সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ

প্রকাশিত: ১২:৩৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২১

সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৭ জুলাই ২০২১ : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনআিআর)।

বুধবার (৭ জুলাই ২০২১) এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল থেকে সব ব্যাংকে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন ও স্থানান্তর বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এনবিআরের চিঠি পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে নির্দেশনা কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
এনবিআরের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি রাজস্ব স্বার্থ সংরক্ষণের স্বার্থে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ১১৬ এ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ব্যাংকে পরিচালিত সব হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন ও স্থানান্তর স্থগিত করার প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরােধ করা হলো। একইসঙ্গে স্থগিতাদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করে এ সংক্রান্ত একটি পরিপালন প্রতিবেদন (হিসাবসমূহের সর্বশেষ স্থিতি উল্লেখসহ) জরুরি ভিত্তিতে অবগত করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি এস কে সুর চৌধুরী ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমসহ তাদের স্ত্রীদের ব্যাংক হিসাব তলব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল এনবিআর।

ওই চিঠিতে সুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী সুপর্না সুর চৌধুরীর এবং মো. শাহ আলম, তার দুই স্ত্রী শাহীন আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগমের সঞ্চয় হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব ও বিদেশি মুদ্রার হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, ভল্ট, সঞ্চয়পত্র, ডিপোজিট স্কিম ও বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টসহ সব ধরনের হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আজ এসকে সুর চৌধুরী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হলো।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, পি কে হালদারের অনিয়মের সহযোগী হিসেবে আটক ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হক ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার নন্দি আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেন।

রাশেদুল হক জবানবন্দিতে বলেন, পি কে হালদারের ক্ষমতার অন্যতম উৎস ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। তার মাধ্যমেই পি কে হালদার বিভিন্ন অনিয়ম চাপা দিতেন। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক ও বর্তমানে নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেওয়া হতো দুই লাখ টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগের সহকারী পরিচালক থেকে যুগ্ম পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তারা বছরে দু’বার পরিদর্শনে আসতেন। অনিয়ম না ধরার জন্য প্রতিবার তাদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা দেওয়া হতো। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের ও পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্ট তলব করে এনবিআর।

আদালতে জবানবন্দির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর শাহ আলমকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পরিদর্শন বিভাগের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।