যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প: কার আনন্দ কার হতাশা!

প্রকাশিত: ১২:১৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প: কার আনন্দ কার হতাশা!

শরীফ শমশির |

কয়েক ঘন্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল যখন কমলা হ্যারিস দুই শতের গোড়ায় এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৬৬ এ এসেছে তখন কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী ক্যাম্পে ঘোষণা করা হলো, ভাইস প্রেসিডেন্ট এখন আর আসবেন না- তখন কয়েক মিনিটের মধ্যে তাঁর নির্বাচনী ক্যাম্প ফাঁকা করে সমর্থকরা চলে যান। তাঁরা হতাশ হয়েছেন কারণ, কমলা নির্বাচনী দৌড়ে ভালোই ছিলেন। তাঁদের আত্মবিশ্বাস ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিবেন। কিন্তু তা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের যে সকল অনিশ্চিত রাজ্য রয়েছে সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে। আর এরই মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী ক্যাম্পে তাঁর সাতচল্লিশতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের বিজয় ঘোষণা করলেন। এই বিজয়ের ভাষা ছিল চিরচেনা ট্রাম্পের মতোই। সমর্থকরা ছিল হর্ষোৎফুল্ল।
তখন শুরু হয়ে গেলো তাঁর বিজয়ের কারণ নিয়ে। এটা সকলেই জানেন বিজয়ীদের কাছে সব ভাষা ধরা দেয়। তাদের সবকিছুই ম্যজিক মনে হয়। ট্রাম্পের বিজয়ও একধরনের ম্যজিক তৈরি করেছে কারণ তাঁর পরিচিতি রগচটা, কর্কশ ও যা বলার যোগ্য নয় তিনি তাও বলেন, সবধরনের অনৈতিক মামলা তার বিরুদ্ধে রয়েছে তবুও তিনি পপুলার।

ডেমোক্র্যাটরা হারলো কেনো? তাদের প্রার্থী কালো নারী বলে? বিশ্লেষকরা বলছেন, না। কমলা নারী ম্যজিক কাজ করবে মনে করেছিলেন কারণ নারী ভোটার বেশী কিন্তু তা কাজ করেনি। বলা হচ্ছে এবারের নির্বাচনের ইস্যু ছিল, দ্রব্যমূল্য বা মূল্যস্ফীতি, ভোটারদের কাছে। এখানে ডেমোক্র্যাটরা ধরা খেয়েছে। এমনকি প্রবীণ নারী বা অভিবাসী নারীদের কাছেও গর্ভপাতের চেয়ে দ্রব্যমূল্য অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তাছাড়া, খ্রীস্টীয় চেতনার নারীদের কাছে গর্ভপাত এখনো দোটানা মনোভাব তৈরি করেছে। তারা তাই ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছেন। অভিবাসীদের কাছেও একারণে ট্রাম্প পছন্দের ছিলেন।

তাছাড়া, ইউক্রেন ও ইজরায়েলের যুদ্ধ মার্কিনীদের টাকার অপচয় হিসেবে ভোটাররা দেখেছেন। ডেমোক্র্যাটরা প্যালেস্টাইনের উপর ইজরায়েলের বর্বর হত্যাকাণ্ডের সমর্থক হিসেবেও তরুণ ভোটাররা বিবেচনা করেছে। ক্যাম্পাসে আন্দোলনের সময় তারা প্লেকার্ড এ লিখেছিল, ভোটের সময় দেখে নিবো। তারা ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছেন।
এছাড়া, এবার গুরুত্বপূর্ণ হলো এলেন মাস্কও ট্রাম্পের পক্ষে ছিলেন। ট্রাম্প বিজয়ের পর তাঁকে পরম বন্ধু হিসেবে প্রশংসা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবার ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছে যার রয়েছে সত্যমিথ্যার একটা মায়াজাল। সেই মায়জালেও ভোটাররা ট্রাম্পকে হিরো বা এন্টিহিরো হিসেবে দেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন একটা গ্লোবাল ইভেন্ট। সারা পৃথিবীর চোখ তাদের দিকে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু বা শত্রু সকলেই এই নির্বাচনে চোখ রেখে ছিল।
ট্রাম্পের জয়ে প্রথম অভিনন্দন জানান ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তারপর বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। নেতানিয়াহু এবং মোদি তাঁকে বন্ধু হিসেবে সম্বোধন করেছেন। ডেমোক্র্যাটরাও জানতো, এঁরা ট্রাম্পের বন্ধু।
বৃটেন গতানুগতিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। রাশিয়া চীন সংযত যদিও এবারও বিদেশিদের বিরুদ্ধে মার্কীন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছে সিআইএ।
তবে জিরেমী করবিন বলেছেন, ট্রাম্পের জয় বিশ্বকে অস্থির ও আরও বর্বর করবে। তিনি এই বিজয়কে বিশ্বের জন্য বিপদজনক মনে করেছেন।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন প্রথম থেকে তেমন কোনো তরঙ্গ তৈরি করে নি। কিন্তু সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে একটা মন্তব্য করার পর সবাই মুখ খুলতে শুরু করে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনের সাথে ডেমোক্র্যাটদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় একটা গুমোট ভাব ছিল। ট্রাম্পের মন্তব্য সে গুমোট ভাব সরিয়ে দেয়। এখন ট্রাম্পের বিজয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি প্রতিদিনকার মন্তব্যে ভাটা পড়তে পারে, আবার নাও হতে পারে। অভিজ্ঞজনরা জানেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি তেমন পরিবর্তন হয় না কিন্তু রকমফের তো আছে। ডেমোক্র্যাটরা সারা পৃথিবীতে যত যুদ্ধ ছড়িয়েছে রিপাবলিকানরা তাতে কিছুটা পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশ বা তার সমুদ্রসীমা যুদ্ধের দামামা থেকে কিছুটা বিরতিতে থাকতে পারে ট্রাম্পের ক্ষমতা আরোহন পর্যন্ত।
বাংলাদেশের মানুষের আজ মার্কীনিদের মতো দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি বা মূলস্ফীতিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। সামনে কোনো নির্বাচন হয়তো তাদের সুযোগ দিবে মূল্যস্ফীতির আগুন থেকে মুক্তির কোনো উপায় খুঁজে নিতে। ট্রাম্প কার আনন্দ বা কার হতাশার কারণ হবে তারজন্য ভবিষ্যৎ বক্তা হওয়ার প্রয়োজন নেই।

#
শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ