তামাকের বিকল্প হিসেবে মরিচ চাষ বেছে নিচ্ছে কৃষক

প্রকাশিত: ৩:০০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২২

তামাকের বিকল্প হিসেবে মরিচ চাষ বেছে নিচ্ছে কৃষক

নীলফামারী, ১৩ এপ্রিল ২০২২ : নীলফামারীতে এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষক। তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে মরিচ অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিণত হচ্ছে এলাকার কৃষকের কাছে।
জেলার ডোমার উপজেলার পাঙ্গামটুকপুর ইউনিয়নের মটুকপুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেনের (৪৫) এবার তিন বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। ফলন দিতে শুরু করেছে। শুরু থেকে গত ১৫ দিনে প্রতি বিঘায় এ পর্যন্ত ১২মণ করে মরিচ পেয়েছেন। বাজারে প্রতিমণ ২ হাজার ৪০০ টাকা করে (৪০ কেজি) বিক্রি করতে পেরে খুশি ওই কৃষক। যা বিক্রি করে পরিবারের অর্থের যোগান দিচ্ছেন।
তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে মরিচ আবাদে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। এর আগে ওই কৃষক একই জমিতে তামাক আবাদ করতেন।
কৃষক আবুল হোসেন বলেন,‘গত দুই বছর ধরে ওই জমিতে তামাকের পরিবর্তে মরিচ আবাদ করে বেশী লাভবান হচ্ছি। এবার শুরুতে মরিচ বিক্রি করে দাম ভালো পেয়েছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলন হবে। এমন দাম অব্যাহত থাকলে এলাকার কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন।’
একই ইউনিয়নের মেলা পাঙ্গা গ্রামের কৃষক মো. আফজাল হোসেন (৫০) বলেন,‘শুনেছি তামাক ক্ষতিকর একটি ফসল। এজন্য তামাক চাষে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করছে না। কিন্তু মরিচ চাষে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পাচ্ছি। এতে করে ফলন ভালো হচ্ছে, দামও ভালো পাচ্ছি। তাই তামাক ছেড়ে এখন মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকেছি। এখন তামাকের বিকল্প হিসেবে মরিচ অর্থকরী ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেছে।’
এলাকার মরিচ ব্যবসায়ী এনতাজুল হক জানান, এলাকায় ব্যাপক মরিচ চাষের জন্য সিরাজগঞ্জ, পাবনা, যশোহর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, খুলনা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে মরিচ কিনে নিয়ে যান। একারণে এলাকার নির্দিষ্ট একটি স্থানে ‘পাগলীমার’ হাট নামে একটি হাট গড়ে উঠেছে। বছরের ছয় মাস ওই হাটে প্রতিদিন প্রচুর বেচা-কেনা হয়। বিক্রির নিশ্চয়তায় কৃষকরা হাটে মরিচ নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন,‘এখানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার মণ মরিচ কেনাবেচা হচ্ছে এখন। যার বাজার মূল্য কোটি টাকার ওপরে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ হেক্টর বেশী আবাদ হয়েছে। জেলার সবচেয়ে বেশি মরিচের আবাদ হয়েছে ডোমার উপজেলায়। ভালো লাভ হওয়ায় তামাকের বিকল্প হিসেবে মরিচ চাষ বেছে নিচ্ছে কৃষক।
জেলায় ওই এক হাজার ৭৭৫ হেক্টরের মধ্যে ডোমার উপজেলায় ৭৮০ হেক্টর, ডিমলা উপজেলায় ৫৪০ হেক্টর, জলঢাকায় ৮০ হেক্টর, কিশোরগঞ্জে ৮৫ হেক্টর, সৈয়দপুরে ২৫ হেক্টর এবং জেলা সদরে ২৯০ হেক্টর।
এবিষয়ে ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান জানান, ডোমার উপজেলায় এ বছর মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৫০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছে। বিন্দু, সাপ্লাই, ডেমা, ডেমা হাইব্রিড, জিরা, আকাশিসহ দেশি জাতের মরিচ চাষ করছেন কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি তামাক চাষ কমানো। তামাকের বিকল্প হিসেবে মরিচ, ভুট্টা, গম চাষ করা যেতে পারে। তামাক দীর্ঘমেয়াদী একটা ফসল, গত ডিসেম্বরে তামাক লাগানোর পর এখনো অনেকের ক্ষেতে আছে। তামাক চাষে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। যে কৃষক তামাক আবাদ করেন তিনি ও তার পরিবারের শিশুসহ অন্যান্য সদস্যরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েন। তাই আমরা প্রতিনিয়ত চাচ্ছি তামাকের পরিবর্তে কৃষকরা অন্য ফসল আবাদ করুক। সে হিসেবে মরিচ এর বিকল্প হতে পারে। কারণ স্বল্প সময়ের মধ্যে ফল ও দাম ভালো পাওয়া যায়।’ জেলায় এবছর এক হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে বলে জানান তিনি।