ড. এস এ মুতাকাব্বির মাসুদ : সমকালিন সাহিত্যের এক দীপ্র দ্যুতি

প্রকাশিত: ২:৪২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০২১

ড. এস এ মুতাকাব্বির মাসুদ : সমকালিন সাহিত্যের এক দীপ্র দ্যুতি

মৃদুলকান্তি পাল মলয় | ময়মনসিংহ, ০৫ অাগস্ট ২০২১ : চাইলেই হয়তো বাগিচার সুন্দর-সুরভিত ফুল দিয়ে একটি মালা গাঁথা যাবে, কিন্তু ড. মুতাকাব্বির মাসুদ মহোদয়ের মতো একজন সুপ্রতিষ্ঠিত কবি, মনস্বী লেখক, ধীমান গবেষক, বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বহুপ্রজ
মেধাবী, সমাজচিন্তক তথা সাহিত্যমণীষার মননবিশ্ব
এবং ভাবনার সমগ্রতাকে ফেসবুকের অতি পরিমিত
পরিসরে বিন্যস্ত বা ব্যাখা-বর্ণনা করা দুরুহ-কষ্টসাধ্য।
তবে বোদ্ধা এবং সচেতন পাঠকপ্রবরের নিকট তাঁর
তাবৎ অনন্যতা, নান্দনিকতা ও সৃজনকুশলতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলা নিষ্প্রয়োজন। বহুপূর্বেই তিনি
তাঁর সৃজনসত্তা ও কাব্যদ্যুতির আলোকে নির্মাণ করেছেন স্বতন্ত্র সড়কচিহ্ন।

শ্রদ্ধেয় ড. মুতাকাব্বির মাসুদ মহোদয়ের কবিতার
স্বাতন্ত্র্য এখানেই যে, তিনি ভাব ও ভাষার জটিলতা
দিয়ে কবিতাকে অহেতুক দুর্বোধ্য করেন না। তাঁর
কবিতার বিষয়, প্রেক্ষিত এবং সমগ্রতা কৃত্রিমতার
কূটাভাসে আকীর্ণ থাকেনা। সময়ের সাথে সময়ের
ব্যবধান বিস্তর সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি তাঁর কবিতার
সাথে সময়ের ও জীবনের দুরত্ব দূর করতে সদাসচেষ্ট।
তবে কেবল আধুনিকতায় নয়, কালোত্তীর্ণ সময়ের
পরীক্ষায়ও তিনি একজন মিথোজীবী সাহিত্যস্রষ্টা।
তাঁর কবিতায় সমকালিন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের
দুঃখ, ভাববোধ, সংকট, শূন্যতা, সমস্যা ও সম্ভাবনার
অতিরেখ শিল্পায়ন ঘটে। কখনো তীব্র শ্লেষে, কখনো
তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গবিদ্রূপে কখনোবা সখেদ কৌতুকে রসসিক্ত
মনোভঙ্গিতে তাঁর কবিতা বাঙময় হয়। সর্বোপরি ভাষা,
ছন্দ আর শব্দের বিন্যাস বা গাঁথুনির জন্য তাঁর সকল
কবিতায় থাকে মৌলিকতা।

কবিতায় তিনি সব্যসাচী ও সিদ্ধহস্ত এবং কবিতা
তাঁর সহজাত প্রবৃত্তির কুসুমপ্রসবণ হলেও, প্রবন্ধে
তিনি স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জ্বল। বলাবাহুল্য এখন অনলাইন
নির্ভর হাইব্রীড কবিতার বাম্পার ফলন হলেও, প্রবন্ধ
চর্চার হার নিতান্তই হতাশাব্যঞ্জক। প্রবন্ধ লেখার জন্য
যে মৌলিক মেধা, শ্রম ও ধৈর্য্য দরকার তা আমাদের
মধ্যে নেই বললেই চলে। প্রবন্ধের পথ কবিতার মতো
মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। তাইতো আমরা অনেকেই
হাঁটি কবিতার সরলপথে। এই প্রেক্ষিতে তাঁর সমৃদ্ধ
প্রবন্ধযাত্রা প্রণিধানযোগ্য এবং স্বতন্ত্র আলোচনার
দাবি রাখে। তাঁর প্রবন্ধভাবনা এবং একজন ধীমান
গবেষক হিসেবে তাঁর গবেষণার নন্দনতত্ত্ব নিয়ে
আমার মতো সীমিত জ্ঞানের মানুষের পক্ষে তাঁকে
নিয়ে প্রশংসার পসরা সাজানো দুরুহ – কল্পনাতীত ব্যাপারও বটে। উল্লেখ্য ড. এস এ মুতাকাব্বির মাসুদ মহোদয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষা ও বাংলা সাহিত্যে উচ্চতর পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহন করেন।

আর অধ্যাপনার মতো সংবেদনশীল ও সম্মানজনক
পেশার মানুষ হলেও রক্ষণশীলতা তাঁর জীবনাচরণে
গরহাজির। মিতবাক ও নিতান্ত নিভৃতচারী হলেও,
তিনি আত্মকেন্দ্রিক কিংবা অহংকারী নন। যে কোন
সাধারণ মানের রেস্তোরাঁয় প্লেটবিহিন চায়ের
কাপ হাতে তিনি যখন অন্তরঙ্গ আড্ডায় মেতে উঠেন,
তখন তাঁকে দূর থেকে দেখি নমিতনেত্রে শ্রদ্ধা, মুগ্ধতা
আর ভালোলাগার অতল অবগাহনে।

অতিসম্প্রতি এই মনস্বী ব্যক্তিত্বের জন্মদিন ছিলো।
জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাঁকে জানাই উষ্ণ অভিনন্দন।
আশা করি বার্ধক্যকে তিনি পরাজিত করে এগিয়ে
যাবেন তাঁর স্বভাবজাত প্রথাবিরোধী পথে এবং সত্য,
সুন্দর ও শাশ্বতের সন্ধানে। তাঁর সৌন্দর্যবিস্তারী এবং চেতনাসঞ্চারী মনোদৃষ্টির মীমাংসাসূত্র আবিষ্কারে
তাঁর গুণমুগ্ধরা উন্মুখ হবেন- এই কামনা ব্যক্ত করছি।