সিলেট ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২২
নাটোর, ৩০ মার্চ ২০২২ : গ্রামের নাম-ময়না। বয়ে যাওয়া নদী-চন্দনা। যাতায়াতের রাস্তা-আকন্দ। এসব শুধু গানে আর কবিতায় নয় বাস্তবেই রয়ে গেছে নাটোরের লালপুরে। ছবির মত স্নিগ্ধ সুন্দর এই গ্রামটি বারুদের গন্ধ আর রক্তের স্রোতে হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
একাত্তরের ৩০ মার্চ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নাটোরের রেড লেটার ডে। ময়না গ্রামের ঐ যুদ্ধই প্রথম প্রতিরোধ এবং একমাত্র সরাসরি যুদ্ধ। যুদ্ধে শহীদ হন প্রায় ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রাণ হারায় হানাদার বাহিনীর মেজর খাদেম হোসেন রাজাসহ সাতজন। যুদ্ধক্ষেত্রে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ময়না স্মৃতি সৌধ। প্রচলিত প্রথায় এবারও ৩০ মার্চ ময়না দিবসে স্মৃতি সৌধ প্রাঙ্গণে কৃতজ্ঞ চিত্তে শহীদদের স্মরণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৫ মার্চ ঢাকায় অপারেশন সার্চ লাইট শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সারাদেশে মোতায়েন শুরু করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৫ রেজিমেন্টের একটি দল ঢাকা থেকে রাজশাহী সেনানিবাসে যাওয়ার পথে নাটোর ও পাবনার সীমান্ত এলাকায় মুলাডুলিতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছত্রভঙ্গ হয়ে রেজিমেন্টের সাতটি গাড়ি বহর লালপুর উপজেলার আকন্দ সড়ক পথে ময়না গ্রামে ঢুকে পড়ে। চন্দনা নদী পার হতে না পেরে ৩০ মার্চ গ্রামের সৈয়দ আলী মোল্লার বাড়ি সংলগ্ন আমবাগানে আশ্রয় নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। খবর পেয়ে নাটোর ও লালপুরের মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসারসহ সর্বস্তরের মানুষ ময়না গিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের ঘিরে ফেলেন। শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। দীর্ঘ সময়ের এ অসম যুদ্ধে শহীদ হন অন্তত ৪০ বাঙালী। এত মৃত্যুর পরও “মাথা নোয়াবার নয়”। বাঙালীদের গড়ে তোলা প্রাণপণ এ প্রতিরোধে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। যুদ্ধে অন্যতম শহীদ সৈয়দ আলী মোল্লার ছেলে ঐ সময়ের কলেজ ছাত্র আবুল হাসেম মোল্লা বলেন, ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যাওয়ার পথে পাকিস্তানী সেনাদের মধ্যে মেজর খাদেম হোসেন রাজাসহ সাতজন গমের জমিতে ধরা পড়েন। উত্তেজিত জনতা তাদের পিটিয়ে হত্যা করেন। এদের কবরও ময়নাতেই। মেজর রাজা সম্পর্কে টিক্কা খানের ভাগ্নে।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাদের দ্বিতীয় হেড কোয়াটার স্থাপন করে নাটোরে। সেনাবাহিনীর সরব উপস্থিতি ও সমরসজ্জার কারণে নাটোরে অসংখ্য গণহত্যার ঘটনা ঘটলেও উল্লেখযোগ্য কোন সম্মুখ যুদ্ধ বা প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়নি। এ হিসেবে ময়নার যুদ্ধই নাটোরের প্রথম প্রতিরোধ ও একমাত্র যুদ্ধ বলে মনে করেন ময়না যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক নবীউর রহমান পিপলু।
যুদ্ধের আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মমতাজ উদ্দীনের প্রচেস্টায় ময়নাতে ১৯৭৮ সালে স্থাপিত শহীদ স্মৃতিসৌধ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এ সৌধে ১৫জন শহীদের নামাঙ্কিত করা হয়েছে। শহীদদের স্মৃতির সম্মানে পরিচালিত হয়ে আসছে ময়না শহীদ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক ইমাম হাসান মুক্তি কলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ময়না একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হলেও শহীদদের হত্যাকান্ডের স্থান, কবরগুলো এখনও অরক্ষিত। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানান দিতে এগুলো সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ চাই।
ময়না যুদ্ধে নিহত শহীদ পরিবারের সদস্যরা কোন রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বা স্বীকৃতি পাননি বলে জানা গেছে। ময়না যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নাটোর জেলা কমান্ডের কমান্ডার আব্দুর রউফ সরকার বাসসকে বলেন, ময়না যুদ্ধে আত্মদানকারী ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল নয় বলা চলে। এ জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের সরকারী চাকুরি এবং আর্থিক অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা উচিত।
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও ৩০ মার্চ ময়না স্মৃতি সৌধ প্রাঙ্গনে দোয়া মাহ্ফিল এর আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে আজ বিকেলে এ আয়োজন।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D