আইনের শাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সবার জন্য প্রয়োজনীয়

প্রকাশিত: ১:০৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

আইনের শাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সবার জন্য প্রয়োজনীয়

পুলক ঘটক |

শ্যামল দত্ত এবং মোজাম্মেল বাবুর সাংবাদিকতা আপনার পছন্দ নয়। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের মামলা হতে পারে? মার্ডার কেস? উভয়ে একাধিক হত্যা মামলায় আসামী হয়েছেন। দৃশ্যত নিবর্তনমূলক মামলা ও হয়রানি থেকে রেহাই পেতে তারা পালানোর চেষ্টা করছিলেন। আমি বিশ্বাস করি তারা দেশ থেকে চলে যেতে চেয়েছিলেন।

তারা যদি অবৈধভাবে সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করেন, তবে তাদেরকে ধরবে কে? হয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজেবি অথবা পুলিশ। আটক করে তাদের বিরুদ্ধে আইন ও নিয়মমাফিক মামলা দেবে। কিন্তু ঘটনা কী?

দেশের সুপরিচিত দুই বিশিষ্ট নাগরিকের গাড়ি আটক করে তাদের সর্বস্ব ছিনতাই, লুটপাট, অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে রাতভর নির্যাতন এবং সকালে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে কারা? তারা কিভাবে এটা করতে পারল? তাদের বিরুদ্ধে কি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? ডাকাতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের হাতে জিম্মি দুই বিশিষ্ট নাগরিককে ঘিরে পুলিশের ভূমিকা কি ধোঁয়াশাচ্ছন্ন নয়?

প্রশ্নটি আইনের শাসনের। দেশের যেকোনো স্থানে স্বাধীনভাবে ভ্রমণের অধিকার নাগরিকদের আছে। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল হক বাবু, একাত্তর টিভির রিপোর্টার মাহবুব এবং তাদের ড্রাইভার সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হননি। তারা সীমান্ত থেকে বহুদূরে দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েছিলেন। তাদের দেশত্যাগের ইনটেনশন হয়তো মনোগত। কিন্তু তাদের উপর হামলা ও অত্যাচার দৃশ্যমান। সাংবাদিক হয়ে সহকর্মীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত এহেন অন্যায়ের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা বিবেকের দায়।

প্রখ্যাত ক্রিকেটার, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, বিচারক, ডাক্তার, সাংবাদিকসহ যাকে ইচ্ছা তাকে যেভাবে গণহারে হত্যা মামলায় আসামী করা হচ্ছে এবং বন্দীদের উপর পাবলিক দিয়ে হামলা করানো হচ্ছে সে বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন না করলে আমরা মানুষ হিসেবে হেরে যাই।

সরকার পরিবর্তনের পর এখন পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ১০৬ জন সাংবাদিককে হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। অন্যান্য মামলায় সাংবাদিকদের ঢুকানোর সংখ্যা আরও বেশি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীরা সংবাদপত্র অফিস জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটিয়েছিল। এরপর স্বাধীন দেশে আর কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু, মোশতাক, জিয়া, এরশাদ, খালেদা, হাসিনা, ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্যান্য তত্তাবধায়ক সরকার… কারও আমলেই সংবাদ মাধ্যমের কার্যালয় জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা নেই। কিন্তু এবার সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া, ভাঙচুর ও লুটপাট করার ঘটনা ঘটেছে অনেক।

সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ, গণমাধ্যমের মালিকানা দখল ও পদ দখলের ঘটনা মোট কতটি ঘটেছে জরিপ হওয়া দরকার। এ যেনো অন্যায়ের মহোৎসব!

মিডিয়ার উপর এমন নিবর্তন ঘটছে শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায়। দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার নয়া নয়া উৎসব আমাদেরকে কোনদিকে নিয়ে যাবে আমরা কেউ জানি না। উদ্বেগ বাড়ছে। আইনের শাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সবার জন্য প্রয়োজনীয়।