ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি থেকে আগত শব্দ!

প্রকাশিত: ১২:৩৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০২৩

ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি থেকে আগত শব্দ!

মারজিয়া প্রভা |

কোন এক সরকারি প্রোগ্রামে সঞ্চালনা করেছিলাম চাকুরির খাতিরে, সেই প্রোগ্রামে প্রথম জানতে পারি বর্তমানে নারী আমলারা ‘স্যার’ ডাক শুনতে আগ্রহী এখন। আমি তো আপা বলা শুরু করছিলাম মাইকে, পরে অনুষ্ঠানের ভারিক্কি বুঝে ম্যাডাম বলা শুরু করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এসে জানান, ‘স্যার’ বলার কালচার নিয়ে কি আমি কিছুই জানিনা! কালচারটা জানলাম, কালচারটা বুঝলাম যে এখন মন্ত্রণালয়ে ‘স্যার’ ডাকটিকে জেন্ডার নিউট্রাল ভাবা হয়।

একটা আপাদমস্তক ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি থেকে আগত শব্দ কিভাবে জেন্ডার নিরপেক্ষ হইতে পারে! যেই শব্দ এর মধ্যে চরম শ্রেণী চরিত্র ঠাসা সেইটাকে জেন্ডার নিউট্রাল ভাবার মত চরম আহাম্মকি এই সরকারের আমলারা করে! এরা জেন্ডার প্রসংগকে গুলে খাইতেসে!

স্যারকান্ড নিয়ে সমস্যায় জীবনে বহুবার পড়ছি। ১২দিনের এক corporate চাকরিতে অফিসের ‘বসকে’ ভাইয়া বলার কারণে তুমুল বকা খাইসি৷ একজন সংবেদনশীল কলিগ এসে আমারে বুঝাইসে স্যার না বলাটা একটা বেয়াদবি। আমি তারে জিগাইসিলাম, ধরেন সামনে স্যার কইয়া পিছনে যদি গালি দেই, এইটা কি বেয়াদবি হবে কিনা! সে বলছিল সম্মানটা মুলত প্রদর্শনের উপর নির্ভর করে।

রংপুরের ডিসিকে স্যার বলা কিংবা না বলা, বিচারকের অভিভাবককে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলা এই প্রতিটা ঘটনা বর্তমান সরকার ব্যবস্থায় সর্বত্র যে বেটাগিরি চলছে তার বহিঃপ্রকাশ।

সেইটা যেমন সত্য, তেমনি সত্য আমরা যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় চলছি, সেই ব্যবস্থায় ‘স্যার’ একটা সম্মানের নাম হইয়া গেছে। এখানে বিশেষ ব্যক্তিবর্গকে স্যার, ম্যাডাম এসব বলাটা রীতি হইয়ে গেছে। এমনকি যদি অফিসের বসকে আমি ভাইয়া অথবা আপু বলি তবুও রিলেশনটা কিন্তু ‘স্যার’ কিংবা ম্যাডাম বনাম দাসের রিলেশনই থাকে! সম্মান এখানে সমান নয়, বরং সম্মান এখানে নির্ভর করছে উঁচু এবং নিচুতে। যেইটা আগে ছিল জমিদারদের ‘ প্রভু’ বলার মধ্যে।

শ্রেণী, বর্ণ, লিংগ বিভাজিত এই সমাজ ব্যবস্থায় এই চর্চা নিয়ত চলছে। কেবল সম্বোধন বদলালেই, এই চর্চাকে বিতাড়িত করা সম্ভব না। সম্ভব তখনই যখন অর্থনৈতিকভাবে বিভক্তির এই সমাজ ব্যবস্থাকে নাই করে, নতুন সমাজ ব্যবস্থার কথা আমরা ভাবব। সেখানেই কেবলমাত্র মানুষে মানুষে এই সামাজিক রিলেশনগুলো হবে বৈষম্যমুক্ত।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ