কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০২৩

কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

দীপক মুখার্জী | কলকাতা (ভারত), ১৫ নভেম্বর ২০২৩ : স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি কিংবদন্তী অভিনেতা রাজকুমার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে কলকাতার একটি হাসপাতালে রাজার মতই বিদায় নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদাখ্যাত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

ওই সময় তিনদিন আগেই শ্বাসনালিতে সফল অস্ত্রোপাচার হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের, চিকিৎসকরাও শারিরিক অবস্থা নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু শনিবার রাত থেকেই তাঁর শারীরিক আবস্থার অবনতি ঘটে। রবিবার সকালে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে থাকে, এদিন সকালেই চিকিৎসকরা এই পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর বাড়ির লোকদেরকেও জানিয়ে দেয়।

হাসপাতালে ৪২ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আপদমস্তক একজন বাঙালি, সারাজীবন মাথা উঁচু করা ব্যক্তিত্ব বাংলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে একটি সুস্থ ও অনন্যধারার মনষ্কতায় পৌঁছে দিয়ে গেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

তিনি ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা, মঞ্চঅভিনেতা , নাট্যকার, আবৃত্তিকার, কবি, চিত্রশিল্পী, থিয়েটার পরিচালক ও অনুবাদক। বহুগুণের অধিকারী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৫ সনের ১৯ জানুয়ারি কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রিট (বর্তমানে সূর্যসেন স্ট্রীট) জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহিত কুমার চট্টেপাধ্যায় ও মাতা আশালতা চট্টোপাধ্যায়।

চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহর কাছে কয়া গ্রামে। স্বাধীনতার অনেক আগেই তাঁরা সপরিবারে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে চলে আসেন। শিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবারের সন্তান ছিলেন সৌমিত্র। তাঁর কথাবার্তা, রুচি, ভাষা ব্যবহারে সেই পারিবারিক পরিমার্জনার ছাপ বয়ে বেড়িয়েছেন আজীবন।

পিতা মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায় প্রথম জীবনে কলকতা হাইকোর্টে ওকালতি করতেন, পরে যোগদেন সরকারি চাকরিতে। পিসিমা তারা দেবীর সাথে বিয়ে হয় স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বড় ছেলে কলকাতা হাই কোর্টের জাস্টিস রমা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের।

সৌমিত্রর জন্ম কলকাতাতে হলেও তাঁর জীবনের প্রথম দশ বছর কাটে কৃষ্ণ নগরে। সেখানকার সেন্ট জন্স স্কুলে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েন তিনি। পিতার চাকুরী সূত্রে বার বার স্কুল বদলাতে হয় তাঁকে। হাওড়া জেলা স্কুল শেষে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে আইএসসি, তারপর কলকতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স পাস করার পর কলেজ অফ আর্টসে দুবছর অধ্যায়ন করেন।

১৯৫৯ সালে তিনি প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অপুর সংসার ছবিতে অপুর ভূমিকায় অভিনয় করেন। অভিনয় নৈপুণ্যতায় মুগ্ধ হন সত্যজিৎ রায়, এর পরে তার ৩৪টি ছবির মধ্যে ১৪টি-তেই অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে তিনি মৃনাল সেন, তপন সিংহ, আজয় করের মত বাঘা পরিচালকদের সাথেও কাজ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও সৌমিত্র কাজ করেছেন রেডিওতে, টিভি’র সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন তিনি।

দু’শরও বেশী বাংলা ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। বাংলা সিনেমার শেষ রাজ কুমার সৌমত্র চট্টোপাধ্যায় বহু পুরস্কার পেয়েছেন, এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো ভারত সরকারে পদ্ম ভূষণ, বঙ্গ বিভূষণ, ফরাসি সরকারের কাছ থেকেও পেয়েছেন সর্বোচ্চ সম্মাননা পুরস্কার। এ ছাড়াও শতাধিক পুরুস্কার পেযেছেন তিনি।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় তিনি জানান, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়ান চলচ্চিত্র জগত, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর কাজের মধ্যে বাঙালির চেতনা, ভাবাবেগ ও নৈতিকতার প্রতিফলন পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়ানের খবর পেয়ে বেলভিঊ হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেখানে ফেলুদা’কে তিনি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একজন ক্ষণজন্মা বাঙালি ছিলেন, যিনি সামাজিক বিপদে সব সময় মানুষের পাশে ছুটে গিয়েছেন। তাঁর প্রয়ানে মুখ্যমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির শ্রদ্ধা

স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি কিংবদন্তী অভিনেতা রাজকুমার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।

সৈয়দ অামিরুজ্জামানের শ্রদ্ধা

স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি কিংবদন্তী অভিনেতা রাজকুমার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান।