প্রস্তাবিত কৃষি বাজেট: সংবিধান এবং বঙ্গবন্ধু’র দর্শন বিরোধী

প্রকাশিত: ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ১০, ২০২১

প্রস্তাবিত কৃষি বাজেট: সংবিধান এবং বঙ্গবন্ধু’র দর্শন বিরোধী

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ১০ জুন ২০২১ : জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত কৃষি বাজেটকে সংবিধান ও বঙ্গবন্ধু’র দর্শন বিরোধী হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।

মঙ্গলবার (৮ জুন  ২০২১) সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভার প্রস্তাবে বলা হয়, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ১৩ (ক), (খ) -এ উদ্ধৃত রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও সমবায়ের মালিকানাকে চালকের আসনে বসানোর লিপিবদ্ধ বিধান থাকলেও করোনাকালেও কৃষি বাজেট প্রস্তাবনায় সেই বিধান সংরক্ষণ করা হয়নি।প্রস্তাবিত কৃষি বাজেটে পুরানো ছকে কর্পোরেট পুঁজি,ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের স্বার্থ সংরক্ষণের পাকাপোক্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।কৃষিতে এবছর বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।

গতবছর এ বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা।বরাদ্দ বেড়েছে ২শ’ ২৬ কোটি টাকা। মুদ্রাস্ফীতির হিসেব কষলে গতবছরের চেয়েও চলতি অর্থবছরে কৃষি বাজেট বরাদ্দ কমেছে। করোনাকালে খাদ্য নিরাপত্তার ঋুকি এড়াতে দরকার ছিল অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ লাখ মে: টন ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা। বাজেটে তা না রেখে ২২.৫৫ লাখ মে:টন চাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহের টার্গেট রাখা হয়েছে। সরকারিভাবে খাদ্যশস্য সংরক্ষণে ২০০ প্যাডিসাইলো নির্মাণের পূর্বপ্রতিশ্রুত ওয়াদা এবং তা ধান উৎপাদক সমবায়ী কৃষকের কাছ থেকে কেনার প্রশ্নে বাজেট নীরব থেকেছে। ফলে চালের মজুত ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাবে।বাজারে বাড়বে চালের দাম।বাজেটে কৃষিযান্ত্রিকীকরণে কৃষিযন্রের ক্রয়মূল্যের উপর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তার কথা বলা হয়েছে। কৃষিতে বঙ্গবন্ধু’র নির্দেশনামা মোতাবেক “সমবায়ী” ব্যবস্থাপনা গড়া না গেলে যান্ত্রিকীকরণের সুবিধা ধনী ও ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাবে। বাজেটে মুরগি ও মাছের খাবারের উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে এতে মুরগি, মাছ ও গবাদিপশুর খাবারের দাম কমবে। এখানে সারে যেভাবে ভর্তুকি দেয়া হয়-সেভাবেই গবাদিপশু, হাঁস- মুরগি ও মাছের খাবারের ক্ষেত্রেও ভর্তুকির ব্যবস্থা করলে খামারিরা সরাসরি সুবিধা পাবেন। তা না হলে রেয়াতি সুবিধা আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাবে। বাজেট এখানেও বাকরুদ্ধ- নীরব! জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে অধিকাংশ উপকূলীয় জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ছে,খাদ্যের গোডাউন হিসেবে খ্যাত রংপুর  বিভাগসহ উত্তোরাঞ্চলে খরা, বন্যা ও নদীভাঙনের প্রকোপ বাড়ছে। জলবায়ু অভিযোজন প্রক্রিয়া’য় লবণাক্ত, খরা ও বন্যা প্রতিরোধী ফসলের জাত উদ্ভাবন, শস্যবীমা চালু,সার-বীজ-কীটনাশকে ভেজাল ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কৃষি আদালত গঠন, অকৃষি কাজে কৃষিজমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ,খাসজমি ভূমিহীনদের প্রদান ,গণরেশনিং ব্যবস্থা, ৬০ বছর উর্ধ ক্ষেতমজুর,গরীব-প্রান্তিক চাষিদের সার্বজনীন পেনশন স্কীম চালু এবং করোনাকালে গ্রামীন জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা,স্বাস্থ্য সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে এবছরের কৃষি বাজেট কোন কথা বলেনি। খাদ্য উৎপাদনে চ্যাম্পিয়ান কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণে “উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় ( বিপননে) কৃষক সমবায়” গঠন করার কাজটিকে গুরুত্ব দিয়ে ধরা না গেলে বাজারে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাবে।ক্ষতিগ্রস্ত হবে উৎপাদক ও ভোক্তার স্বার্থ।আমেরিকাসহ উন্নত দেশে করোনাকালে কৃষক সমবায়ী ব্যবস্থাপনাকে জোরদার করলেও আমরা হাটছি উল্টো পথে।ধান, গম, ভুট্টা, সবজি উৎপাদন খরচ খুবই ব্যয়বহুল।  বর্গা, প্রান্তিক ও গরিব চাষিরা এসব উৎপাদনে চড়াসুদে এনজিও, মহাজন, দাদন ব্যবসায়ী ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে উৎপাদনে হাত লাগান। ওই ঋণগ্রস্ত কৃষকদের বাঁচাতে কৃষি প্রণোদনা এবং কৃষি ব্যাংকসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমান বৃদ্ধি ও ২% সরল সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা কিভাবে বাড়ানো বা নিশ্চিত করা যাবে, সে বিষয়ে এবারের কৃষি বাজেট কোন কথা বলেনি। আলাদা বরাদ্দের প্রস্তাবনা রাখা হয়নি চরাঞ্চল, হাওর-বাওর এবং উপকূলীয় কৃষি ও কৃষকের সুরক্ষার জন্য।

জাতীয় কৃষক সমিতির কার্যকরী সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিকের সভাপতিত্বে বাজেট পর্যালোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গোলাপ, কেন্দ্রীয় নেতা হাজী বশির, নজরুল ইসলাম হক্কানী, নজরুল ইসলাম, মজিবর রহমান, মহিবুল্লাহ মোড়ল, মিজানুর রহমান, আবুল কালাম, হবিবর রহমান, মোজাম্মেল হক, এ্যাড.ফিরোজ আলম, আব্দুল হক।

রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও সমবায়ের মালিকানাকে চালকের আসনে বসানোর সংবিধানে বিধান লিপিবদ্ধ থাকলেও করোনাকালেও কৃষি বাজেট প্রস্তাবনায় সেই বিধান সংরক্ষণ করা হয়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে গত বছর মার্চ মাস থেকে সারাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে।

জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়লেও প্রকৃত হিসেবে উৎপাদনের সাথে জড়িত শ্রমিক কৃষক সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে এবং দেশে করোনার প্রকোপে প্রচুর মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, নতুন কোন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি, দেশে দারিদ্রাতা ও বৈষম্যের হার বেড়ে চলছে।

দীর্ঘকাল শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশটিকে মহামারি শেষে আবার শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরত আনা সহজসাধ্য হবে না। অনেক শিক্ষার্থীদের বাল্য বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। শিশু শ্রম বেড়ে যাচ্ছে। ঝড়ে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী।

স্বাস্থ্য-চিকিৎসা, খাদ্য-কর্মসংস্থান এবং কৃষি ও গ্রামীণ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে; গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে; শিক্ষাখাতে ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় আয়ের ৮ ভাগ অথবা জাতীয় বাজেটের ২৫% বরাদ্দ দিতে হবে, উন্নয়ন বাজেটে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে; মাঝারি, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক শিল্পোদ্যোক্তাদের পরিকল্পিতভাবে প্রণোদনা দিতে হবে; বেকারদের কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার এবং আত্মকর্মসংস্থানে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে; নিম্নআয়ের আড়াই কোটি পরিবারের জন্য আগামী ছয় মাস প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নগদ অর্থ প্রদানে বরাদ্দ থাকতে হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ