সিলেট ২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ : সুন্দরবন দিবস আজ। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হলেও সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলের মানুষরা দিনটিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে পালন করেন। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে খুলনাসহ উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুই দশক ধরে দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষায় নাগরিক জোট-সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশন বলছে, ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়।
সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বন। জীববৈচিত্রের প্রাচুর্যের জন্য ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আর ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হওয়ায় সুন্দরবন এখন দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এক ভ্রমণকেন্দ্র।
বন বিভাগ বলছে, বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে অনুপম অদ্বিতীয় সুন্দরবন গড়ে ওঠেছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে। বৈজ্ঞানিক, নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিবেচনায় সুন্দরবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বনের মোট আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগই হচ্ছে জলাভূমি। বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনের তুলনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য অধিকতর সমৃদ্ধ। এই বনে সুন্দরীসহ রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড। বাঘ, হরিণ, কুমির, কিং কোবারা, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণি ও ২১০ প্রজাতির মৎস্য সম্পদ। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই জনপদ এখানো টিকে আছে শুধু সুন্দরবনের আশ্রয়ে। দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। সুন্দরবন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি-জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। এ বনের অপরূপ সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দেয়। তবে সুন্দরবন এখন অস্তিত্ব সংকটে। কিছু মানুষের লোভ-লালসা আর অপকর্মের শিকার হচ্ছে বননির্ভরশীল মানুষ ও গোটা বনের জীববৈচিত্র্য।
বন বিভাগ বলছে, একসময় এ বনে বাস করতো ৪০০ প্রজাতির পাখি। যা কমতে কমতে এখন ২৭০ প্রজাতিতে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে সাগর-নদীর পানির উচ্চতা ও লবণাক্ততা। কমে যাচ্ছে সুন্দরবনের কম লবণসহিষ্ণু সুন্দরীসহ অন্যান্য গাছ, কমছে বন্যপ্রাণির বিচরণ ক্ষেত্রও। একশ্রেণির জেলে সুন্দরবনের নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ করায় হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবনের মৎস্যভান্ডার। একইভাবে হত্যা করা হচ্ছে বাঘ, হরিণ, শূকরসহ অন্যান্য প্রাণি। সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও পূর্ণিমা ও অমাবস্যার জোয়ারে বনের অনেক উঁচু এলাকা তলিয়ে পানিতে নষ্ট হচ্ছে বন্যপ্রাণির ডিম। এতে ব্যাহত হচ্ছে বন্যপ্রাণির বংশবিস্তার। উজান থেকে মিঠা পানির প্রবাহ না থাকায় মিঠা পানির স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে বনে।
উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ও সংবাদিক শুভ্র শচীন বলেন, ‘সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশ। সুন্দরবন মায়ের মতোই প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে আমাদের রক্ষা করে। যারা বুঝে বা না বুঝে এ বনের ক্ষতি সাধন করে আসছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। কারণ, এর টিকে থাকার ওপর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সমৃদ্ধি অনেকাংশেই নির্ভরশীল।’
সাংবাদিক শুভ্র শচীন বলেন, ২৪ ঘণ্টায় ছয় বার প্রাকৃতিক রূপ বদলানো নয়নাভিরাম এ বনের মোট আয়তনের ৫২ ভাগই এখন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ। সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি রক্ষায় সুন্দরবন ওপর থেকে পর্যটকদের চাপ কমানো পাশাপাশি বনের আশপাশে শিল্প কারখানা নির্মাণ বন্ধ করা। অভয়ারণ্য এলাকায় বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী চোরাশিকারি, জলবায়ুর পরিবর্তনে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি রোধ, বনজীবিদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং বন্যপ্রাণি, শিকারি, কাঠপাচারকারী ও বনে আগুন দেয়া দমন প্রয়োজন।
খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, সুন্দরবন প্রকৃতিগতভাবেই সৃষ্টি এবং প্রকৃতিই এর রক্ষক। তারপরও এ বন ও এর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি অনেক প্রকল্পও বাস্তবায়ন হচ্ছে। সব মিলিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালো রয়েছে সুন্দরবন।
সুন্দরবন রক্ষার ডাক নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য সুন্দরবন দিবসে মোংলায় দিনব্যাপী কর্মসূচি-
“সুন্দরবন আমার মা, ধ্বংস হতে দেবো না” এই শ্লোগানকে ধারণ করে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সুন্দরবন রক্ষায় আমরা, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার এবং স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনসমূহের এর যৌথ আয়োজনে আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে মোংলায় দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে রয়েছে:
– সকাল ৯ টায় উপজেলা অডিটোরিয়ামে ”সুন্দরী শ্যামলিমা সুন্দরবন” শীর্ষক শিশু চিত্রাংকণ ও ”মহাপ্রাণ সুন্দরবন” শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতা।
– সকাল ১১ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর হতে পৌরসভা চত্বর পর্যন্ত ”বাঁচাও সুন্দরবন” শীর্ষক বর্ণাঢ্য র্যালি।
– বিকাল ৩ টায় পৌর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ”বাঘের বাচ্চা” শীর্ষক বাঘ মহড়া।
– বিকাল ৪ টায় পৌর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ”পরাণের সুন্দরবন” শীর্ষক আলোচনা সভা এবং
– সন্ধ্যা ৬ টায় ”সুন্দরবনের জন্য গান” শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক মো. নূর আলম শেখ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ধরা’র কেন্দ্রিয় সদস্য সচিব শরীফ জামিল।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D