স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে মোবাইল অপারেটররা

প্রকাশিত: ৬:০৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৪

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে মোবাইল অপারেটররা

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৮ নভেম্বর ২০২৪ : মোবাইল ফোন অপারেটর ও অন্যান্য অংশিজনরা স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের তদ্বার উন্মোচনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং দেশের টেলিযোগাযোগ দৃশ্যপটে এই পরিষেবাটির সফল সংহতকরণের জন্য টেলিকম নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতামূলক পদ্ধতি ও বৈষম্যহীন আচরণ বিবেচনা করার আবেদন করেছে।

তারা বলেছে যে এই উদ্যোগটি টেলিযোগাযোগ নেটোয়ার্ক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহকের ডেটা ব্যবহারের পাশাপাশি ডিজিটাল বিভাজন হ্রাসের নতুন সুযোগ এনে দিতে পারে।
তবে অপারেটর ও অংশীজনরা নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসের সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়নের জন্য এর খসড়া নির্দেশনাগুলো সাবধানতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছে। কারণ এটি ইলন মাস্কের স্টারলিংক ও অনুরূপ সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর বাংলাদেশে প্রবেশের পথ খুলে দিতে পারে।

টেলিকম নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ২৯ অক্টোবর এনজিএসও স্যাটেলাইট পরিষেবা অপারেটরের জন্য খসড়া নিয়ন্ত্রণ ও লাইসেন্সিং নির্দেশনা ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। নির্দেশিকা চূড়ান্ত করতে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আলাপকালে রবি আজিয়াটার চিফ কর্পোরেট ও নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শাহেদ আলম বলেন, আমরা আমাদের দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এটি ডেটা পরিষেবায় বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয়।

তিনি উল্লেখ করেন, এই অগ্রগতি ব্যাকহোলিং, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহক ডেটা ব্যবহারের মতো ক্ষেত্রে নতুন সুযোগের পথ প্রশস্ত করতে পারে।

শাহেদ আলম প্রস্তাবিত নির্দেশিকা ও এই ধরনের পরিষেবাগুলো বাস্তবায়নে বিদ্যমান ইকোসিস্টেম সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সেগুলো অবাস্তব প্রমাণিত হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের টেলিকমিউনিকেশন ল্যান্ডস্কেপে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সফল একীকরণ নিশ্চিত করতে একটি সহযোগিতামূলক পদ্ধতি অপরিহার্য।

বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, এই নতুন পরিষেবা চালু করার আগে নিয়ন্ত্রকদের জনসাধারণের পরামর্শ নেওয়ার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়, যা আমরাও এর প্রশংসা করি। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে এই প্রক্রিয়াটি এর ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা তৈরি করতে সহায়ক হবে।

তাইমুর রহমান বলেন, যেহেতু এই পরিষেবাটি বাংলাদেশে নতুন, তারা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে টেলিযোগাযোগ খাত এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) ওপর এর প্রভাব মূল্যায়নের জন্য বিটিআরসি’র নির্দেশিকাগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করছে। একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়নের পর আমরা আমাদের প্রতিক্রিয়া বিটিআরসি’তে জমা দেব। এক্ষেত্রে ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের সমস্ত অংশীজনদের স্বার্থ বিবেচনা করা অত্যাবশ্যক।

গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশন্স শরফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, গ্রামীণফোন মানুষের জীবন, সমাজ, অর্থনীতি ও সামগ্রিকভাবে দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে এমন যে কোনো নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানায়।

তবে, যে কোনো নতুন লাইসেন্স প্রবর্তনের ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন আচরণ নিশ্চিত করা উচিত যাতে এটি পুরো মূল্য শৃঙ্খল জুড়ে বিদ্যমানসহ সমস্ত প্রতিযোগীদের মধ্যে বাজারে প্রতিযোগিতা উৎসাহিত করে।

শরফুদ্দিন উল্লেখ করেন, নতুন প্রযুক্তির সমস্ত দিক সুরক্ষার প্রভাবগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন এবং এই উদ্বেগগুলো নিরসনে লাইসেন্সিং বাধ্যবাধকতায় প্রয়োজনীয় বিধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।

পরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য বিটিআরসি’র প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে খসড়া নির্দেশিকা পর্যালোচনা করছি এবং বিটিআরসিকে জবাব দেব।
গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবা প্রদানে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর প্ল্যাটফর্ম ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) যে কোনো নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। এটিতে যাওয়ার আগে প্রথমে এই প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করার ওপর জোর দেয়।

আইএসপিএবি সভাপতি মো. এমদাদুল হক বলেন, দেশ ও শিল্পের জন্য উপযুক্ত হলে আমরা সবসময় নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাই। নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, তবে প্রযুক্তিটি দেশ ও এর জনগণের জন্য উপযোগী কিনা তা আগে বিবেচনা করা উচিত।

আইএসপিএবি সভাপতি টেলিকমকে নতুন পরিষেবাতে যাওয়ার আগে অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা বলেন কারণ বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশের বাইরে অর্থ নিয়ে যাবে।

খসড়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীনে ‘রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস’-এর অধীনে নিবন্ধিত মালিকানা, অংশীদারিত্ব ও কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে এনজিএসও স্যাটেলাইট সিস্টেম ও সার্ভিস নির্মাণ, মালিকানা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে ১০০ শতাংশ এফডিআই বা বিদেশি অংশীদারিত্ব বা যৌথ উদ্যোগ বা অনাবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) থেকে বিনিয়োগ এনজিএসও স্যাটেলাইট সিস্টেম ও পরিষেবাগুলো নির্মাণ, মালিকানাধীন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য অনুমোদিত। খসড়া নির্দেশিকা অনুযায়ী লাইসেন্সের মেয়াদ থাকবে পাঁচ বছর।
এটি যোগ করে যে লাইসেন্সধারী নিম্নলিখিত এনজিএসও স্যাটেলাইট পরিষেবাগুলো প্রদানের জন্য অনুমোদিত: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা, ইন্ট্রানেট পরিষেবা (দেশীয় ডেটা যোগাযোগ), ইন্টারনেট অব থিংস ও মেশিন-টু মেশিন যোগাযোগ, গতি পরিষেবায় আর্থ স্টেশন, আর্থ এক্সপ্লোরেশন স্যাটেলাইট পরিষেবা, রিমোট সেন্সিং/আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিষেবা ও বিটিআরসি দ্বারা অনুমোদিত অন্য কোনো পরিষেবা।

অপারেটররা ডাইরেক্ট-টু-হোম পরিষেবা, সম্প্রচার পরিষেবা, স্যাটেলাইট আইএমটি-ভিত্তিক পরিষেবা বা টেলিযোগাযোগ পরিষেবা প্রদানের জন্য অনুমোদিত নয়।

আবেদন/প্রসেসিং ফি ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার একটি অধিগ্রহণ ফি ১০,০০০ ডলার এবং বার্ষিক ৫০,০০০ ডলার ফি। টার্মিনাল প্রতি একটি বার্ষিক স্টেশন/টার্মিনাল ফি ২০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া লাইসেন্সধারীকে তার বার্ষিক নিরীক্ষিত মোট রাজস্বের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বিটিআরসির সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে। মোট রাজস্বের আরও ১ শতাংশ ‘মহাকাশ শিল্পের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় অবদান’ এর অংশ হিসাবে প্রদান করতে হবে।

লাইসেন্সধারীকে অবশ্যই সেবা শুরু করার আগে বাংলাদেশের মধ্যে অন্তত একটি গেটওয়ে সিস্টেম স্থাপন করতে হবে। তবে বিটিআরসি লাইসেন্সধারীদের অতিরিক্ত গেটওয়ে স্থাপনে উৎসাহিত করেছে।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে স্থাপন করা যেকোনো ব্যবহারকারীর টার্মিনাল অবশ্যই এই স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে প্রমাণীকৃত ও পরিবেশিত হতে হবে। খসড়া অনুযায়ী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিষেবার জন্য এই টার্মিনালগুলো থেকে সমস্ত ট্র্যাফিক অবশ্যই এই স্থানীয় গেটওয়ে দিয়ে যেতে হবে।

এনজিএসও গেটওয়ে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ডাটা ট্রাফিক পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ