সিলেট ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৫১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২৪
বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ০২ নভেম্বর ২০২৪ : গবেষণা খাতে বৈষম্য এখন সচরাচর চোখে পড়ছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান একের পর এক, গবেষণায় বরাদ্দ পায়। কেউ কাজ করে, আবার কেউ কাজ করে না। তারপরও বৈষম্যমূলক এমন প্রকল্প বরাদ্দ বন্ধ হয়নি।
তাই প্রতিটি প্রকল্পের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঠিক করার ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা, কাজের ধরণ, অভিজ্ঞ জনবলের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানান বক্তারা।
শনিবার (২ নভেম্বর ২০২৪) রাজধানীর নীলক্ষেতে অবস্থিত জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি (এনএপিডি)-তে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্ট আয়োজিত ৯ম সম্মেলনে দেশবরেণ্য গবেষকরা ঐকমত পোষণ করে এই বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশের সামাজিক গবেষণার ওপর বিআইএসআর ট্রাস্ট প্রতিবছর তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাসে এই জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে। এবারের ৯ম পর্বে জেন্ডার, অর্থনীতি, পরিবেশ ও জলবায়ু, এবং জনস্বাস্থ্য-এই চারটি থীমের ওপর ওপর নতুন ২৮টি গবেষণা পেপার উপস্থাপন করেছেন দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণ।
প্রধান অতিথি হিসেবে দেশবরেণ্য বিজ্ঞানী, পঞ্চব্রীহি ধানের উদ্ভাবক ড. আবেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তিনি সামাজিক গবেষণার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন।
একবার রোপণে একই শস্য থেকে বছরের ভিন্ন মৌসুমে মোট ৫ বার ফলনের কারণে ধানের নাম হয়েছে “পঞ্চব্রীহি”।
তিনি বলেন, বিজ্ঞানটা আমাদের চেতনায় তিরোহিত, আমাদের চেতনায় একদম বিজ্ঞান নাই। আমাদের ডক্টর কুদরত-ই-খুদা, প্রফেসর সালাম ফিজিক্সের কিছুটা পৃষ্ঠাপোষকতা করেছেন।
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও গবেষক এবং বিআইএসআর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. খুরশিদ আলম বলেন, গবেষণায় কিছু প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ পাচ্ছে, আর কিছু প্রতিষ্ঠান একদমই পাচ্ছে না। এমন না যে, তাদের যোগ্যতার অভাব আছে। এক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার দাবি জানান তিনি।
এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি দাবি করেন, গবেষণায় বরাদ্দ কম বা তাঁরা পাচ্ছেন না। এই দাবিটিও যেমন সত্য, তেমন এটাও সত্য যে অনেক উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ অলস পড়ে আছে৷ গবেষকরা গবেষণায় কম আগহী।তাঁদের আগ্রহী করে তোলার জন্যও গবেষণায় বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরিকরণ কাজে আসবে বলে মনে করি, যোগ করেন ড. খুরশিদ।
এছাড়াও রাষ্ট্রীয় দর্শনের ক্ষেত্রে ড. খুরশিদ আলম বলেন, ওয়ান বাংলাদেশ থেকে নাম্বার ওয়ান বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে।
চারটি থীমের সেশনগুলোতে, দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পরিচালনা করেন। তাঁদের সামনেই নতুন প্রজন্মের গবেষকরা তাঁদের পেপার উপস্থাপন করেন।
সম্মেলনে মোট ২৮টি গবেষণা পত্র উপস্থাপিত হয়। ৩০টিরও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা অংশ নেন।
সম্মেলনে বাংলাদেশে জেন্ডার ও সামাজিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। জেন্ডার বিষয়ক সাতটি ও অর্থনীতি বিষয়ে তিনটি গবেষণা উপস্থাপিত হয়। একটি গবেষণাপত্রে বাংলাদেশের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রীড়া-সম্পর্কিত কোর্সে প্রাতিষ্ঠানিক বাধাগুলোর আলোচনা করা হয়। এতে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। অন্য একটি গবেষণায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ছিন্নমূল শিশু ও শিশু শ্রমিকদের মানবেতর অবস্থার উপর আলোকপাত করা হয়। দৌলতদিয়ার পতিতালয়ের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শিশুদের নেতৃত্বে অ্যাডভোকেসি প্রচেষ্টা চালানোর বিষয়ে নতুন উপায় সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও, বিবাহ ও দেনমোহর লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তায় কেন্দ্রীয়ভাবে সব বিন্যাস সম্পন্ন করার মডেল উপস্থাপন করা হয়।
পরিবেশ সেশনে মোট নয়টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়, যা মাইক্রোপ্লাস্টিক, শক্তি সংরক্ষণ সচেতনতা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে পানীয় জলের প্রাপ্যতা, ল্যান্ডফিল সাইটের উপযুক্ততা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর আলোচনা করা হয়।
সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভোক্তা আচরণ এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কিত গবেষণা উপস্থাপন করা হয়েছে। চীনের বিনিয়োগ, ঋণের ফাঁদ সম্পর্কিত একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হয়।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা করে নয়টি পেপার উপস্থাপন করা হয়। একটি গুণগত গবেষণায় কুমিল্লার গার্মেন্ট সেক্টরের মহিলা শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া খুলনা শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞানের মূল্যায়ন করে গবেষণা উপস্থাপিত হয়। আরেকটি গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ ও খাদ্য নিরাপত্তার সংযোগ এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থান অবস্থার সাথে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিশ্লেষণ করা হয়।
সম্মেলন থেকে ঘোষণা আসে বাংলাদেশের গবেষণা বিশ্বদরবারে সেরাদের কাতারে নিয়ে যাওয়ার। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল যমুনা টেলিভিশন।
বিআইএসআর ট্রাস্ট একটি বেসরকারি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংস্থা এবং দেশের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। সামাজিক ন্যায়বিচার, উন্নয়ন, এবং মানবাধিকারসহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের ওপর গবেষণা, প্রচার ও সহায়তায় আমাদের ফোকাস। বিআইএসআর ট্রাস্ট সামাজিক পরিবর্তন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনের মান উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে। আমাদের কাজ গবেষণা পরিচালনা, শিক্ষামূলক সহায়তা প্রদান, এবং নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অ্যাডভোকেসি করা।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D