সিলেট ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:২০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০২ ডিসেম্বর ২০২১ : “২৪ বছর পর চুক্তি নিয়ে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকার কথা ছিল, তা আজ নেই বলে আমার মনে হয়। জিয়াউর রহমান যখন চরভাঙা গরিব বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তখন তরুণ সংসদ সদস্য হিসেবে আমরা বিরোধিতা করেছিলাম।”
বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর ২০২১) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই যুগ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি জননেতা কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেন, অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২৪ বছর পরেও চুক্তি বাস্তবায়নের অবস্থা অনেক হতাশাব্যঞ্জক। যে সরকারের আমলে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, গত ২৪ বছরের অধিকাংশ সময় সেই সরকারই ক্ষমতায় আছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া একেবারেই থেমে আছে। পার্বত্য সমস্যা একটি রাজনৈতিক ও জাতীয় সমস্যা। যেহেতু এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা, সেহেতু এটি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকলেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তা সমাধান হতে পারেনি। আজ প্রশ্ন করতে হচ্ছে, সরকার কেন চুক্তি করেছিল? পার্বত্য সমস্যাকে সমাধানের জন্য নাকি, জুম্ম জনগণের অস্তিত্বকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য?
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ দেশের বৃহত্তর কারাগারে পরিণত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ যারা পাহাড়ের নিরীহ মানুষ, যারা চুক্তির বাস্তবায়ন চায়। আর আরেকটি পক্ষ সরকার এবং তার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পক্ষ। জনসংহতি সমিতি চুক্তির আলোকে যে আইনগুলো প্রণীত হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন চায়। সরকার আজ জনসংহতি সমিতিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করে নেতাকর্মীদের নানাভাবে দমন-পীড়ন করছে। অনেক নেতাকর্মীকে আজ মামলা দিয়ে, হামলা করে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। বহিরাগত যে গরিব বাঙালিদের জিয়াউর রহমান নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এখনো চলমান।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পার্বত্য চুক্তির দুই যুগ পূর্তি আজ বিষাদ, বেদনার সঙ্গে পালন করতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের একটি কলোনি হিসেবে দেখছি আমি। উপনিবেশ হিসেবেই পাহাড়কে ব্যবহার করা হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়কে উপনিবেশ নয়, সরকারি ভাষায় উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ২৪ বছরেও তা হয়ে উঠতে পারলো না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমরা শান্তি চেয়েছিলাম বলেই চুক্তি করেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, বাস্তবতা তাই বলে দেয়। অন্তত শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছে, ন্যূনতম তাও বলতে পারি না। উল্টো একতরফাভাবে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। আদিবাসী মানুষের আদি জীবিকার ওপরও হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। তাদের সমাজ, সংস্কৃতি, পেশা, অর্থনীতি সবকিছুর ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিষ্টার সারা হোসেন ও বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ প্রমুখ।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D