ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোহাম্মদ ইলিয়াসের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২৪

ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোহাম্মদ ইলিয়াসের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Manual8 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ২১ নভেম্বর ২০২৪: আজ ২১ নভেম্বর ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (ইপসু)’র প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক, ভাষা সৈনিক, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক কমিটির সদস্য, ‘৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক এমপি ও এমএলএ জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী।

মহান ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাসের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার, সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত করার আহবান নিয়ে ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিলে গড়ে উঠা তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (ইপসু)’র প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণ, মৌলভীবাজার জেলা তথা সিলেট বিভাগের গর্ব, কীর্তিমান পুরুষ
জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের মৃত্যুবার্ষিকীতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবে।

১৯৮৭ সালের ২১ নভেম্বর কিংবদন্তিতুল্য এই মহান নেতা ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন।

Manual8 Ad Code

সাবেক সংসদ সদস্য জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস ছিলেন ‘৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর প্রতিষ্ঠাকালীন প্রাদেশিক কমিটির সদস্য,
‘৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক। সকল লোভ লালসার উর্ধে অবস্থানকারী জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের আদর্শেই শ্রীমঙ্গলে গড়ে উঠেছিল আ‘লীগের রাজনৈতিক পরিবেশ ও বলয়। গণ মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস ১৯২৯ সালের ১ অক্টোবর কমলগঞ্জ উপজেলার কুশালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি ৫৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

শ্রীমঙ্গলের শ্যামল মাটিতে অন্তিম শয্যায় শায়িত মোহাম্মদ ইলিয়াস ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক ত্যাগী ও সংগ্রামী নেতা। অফুরন্ত মমত্ববোধ আর স্নেহ মমতার ভান্ডার উজাড় করে বিলিয়ে দিয়ে তিনি এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভালবাসার যে উদাহরণ ও প্রিয় প্রাঙ্গন গড়ে তুলেছিলেন, তা কোন দিন বিলিন হওয়ার নয়। তার কথা এখনো মানুষের মুখে মুখে। এখনো মানুষ স্মরণ করে। বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনের নেতৃত্বের শীর্ষে যারা অবস্থান করছেন তাদের অনেকেই মোহাম্মদ ইলিয়াসের সে ভালবাসার প্রাঙ্গন থেকে উঠে এসেছেন।
জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস তৎকালীন বেঙ্গল মেডিকেল সার্ভিসের সদস্য খান বাহাদুর ডাঃ বজলুল হাসানের ভ্রাতুষ্পুত্র। তাঁর বাবার নাম মৌলভী মোহাম্মদ তাহির ও মাতার নাম মোছাঃ জুবায়দা খাতুন। তার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের বাড়ি কুশালপুরে এবং ভারত বিভাগের পূর্বে তিনি মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে (৪র্থ) প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতপর ঢাকা কলেজ থেকে তিনি প্রথম বিভাগে (৯ম) স্থান অধিকার করে আইএসসি পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর গোল্ড মেডেল পেয়ে এমএসসি পাশ করেন।

জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস ১৯৪৮ সালে রাজনীতিতে যোগদান করেন। ক্ষমতার রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে শোষণমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিপ্লবী সংগ্রামের প্রতিবাদের বিপদসংকুল পথে তাকে পা বাড়াতে হয়েছিল। বাংলা ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক হিসেবে এবং তৎকালীন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে এদেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতিতে তার অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস ১৯৬৭ সালে শ্রীমঙ্গলে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। তিনি দেশ স্বাধীনের পূর্বে ১৯৬৯ সালে পাকিস্থান আমলে প্রথম এমএলএ নির্বাচিত হন। ১৯৭০-এর নির্বাচনের পূর্বে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে আওয়ামীলীগে যোগদান করে ৭০‘এর সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হন। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন ও মৃত্যর পূর্ব পযর্ন্ত তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি চার বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

Manual2 Ad Code

বলা যায় বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের প্রতিষ্ঠাতা সংসদ সদস্য ছিলেন জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় তার নির্দেশে এই এলাকায় গড়ে ওঠে প্রবল ছাত্র আন্দোলন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে মোহাম্মদ ইলিয়াস আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, তার নেতৃত্ব আর সাংগঠনিক প্রতিভার গুণে মৌলভীবাজার জেলা আ‘লীগের নেতৃত্ব ও দায়িত্ব তার হাতে চলে আসে। এক কথায় শ্রীমঙ্গল তথা মৌলভীবাজার জেলায় ঝিমিয়ে পড়া আ‘লীগের রাজনীতিতে প্রবল গতি সঞ্চার হয়।

রাজনৈতিক জীবনে তিনি এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় আদর্শ ও সৎ মানুষ ছিলেন। মৃত্যকালে তিনি ৬ মেয়ে ১ পুত্র সন্তান রেখে যান।

‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (ইপসু)’র প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক, ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এমপি জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, ”বিদ্যমান শোষণমূলক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য যে রাজনীতি তিনি শুরু করেছিলেন, সেই ধারাকে এগিয়ে নিতে তাঁকে অনুসরণ করা ছাড়া আমাদের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই।”

Manual8 Ad Code

জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করবে।

 

Manual2 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code