মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সাহিত্য সাধনা এবং এই সময়ের লেখালেখি

প্রকাশিত: ১:৫০ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২৪

মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সাহিত্য সাধনা এবং এই সময়ের লেখালেখি

ফয়সল অাহমেদ |

এক.
মানিক বন্দোপাধ্যায় যে সময়ে সাহিত্য চর্চা শুরু করেছেন তখন প্রথম মহাযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) ক্ষত শুকোতে না শুকোতে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের (১৯৩৮-১৯৪৫) রণহুংকার। ভারতবর্ষে চলছে ব্রিটিশবিরোধী ব্যাপক আন্দোলন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই মানুষরূপী দুর্বৃত্ত দ্বারা সৃষ্ট ’৪৩ সালের মন্বন্তরে লক্ষ লক্ষ মানুষ অকালে ঝরে যায়। এরপর ১৯৪৭ সালে আমজনতাকে বিভ্রান্ত করে মিথ্যা, প্রতারণা ও ভন্ডামীপূর্ণ দ্বি-জাতি তত্ত্বের মাধ্যমে ভারতবর্ষকে দুটি রক্তাক্ত মাংসপিন্ডে পরিণত করা হয়। জনতাও বিপুল উৎসাহে ‘স্বাধীনতার স্বাদ’ গলাধঃকরণ করে কিছুকালের মধ্যে বিবমিষার মধ্য দিয়ে ‘ভয়াবহ উদারাময়ে’ আক্রান্ত হয়। মানিক বন্দোপাধ্যায় এই সময়েরই পোড় খাওয়া মানুষ। মানিক এই সময়ে নিজেকে ও তাঁর স্বদেশকে বৈজ্ঞানিকভাবে অনুধাবন করতে শুরু করেছেন। মানিক প্রতিভায় তাই দেশ-কাল-সমাজ সার্থকভাবে ফুটে উঠেছে। মানিকের ধারাবাহিকতায় অনেক লেখক সার্থক সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। তবে বর্তমান বাঙলা সাহিত্য রুগ্ন হওয়ার পেছনে লেখকদের সমসাময়িক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সামাজিক বিন্যাস বুঝতে অক্ষমতা একটি কারণ। যেখানে মানুষের মুক্তির জন্য লেখকদের নিপীড়িত রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করার কথা, সেখানে লেখকরা এই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য নানা ধরণের ফন্দি-ফিকিরে ব্যস্ত, সেখানে মহৎ সাহিত্য সৃষ্টি হতে পারেনা।

দুই.
বাঙালি ‘মধ্যবিত্ত শ্রেণী’ শুরু থেকেই পরষ্পরবিরোধী মানসিকতায় পরিপূর্ণ। একই সাথে ‘নায়ক’ হিসাবে মানুষের কাছে পূজিত হন ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, গান্ধী, নেতাজি সুভাষ বসু, দেশবন্ধু এবং পরবর্তীতে ভাসানী, হালে শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখেরা। একই সাথে বিশ্বাস, ভক্তি, বিচিত্র মূল্যবোধ, সংস্কার, চরম উত্তেজনা, চরম নিস্তেজনা এবং প্রেরণা ও সংকল্পের নিরাপদ সহাবস্থানে কোনো আত্মমর্যাসম্পন্ন ও স্বাধীনচেতা ব্যক্তি গড়ে উঠতে পারে না। বাঙালির রাজনৈতিক উত্থানপর্বে এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য ক্রিয়াশীল থাকায় বাঙলায় কোনো শক্ত সমর্থ মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠেনি। এই শ্রেণী শুরু থেকেই ‘রিকেটগ্রস্থ’ ও ‘অসম্পূর্ণ’ ‘পঙ্গু’ হয়েই গড়ে উঠেছে। বাঙলা সাহিত্যে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পূর্বে কেউ ‘উপনিবেশিক শক্তি’র ‘উপহার’ এই রুগ্ন ও পঙ্গু মধ্যবিত্তকে পরিচয় করিয়ে দেয়নি। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সাহিত্য স্থান-কাল ও শ্রেণীসমূহের বিচিত্র চরিত্রকে ধারণ করেই গড়ে উঠেছে। মানিক মানুষের জটিল-কুটিল-পঙ্কিল জীবন ও একই সাথে নানামুখী সংগ্রামের একেবারে অন্তঃস্থলে প্রবেশ করে সৃষ্টি করেছেন তাঁর অসামান্য সাহিত্য। মানিক পরবর্তী আখতারুজ্জামান ইলিয়াসও মধ্যবিত্তের এই ভন্ডামির চিত্র এবং শ্রমজীবীদের চিত্র এঁকেছেন অসাধারণ দক্ষতায়। ইলিয়াস ছাড়াও আরো কয়েকজন লেখক শ্রমজীবীদের চিত্র যথার্থভাবে এঁকেছেন। তবে বর্তমান সময়ের পরিশ্রম বিমুখ লেখকদের লেখনীতে শ্রেণীসমূহের যথার্থ চরিত্র চিত্রণ ও সংগ্রামী জীবনের সাহিত্যিক রূপায়ণ লক্ষ্য করা যায় না।

তিন.
মানিক জন্মেছিলেন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে। কিন্তু শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত সমাজে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর শ্রেণীস্বার্থকে অস্বীকার করার প্রয়োজন ছিলো। মানিক সাহসের সাথে ‘শ্রেণীচ্যুত’ হতে পেরেছিলেন বলেই সৃষ্টি করতে পেরেছেন অনন্যসাধারণ সাহিত্য। এই সময়ের লেখকদের ক্ষেত্রে শ্রেনীচ্যুতির প্রশ্নই আসেনা। বরং নিজের গা বাঁচিয়ে ছা-পোষা মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করতে পারলে বর্তে যান এই সময়ের লেখক-কবিগণ। ফলে সাহিত্য তাঁর মূলধারা থেকে লক্ষ্যচ্যুত হয়ে গেছে।

চার.
মানিক বন্দোপাধ্যায় কীভাবে সাহিত্যিক হয়ে উঠলেন তার বর্ণনা আছে ‘কেন লিখি’ ও ‘গল্প লেখার গল্প’ ‘সাহিত্য করার আগে’ সহ আরো বেশ কয়েকটি প্রবন্ধে। তিনি লিখছেন: “লেখা ছাড়া অন্য কোন উপায়েই যে-সব কথা জানানো যায় না সেই কথাগুলি জানাবার জন্যই লিখি।” মানিক বন্দোপাধ্যায় নিজেকে ‘কলম পেশা মজুর’ বলতেন। আক্ষরিক অর্থেই তাঁর সামান্য জীবিকার মাধ্যম ছিলো লেখালেখি। তিনি বলতেন, “লেখক নিছক কলম-পেষা মজুর। কলম-পেষা যদি তার কাজে না লাগে তবে রাস্তার ধারে যে মজুর খোয়া ভাঙ্গে তার চেয়েও জীবন তার ব্যর্থ, বেঁচে থাকা অর্থহীন।” গণ মানুষের জন্য শুধু লেখালেখি করে জীবিকা নির্বাহের এমন দুঃসাহস মানিকের মতো পেশাদার লেখকদের পক্ষেই সম্ভব। যদিও সস্তা জনপ্রিয় পেশাদার লেখকও আছেন। যাদের কাজ হচ্ছে পাঠক রুচি নষ্ট করে নিজের ও প্রকাশকের আখের গোছানো।

পাঁচ
মানিক তাঁর সাহিত্যিক জীবনের প্রথম পর্বে ফ্রয়েডীয় চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। সময়ের সাথে তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন, মানবতাকে সাহিত্যের মাধ্যমে তুলে ধরতে হলে, মানব মুক্তির বিজ্ঞানসম্মত পথ নিদের্শ করতে হলে মার্কসবাদে আস্থা রাখতে হবে। মানিক আস্থা রাখলেন। মানিকের ভাষায়, “লিখতে আরম্ভ করার পর জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আগেও ঘটেছে, মার্কসবাদের সঙ্গে পরিচয় হবার পর আরও ব্যাপক ও গভীরভাবে সে পরিবর্তন ঘটাবার প্রয়োজন উপলব্ধি করি। আমার লেখায় যে অনেক ভুল, ভ্রান্তি ও মিথ্যা আর অসম্পূর্ণতার ফাঁকি আছে আগেও আমি তা জানতাম। কিন্তু মার্কসবাদের সঙ্গে পরিচয় হবার আগে এতটা স্পষ্ট ও আন্তরিকভাবে জানবার সাধ্য হয়নি। মার্কসবাদ যেটুকু বুঝেছি তাতেই আমার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে যে, আমার সৃষ্টিতে কত মিথ্যা, বিভ্রান্তি আর আবর্জনা আমি আমদানী করেছি জীবন ও সাহিত্যকে একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ভালোবেসেও, জীবন ও সাহিত্যকে এগিয়ে নেবার উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও।”

মানিকের সাহিত্যিক উত্তরণকে আমরা তিনটি পর্বে ভাগ করতে পারি:

প্রথম পর্বে ভাববাদী ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণা লাভের জন্য নতুন পথের অনুসন্ধান।
দ্বিতীয় পর্বে মার্কসবাদী দর্শনে আস্থা স্থাপন।
তৃতীয় পর্বে ঘটনার দ্বান্দ্বিক বর্ণনার পাশাপাশি গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে বিপ্লবী পরিবর্তনের পথে চলার দিক নির্দেশনা প্রদান।

যেকোনো মতাদর্শে বিশ্বাস লেখকের নিজস্ব বিষয়। প্রত্যেক সৎ লেখককে ক্রমাগত সত্যের অনুসন্ধান না করলে তিনি মহৎ কোনো শিল্প সৃষ্টি করতে পারেন না।

ছয়.
মাত্র আটচল্লিশ বছরের জীবনে আটাশ বছরই নিরন্তর সাহিত্য সাধনায় নিয়োজিত ছিলেন মানিক বন্দোপাধ্যায়। আটাশ বছরের সাহিত্যিক জীবনে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ৪২টি উপন্যাস, ১৬টি ছোটগল্পের গ্রন্থে তিনশতাধিক ছোটগল্প, একটি নাটক, একটি প্রবন্ধ এবং একটি কবিতার সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচিত্র বিষয় নিয়ে এমন বিপুল পরিমাণ উঁচুমানের সাহিত্য সৃষ্টি এই সময়ে সত্যিই বিরল।

সাত.
মানিক বন্দোপাধ্যায়ের লেখকের কথা গ্রন্থের ‘প্রতিভা’ প্রবন্ধের মূল কথা হলো শেষ পর্যন্ত প্রতিভার বিকাশ ও সেই প্রতিভা মানুষের কল্যাণের জন্য। মানিক লিখছেন… “সেজন্য নিজেকে সাধারণ মানুষ ভাবা ছাড়া আমার পথ নেই। জনসাধারণ সাধারণ আর আমি অসাধারণ, কারণ আমি লেখক, এ ধারণা নিয়ে ভালবাসতে গেলে মানুষ কাছে ঘেঁষতে দেবে না, মানবপ্রেমে বুক ফেটে যাওয়া বেদনার সৃষ্টি গ্রহণ করবে না। তাই সাহিত্যে প্রগতি আনার খাতিরে, গণসাহিত্য সৃষ্টির জন্য প্রাণের ছটফটানি মেটানোর জন্য অগত্যাই আজ সবার আগে লেখক-কবিকে এই চিন্তাটা স্বভাবে পরিণত করতে হবে আমি দশ জনের একজন।”

…“প্রতিভার মালিককে জনসাধারণ কত যে শ্রদ্ধা সম্মান দিয়েছে তার সীমা হয় না, ভবিষ্যতেও চিরকাল দিয়ে যাবে, কিছু শ্রদ্ধা সম্মান ফিরিয়ে দেওয়াই তো উচিৎ। তবে মুস্কিল এই, যাকে নিচু ভাবি তাকে ঠিক ভালোবাসাও যায় না, শ্রদ্ধা ও সম্মানও করা যায় না। সেজন্য আগে নিজের মিথ্যা অহংকারটা ছাঁটা দরকার”।

আমাদের দেশে লেখক হওয়ার পূর্বেই অহংকারী হয়ে উঠেন অনেকে। ফলে তাঁদের পক্ষে আর জনগণের কাছে যাওয়া ও ভালোবাসা কোনোটাই সম্ভব হয়না। ভালো লেখা তখন অনেক দূরের বিষয়ে পরিণত হয়।

আট.
মানিক বন্দোপাধ্যায়ও সাহিত্যে নিবিষ্ট শিল্পী হয়েও, কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন তাঁর বক্তব্য ও ভাষাকে জনগণের আরো কাছে নিয়ে যাবেন বলে। কিন্তু লেখক হিসাবে পার্টিতে তিনি কতোটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন, কতটা ভূমিকা রাখতে পেরেছেন কিংবা পার্টি তাঁর প্রতি যথাযথ আচরণ করেছিলো কীনা এই বিষয়গুলো এড়িয়ে না গিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে চরম আর্থিক দৈনতায় পার্টির সহযোগিতাটা প্রয়োজন ছিলো। মানিক ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য সহ আরো অনেক লেখক-শিল্পীদের প্রতি পার্টির ভূমিকা যথার্থ ছিলো বলে মনে হয়না।

নয়.
ভাষা বাস্তবকে কত তীব্রভাবে প্রকাশ করতে পারে তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে মানিক সাহিত্যের ভাষা। ভাষা যে এমন তীব্র, খরখরে, নির্মম, তিক্ত স্বাদেরও হতে পারে তা মানিকের উপন্যাস এবং ছোটগল্প পাঠ না করলে আমাদের ধারণাই জন্মাবে না। মানিকের ভাষারীতি বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাওয়া যায় তিনি সর্বসাধারণের সম্পত্তি হিসাবে কথিত ‘ভাষা’কে একেবারে নিজের আয়ত্ত্বে আনতে চেয়েছেন। যেকোনো সৃষ্টিশীল লেখকের মতো মানিক ভাষার গতানুগতিকতাকে ভেঙ্গে ফেলেছেন। বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়ের সাথে সৃষ্টি করেছেন নতুন ধরণের ভাষারীতি। বর্তমান লেখকদের মধ্যে বিষয়বৈচিত্র্য ও ভাষারীতি নিয়ে যথার্থ পরীক্ষা নিরীক্ষা খুব একটা দেখা যায় না।

দশ.
আমরা লক্ষ্য করবো, মানিকের শেষ জীবনের উপন্যাসগুলোতে বিষয়বস্তুর সাথে ভাষারীতিও যেনো রুগ্ন ও শুকিয়ে গেছে। লেখকমাত্রেরই ক্ষমতা সীমিত। একসময় লেখকের কলম আর সৃষ্টির ঝিলিক বন্ধ হয়ে যায়। মানিকের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিলো। যদিও তিনি কলম পিষে গেছেন আমৃত্য। দুই হাতে লিখে গেছেন বিপুল পরিমাণ সাহিত্য। কিছু কিছু দূর্বল লেখা থাকলেও তাঁর বেশিরভাগ লেখাই অসাধারণ। অনেক লেখাই কালোত্তীর্ণ হয়েছে। সাহিত্য যে সাধনার বিষয় তার বড় দৃষ্টান্ত মানিক বন্দোপাধ্যায়।

শেষ কথা
মানিকের শেষের দিকের লেখাগুলোতে প্রতিবাদী চরিত্রগুলো কতটা বাস্তব? সাহিত্যে বাস্তবতার রূপ ফুটে উঠে সেই সময়ের দেশ-কাল ও শ্রেণী চেতনার ভিত্তিতেও। মানিক বন্দোপাধ্যায় তাঁর সাহিত্যে একটি জ্বলন্ত চেতনা আরোপ করেছেন। তিনি চেয়েছেন তাঁর দেশের একটি বিশিষ্ট শ্রেণী অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণীর জাগরণ। তাই হয়তো চরিত্রগুলি বাংলাদেশের ভিজে মাটিতে অনেক সময় অচেনা মনে হতে পারে। ভাববাদ খুব সহজে মানুষের হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে। কিন্তু বিপ্লবী চিন্তা এত সহজে মানুষের মনকে প্রজ্জ্বলিত করতে পারে না। মানিক বাবু যে বিপ্লবের বয়ান দিয়েছেন তা একটি বিজ্ঞানভিত্তিক বিপ্লবের বয়ান। যেখানে উৎপাদন ব্যবস্থা ও উৎপাদন সম্পর্কের আমূল পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এই বিপ্লব শুধুমাত্র ভাবাবেগ দিয়ে সম্পন্ন হবার নয়। ফলে এখানে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্যে এসেছে প্রধানত বৈজ্ঞানিক সত্য হিসাবে। যে সত্য তিনি তাঁর প্রতিবাদী চরিত্রসমূহের মাধ্যমে হাজির করেছেন। এই বক্তব্যগুলো পাঠকের মনে প্রবল হৃদয়ানুভূতির সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। সর্বোপরি, যে আন্দোলন ও প্রতিবাদ তিনি সাহিত্যে রূপায়ণ করেছেন সামাজিক জীবনে তা খুব বেশি দৃষ্টিগ্রাহ্য ছিলো না। মানিক বন্দোপাধ্যায় সময়ের চেয়ে অগ্রসর লেখক ছিলেন। তিনি তাকাতে চেয়েছেন সামনের দিকে। নির্মম হলেও সত্য হচ্ছে, আমাদের লেখক, সাহিত্য এবং সাহিত্যের পাঠক এখনো তাকাতে ভালবাসে পেছনের দিকে। ফলে দুইয়েকটি উপন্যাস ও কিছু ছোটগল্প ছাড়া মানিকের সামগ্রিক সাহিত্য ব্যাপক পঠিত নয়।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কখনো বিপ্লবী আন্দোলন বিকশিত হলে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সাহিত্য পাঠও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। সাধারণ পাঠকও তখন মানিক বন্দোপাধ্যায়ের লেখনীর মাধ্যমে সামনের দিকে দৃষ্টি ফেলবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। সেই সময়ে হয়তো মানিক সাহিত্যের স্বপ্ন ও বাস্তবতার দূরত্বও ঘুচে যাবে।
জন্মদিনে এই মহান লেখকের প্রতি জানাই গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি!