সিলেট ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০২২
মাসরুর আরেফিন | ঢাকা, ০৬ মার্চ ২০২২ : মাসরুর আরেফিনের উপন্যাস ‘আড়িয়াল খাঁ‘ মেলায় কথাপ্রকাশ স্টলে আসছে আগামীকাল (৭ মার্চ ২০২২) সোমবার দুপুর তিনটায়।
গত শুক্রবার ‘প্রথম আলো‘ তাদের সাহিত্য পাতায় এবারের মেলার মাত্র তিন বই নিয়ে ফিচার করেছিল। তার মধ্যে উপন্যাস হিসেবে ছিল আমার এই ‘আড়িয়াল খাঁ‘। সেটা আমার সৌভাগ্য। বইটার ব্যাক কভার ও দুই ফ্ল্যাপ নিচে, বইয়ের প্রচারের অংশ হিসেবে, পাঠকদের জন্য।
———
ব্যাক কভার
লক্কড়-ঝক্কড় করতে করতে একটা আর্মির গাড়ি এসে থামল তাদের রিকশার পাশে। তা দেখে বুক ধক করে উঠল কাশেমের। জাহেদ রিকশার রডে বসেই নড়েচড়ে তাকাল সেই গাড়ির ড্রাইভিং সিটের দিকে। বাচ্চামতো চেহারার এক ছেলে, সামরিক ড্রেস পরা, গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে কাশেমের উদ্দেশে বলল, ‘হয়আর আর ইউ গোয়িং?’
কাশেম বুঝতে পারলেন না যে, এ কথার ইংরেজিতে তিনি কী দিয়ে কীভাবে জবাব দেবেন। তাই তিনি স্রেফ ইংরেজিতেই বলে উঠলেন, ‘আড়িয়াল খাঁ।’
ওই ছেলে এবার বলল, ‘আপনি বাংলায় বলেন। কেন যাচ্ছেন আড়িয়াল খাঁ? কে থাকে ওইখানে?’
কাশেম কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ‘কেউ থাকে না। আমার জমি আছে। জমি দেখতে যাই।’
সামরিক লোকটা তখন তার গলা বাইরের দিকে আরও বের করে খেঁকিয়ে উঠল, ‘তা ভাল কথা। গুড। গুড। কিন্তু জানেন না, দেশের প্রেসিডেন্ট মারা গেছেন? একদিনও হয়নি। যারা যারা আড়িয়াল খাঁ, লাখুটিয়ার দিকে যাচ্ছে আমরা তাদের সবাইকে মনিটর করছি। কেউই জানে না প্রেসিডেন্টের ডেডবডি কোথায়। তাই সবদিকে নানা সন্দেহ ঘনীভূত হইতেয়াছে।’
হেসে ফেলল জাহেদ। আর্মির লোকটার একটা ‘হইতেয়াছে’ শব্দেই ফটাৎ করে বেরিয়ে গেছে এ সত্য যে, সে আসলে খাঁটি বরিশাইল্যা।
———
দুই ফ্ল্যাপ
১৯৮১ সালের ৩০ মে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পরের সন্ধ্যা। বরিশালের হিন্দু-অধ্যুষিত ভাটিখানার বারো বছরের ছেলে জাহেদ তার বাবার সঙ্গে যাচ্ছে আড়িয়াল খাঁ। তার মালেক হুজুর তাকে বলেছেন, ‘তুমি নদীর জ্বলেন্ত পানি ধরবা আর কিছুই পাইবা না, পিরথিবি তো এত্তো ফালতু হয় নাই।’ পৃথিবী এত ফালতু না হতে পারে, কিন্তু পৃথিবী নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক এক ঘর, যে-ঘরের মেঝে ছাদে, আর ছাদ মেঝেয়।
তাই নৌকার ওঠার ঠিক আগে ফোরকানউদ্দিন নামের এক লোক জাহেদকে বলে বসলে, ‘ওই ঘটনাডা নৌকায় কাউরে বলছ তো, জানবা যে—তোমার বাবার লগে নদীতে আইজ রাতে তুমিও ফিমিশ।’ কোন ঘটনা?
বিদদুত বিশ্বাস নামের একজনও একটু আগে তাকে বলেছেন, ‘ছুডো মিয়া, তাইলে বাপের লগে তুমিও মরতে যাও? ভরা বরোষায়?’
আর জাহেদের বোন পারভিনের এত বড় সাহস, সে মেয়ে হয়েও একই আড়িয়াল খাঁ-র পাড়ে এসে ‘রাজা কনডম’ খোঁজে?
নদীর জল থেকে আওয়াজ উঠছে এক গা-কাঁপানো ‘মডি-মডি-মডি’। জানা গেল, প্রেসিডেন্ট জিয়া চট্টগ্রামে মারা যাননি। তিনি বৃষ্টির মধ্যে পালিয়ে এসেছেন তারই কাটা লাখুটিয়ার খালে।
দু দুটো পুরুষাঙ্গ কর্তিত হল, আর এখন এই রাতের নৌকায় কয়লা ওমরের লোকেদের হাতে দা, বস্তা ও ইট। নৌ-পুলিশ নৌকা থামিয়ে জাহেদকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘তুমি কি জানো দেশের পেরসিডেন্ট কোথায়? আর তিনি যদি নিহত হইয়া থাকেন, তাহা হইলে তার কবর কোথায়?’
পৃথিবীর সবটাই ভেঙে পড়ছে ঠাঠাঠা, টাসটাস, দ্রিম, বুউম শব্দে। ট্যারর-ট্যারর।
…
দারিদ্র্যে ভরা শৈশবের স্মৃতি, মারাত্মক শিশু যৌন-নিপীড়ন, চরম সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাস, ভয়াবহ লিঙ্গবৈষম্য, বহিরাগত রেলগাড়ি-ভেঙে-খাওয়া লোকেদের কৃপাহীন সন্ত্রাস আর বাংলা সাহিত্যে অভূতপূর্ব-অশ্রুতপূর্ব যৌনতার বোধের উন্মেষের এক বিভীষিকাময় কাহিনী—যার শুরু ভয়-শঙ্কা ও আশঙ্কায়, যার মাঝখানটা ভরা হাঁস-মুরগি-কুকুর-গুইসাপ–পানাপুকুরের মানুষপ্রতিম আচরণে, আর যার শেষটা বিদ্রোহে (সাহিত্যে শ্লীলতা-অশ্লীলতা নিয়ে লেখকের ভাষিক বিদ্রোহসহ), যেহেতু সেটাই নিয়ম এই পৃথিবীর।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D