সিলেট ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২২
ঢাকা, ০৯ এপ্রিল ২০২২ : পর্ব ১ |
যখন আধুনিক বিজ্ঞান ছিল না তখনও মানুষের জিজ্ঞাসা ছিল। আদি জিজ্ঞাসা। ছিল ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি আর স্বরূপ নিয়ে প্রশ্ন। জিজ্ঞাসা ছিল প্রাণের স্বরূপ নিয়ে।
ধর্মগ্রন্থগুলো সেই প্রশ্নগুলোকে সমকালীন জ্ঞান ও বোধের ভিত্তিতে উত্তর দিতে চেষ্টা করেছে। আবার দেশে দেশে সেই বোধের চরিত্র ছিল ভিন্ন।
তখনকার মানুষের ভাবনার কিছু পরিচয় পাওয়া যায় বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থগুলিতে। আধুনিক বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হতে অনেক দেরি। ধর্মগ্রন্থগুলো ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি আর স্বরূপ নিয়ে কী ভেবেছিল?
আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে লিখিত ঋগ্বেদের নাসদীয় সূক্ত মহাবিশ্ব সৃষ্টি বিষয়ে সরলভাবে, সংশয়পূর্ণ মন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নাসদীয় সূক্ত হল দশম মণ্ডলের ১২৯তম স্তোত্র।
১। তৎকালে যাহা নাই, তাহাও ছিল না, যাহা আছে, তাহাও ছিল না। পৃথিবীও ছিল না, অতি দুরবিস্তার আকাশও ছিল না। আবরণ করে এমন কি ছিল? কোথায় কাহার স্থান ছিল? দুর্গম ও গভীর জল কি তখন ছিল?
৩। সর্ব প্রথমে অন্ধকারের দ্বারা অন্ধকার আবৃত ছিল। সমস্তই চিহ্ন বর্জিত ও চতুর্দিকে জলময় ছিল। অবিদ্যমান বস্তু দ্বারা সেই সৰ্বব্যাপী আচ্ছন্ন ছিলেন। তপস্যার প্রভাবে সেই এক বস্তু জন্মিলেন।
৭। এই নানা সৃষ্টি যে কোথা হইতে হইল, কাহা হইতে হইল, কেহ সৃষ্টি করিয়াছেন, কি করেন নাই, তাহা তিনিই জানেন, যিনি ইহার প্রভুস্বরূপ পরমধামে আছেন! অথবা তিনিও না জানিতে পারেন।”
এখানে স্পষ্ট কোন উত্তর দেবার প্রচেষ্টা নেই। আছে সংশয়, দ্বিধা, আছে অস্পষ্ট ও অনিশ্চিত প্রশ্নগুলোকে গ্রন্থিবদ্ধ করবার প্রয়াস। আমি জানি না। কেউ কি জানে? তাও তো জানি না।
ঋগ্বেদ রচনার প্রায় এক হাজার বছর পরে হিব্রু বাইবেল রচিত হয়েছে আজকের ইজরায়েল-প্যালেস্টাইনে। সেই মানুষ ছিল পশুপালক, কৃষিজীবী। দেখা যাক, মহাবিশ্ব ও সৃষ্টি নিয়ে হিব্রু বাইবেলের জেনেসিস-এ কী বলা হয়েছে।
’ঈশ্বর (বা সৃষ্টিকর্তা) এক আত্মা, তিনি শূন্য, (তিনি) জলময় শূন্যতার উপর ঘোরাফেরা করা এক আত্মা, অন্ধকারের মধ্যে কথা বলে ছয় দিনের মধ্যে আলো, আকাশ, ভূমি, গাছপালা এবং জীবন্ত প্রাণীদের আহ্বান করে ডেকে নেন, এবং তাই দিয়ে পৃথিবী সৃষ্টি করেন।
এবং ঈশ্বর বললেন, রাত থেকে দিনকে ভাগ করার জন্য স্বর্গের আকাশে আলো হোক… এবং পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য স্বর্গের আকাশ আলোকিত হোক৷ এবং তাই হয়েছিল৷ এবং ঈশ্বর দুটি মহান আলো তৈরি করেছেন; দিনে শাসন করার জন্য বৃহত্তর আলো, এবং রাতকে শাসন করার জন্য কম আলো। তিনি তারাগুলিও তৈরি করেছিলেন৷ এবং ঈশ্বর তাদের স্বর্গের আকাশে স্থাপন করেছিলেন পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য, এবং দিন ও রাতের উপর কর্তৃত্ব করতে।’
ইহুদি বাইবেল হল সকল আব্রাহামিক ধর্মের আদি পুস্তক। এখানে কিছুটা ঘোষণার ঢঙে সৃষ্টি নিয়ে মূল প্রতিপাদ্য বলা হয়েছে। ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন স্বর্গ ও মর্ত। তিনি চাইলেন, তাই ছয় দিনের মধ্যে গড়ে উঠল পৃথিবী, আকাশ, সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্র, গাছ, প্রাণ, মানুষ।
আমেরিকার ন্যাশনাল স্পেস অ্যান্ড অ্যারোনটিক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সংক্ষেপে NASA বা নাসা) সে দেশে মহাকাশ অভিযানের কাজ করে। ১৯৭৭ সালে ভয়েজার-১ এবং ভয়েজার-২, নাসার এই দুই নভোযান তাদের যাত্রা শুরু করে। ৪৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে এদের যাত্রা অব্যাহত আছে। ২০১২ সালে ভয়েজার-১ সৌরজগতের বাইরে নক্ষত্রের মাঝখানে বিপুলা মহাশূন্যে প্রবেশ করেছে। এটি মানুষ নির্মিত প্রথম বস্তু যা সৌরজগতের সীমানা ছাড়িয়ে চলে গিয়েছে।
আর ভয়েজার-২ সৌরমণ্ডলের বাইরের দিকে থাকা ৪টি গ্রহ- বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের কান ঘেঁষে গিয়ে ওই গ্রহগুলি সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য দিয়েছে। বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনের বলয়, তাদের উপগ্রহের সংখ্যা ইত্যাদির হিসেব এখন আমরা সুনির্দিষ্টভাবে জানি। ২০১৮ সালে এই মহাকাশযানটিও আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে প্রবেশ করেছে।
সময় এগিয়েছে, আধুনিক বিজ্ঞান এসেছে। আবার ভুলে চলবে না আধুনিক বিজ্ঞানের যাত্রা সবে শুরু হয়েছে।
জ্ঞান বাড়লে আমাদের বোধ বদলায়। বোধ বদলালে আমাদের নিজস্ব জগৎটা পাল্টে যায়। কিন্তু বাইরের জগৎ কি আর সত্যি সত্যি পালটায়? না। জগৎ যেমন ছিল তেমনই থাকে, আমাদের দেখবার চোখ যায় বদলে।
ব্রহ্মাণ্ডকে জানতে আমাদের তৃতীয় নয়নের সাহায্য নিতে হচ্ছে। এই তৃতীয় নয়ন হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। নতুনভাবে দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উপলব্ধির ভাষাও পালটাতে শুরু করেছে। আর যে পাল্টাবে না? সে পিছিয়ে পড়বে।
যে বিষয়ে জানি না, সে বিষয় কালকে জানব।
আর সেই জন্য ঋগ্বেদের নাসদীয় সূক্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যেও এত জনপ্রিয়। এখানে উত্তর দিতে চেষ্টা করা হয়নি । প্রশ্ন তুলে গেছে। একদিন সেই প্রশ্নের উত্তর আসবে , কালকে অথবা ১০০ বছর পরে। অথবা ৫০০ বছর পরে।
তথ্যসূত্র
https://sanskritdocuments.org/doc_veda/naasadiiya.html)
https://www.sparknotes.com/lit/oldtestament/section1/
https://voyager.jpl.nasa.gov/mission/status/
Madhusree Bandyopadhyay
09/04/2022
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D