ও জনগণের সাথে প্রতারণা করেছেন। মূলকথা: হয় সমকালীন রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি মূর্খ, নয় মিথ্যাবাদি প্রতারক।

জাসদ আওয়ামী লীগের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন করেনি। ২০০১ সালে জামাত-বিএনপির জোট সরকার ক্ষমতাসীন হলে আওয়ামী লীগেরও আগে জাসদ ওই সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করে। ২০০২ সালের এপ্রিল থেকে জাসদ জোট সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়। বিবিধ সৃজনশীল কর্মসূচির মাধ্যমে জাসদ তার রাজনৈতিক বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচারকরতে থাকে এবং জাসদ আয়োজিত সর্বদলমতের মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়।

২০০৩ সালের ১২ আগস্ট জাসদ ও আওয়ামী লীগ ‘ঘনীভূত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট’ মোকাবেলায় ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের ঐকমত্যে উপনীত হয়; উভয় দলের মধ্যে ‘একসাথে আন্দোলন, একসাথে নির্বাচন ও একসাথে সরকার গঠন’ করার ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত ও ঘোষিত হয়; এদিন জাসদের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে দেয়া এক পত্রে ঐক্যের বিষয়াবলি বা কন্টেন্টপ্রস্তাব করা হয়। এ কন্টেন্টের ভিত্তিতে পরবর্তীতে একটি ৯ দফা কর্মসূচি প্রণীত হয় এবং ২০০৪ সালের শেষ দিক থেকে আওয়ামী লীগ, জাসদ, ন্যাপ [মোজাফফর] ও ১১ দলের যুগপৎ কর্মসূচি পালন শুরু হয়।

ইতোমধ্যে জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা করা হয়; এ ঘটনা ঐক্য প্রক্রিয়াকে গতি দেয়। অবশেষে ২০০৫ সালের ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ, জাসদ, ন্যাপ [মোজাফফর] ও ১১ দল আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ দল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এদিন ১৪ দল প্রণীত ৩১ দফা নির্বাচনী সংস্কারের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর পল্টন ময়দানে ১৪ দলের ২৩ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগে ১৪ দলের সাথে আরও কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত হয় মহাজোট বা গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও ১৪ দলের মুখপাত্রগণ এটা বারবার বলেছেন যে ১৪ দল হচ্ছে একটি আদর্শিক জোট এবং মহাজোট হচ্ছে একটি নির্বাচনী জোট বা সমঝোতা।

বর্ণিত প্রক্রিয়ায় জাসদ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছে; বৃহত্তর ঐক্যের জন্য জাসদ যেমন আওয়ামী লীগ ও অপরাপর রাজনৈতিক দলের কাছে গিয়েছে, তেমনি আওয়ামী লীগও জাসদ ও অপরাপর রাজনৈতিক দলের কাছে গিয়েছে। ওয়ান-ইলেভেন প্রক্রিয়ার কাছে নতিস্বীকার করে সিপিবি ও আরও কয়েকটি দল ১৪ দল থেকে সরে গেলেও ও আপোষ করলেও জাসদ ঐক্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। অবশেষে আদর্শিক জোট ১৪ দল ও নির্বাচনী জোট মহাজোট ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়।

২০০২ সাল থেকে সূচিত এ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জাসদের উদ্যোগী ভূমিকা সম্পর্কে সৈবোকের কোন ধারণা না থাকলে তিনি রাজনৈতিক কলাম/রচনা লেখার জন্য অনুপযুক্ত। অযোগ্য।

উল্লেখ্য, মনে রাখতে হবে যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার এবং ৭ নভেম্বরের মহান সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানের সম্মিলিত প্রতিবিপ্লবী ও পাকিস্তানপন্থি আক্রমণের পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও জাসদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণের ওপর জাসদ জোর দিয়েছিল। জাসদের প্রত্যাশিত সে ঐক্য কখনও এগিয়েছে— যেমন ১৫ দল গঠিত হয়েছিল; কখনও পিছিয়েছে— যেমন জিয়ার আমলে আওয়ামী লীগ ও জাসদের নেতৃত্বে গঠিত ১০ দল এগুতে পারেনি এবং এরশাদ জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্লাটফর্ম ১৫ দল ভেঙে গঠিত হয়েছিল ৫ দল ও ৮ দল; সর্বশেষ ঐক্য [১৪ দল] এখনও বহাল আছে। এ ঐক্যকে আরও গণভিত্তি দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে— ক্ষমতায় একবার মুক্তিযোদ্ধার দলের ও একবার রাজাকারের দলের আরোহনের মিউজিক্যাল খেলার চির অবসানের লক্ষ্যে।

এরপরও সৈবোকের মতো নিম্নস্তরের বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী কোন দ্বিপদী প্রাণি যদি বলে যে জাসদ ১৯৭৪ সালে ব্যর্থ হয়ে এখন আওয়ামীলীগের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে— সেও জনমানসে সৈবোকের মতো হয় মূর্খ, নয় মিথ্যাবাদী প্রতারক হিসেবে পরিগণিত হবেন।

ছয়.
সৈবোক দীর্ঘদিন ধরে ১৪ দলের অন্তর্গত বামপন্থি ও সমাজতন্ত্রী দল ও এসব দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মানসিক অসুস্থতার পর্যায় থেকে ধারাবাহিক কুৎসা ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামীপ্রেমী সেজে। কিন্তু ছদ্মবেশি সৈবোকের আসল কাজ বিএনপি-জামাত-জঙ্গির হয়ে খালেদা-তারেকের রাজনৈতিক মিশন সফল করা— আওয়ামী লীগকে মিত্রহীন করা, একলা করা, পরাজিত করা, ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা। সুতরাং সাধু সাবধান।

-লেখক: জিয়াউল হক মুক্তা: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ