সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আর নেই

প্রকাশিত: ১:০০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২২

সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১৯ মার্চ ২০২২ : বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শনিবার (১৯ মার্চ ২০২২) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

গত ফেব্রুয়ারিতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সাহাবুদ্দীন আহমদকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা জানান, সেখানে ভর্তি করানোর পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে রাষ্ট্রপতি করা হয়।

সাহাবুদ্দীন আহমদ তার কর্মজীবনে প্রথমে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালের জুন মাসে তাকে বিচার বিভাগে বদলি করা হয়। তিনি ঢাকা ও বরিশালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি তাকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারক পদে উন্নীত করা হয়।

১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সাহাবুদ্দীন আহমদকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করা হয়। বিচারপতি হিসেবে বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর ওপর তার দেওয়া রায় দেশের শাসনতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।

১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তৎকালীন সরকার তার সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ১৯৭৮ সালের আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি তাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমদ পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা হয়। ওই দিনই রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগ করে উপরাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর ফলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব পান। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার নেতৃত্বে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সাহাবুদ্দীন আহমদের চাহিদা অনুসারে দেশের সংবিধানের এগারোতম সংশোধনীটি আনা হয়। এর ফলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পরও তিনি ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে সুপ্রিম কোর্টে ফিরে যান এবং ১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

সাহাবুদ্দীন আহমদ আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন ১৯৯৬ সালে। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ওই বছর ক্ষমতায় এসে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর তিনি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর নেন।

সাবেক এই প্রধান বিচারপতির ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বড় মেয়ে অধ্যাপক ড. সিতারা পারভিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ওই দুর্ঘটনায় তার দ্বিতীয় মেয়ে শাহানা স্মিথের স্বামী গুরুতর আহত হয়ে পরের বছর মারা যান। শাহানা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছেন। ছোট মেয়ে সামিয়া পারভীন একজন স্থপতি। ছেলে শিবলী আহমদ একজন পরিবেশ প্রকৌশলী।

প্রধানমন্ত্রীর শোক

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ এক শোক বার্তায় শেখ হাসিনা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

রাষ্ট্রপতির শোক

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
আজ এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি মরহুম বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আজ শনিবার (১৯ মার্চ ২০২২) সকাল ১০টায় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি তাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী গণ-আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমদ পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা হয়। ওই দিনই রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগ করে উপরাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর ফলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার নেতৃত্বে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়, যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা পায়।
সাহাবুদ্দীন আহমদের পরামর্শক্রমে দেশের সংবিধানের ১১তম সংশোধনীটি আনা হয়। এর ফলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পরও তিনি ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে সুপ্রিম কোর্টে ফিরে যান এবং ১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।
বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সেই টালমাটাল দিনে জাতির অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর যুগান্তরকারি অবদান দেশের সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
নেতৃবৃন্দ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমাবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

ওবায়দুল কাদেরের শোক

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
আজ এক শোক বিবৃতিতে তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

তথ্য মন্ত্রীর শোক

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ।
আজ এক শোক বার্তায় তথ্যমন্ত্রী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধান বিচারপতির শোক

বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আজ এক শোকবার্তায় প্রধান বিচারপতি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন।

সৈয়দ আমিরুজ্জামানের শোক

বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান।