পোস্ট অফিসের এক পরিদর্শকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ: এটি দেখার যেন কেউ নেই

প্রকাশিত: ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৫

পোস্ট অফিসের এক পরিদর্শকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ: এটি দেখার যেন কেউ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক | লক্ষ্মীপুর, ১৫ মে ২০২৫ : পোস্ট অফিসের এক পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি আর নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর তদন্ত প্রতিবেদনেও এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ডাক বিভাগের সংশ্লিষ্ট উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের আদেশ জারি হলেও তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্টেও এসব প্রকাশিত হলেও শেষ পর্যন্ত রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন কীভাবে? তাই এলাকায় অনেকের মন্তব্য, ‘এরপরও এটি দেখার যেন কেউ নেই।’

নোয়াখালী ও লক্ষীপুর এর পোস্ট অফিসের এ পরিদর্শকের নাম আব্দুর রহমান। চাকরির বেশির ভাগ সময় এই অঞ্চলে কর্মরত রয়েছেন। জানা যায়, তিনি বিভিন্ন মেয়াদে ১৭-১৮ যাবৎ একই জায়গায় পোস্ট অফিস পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। মাঝে মধ্যে এই অঞ্চল থেকে বদলী হলেও বিভিন্ন কৌশলে পূনরায় আবার এই জায়গায় চলে আসেন। এই কর্মস্থলে আসার বা থাকার কারন কি? তা কেউ জানে না। বিগত ৬- ৭ বছর বছর এখানে একনাগাড়ে কর্তব্য পালন করে আসছেন। ৪ মাস পূর্বে বদলির আদেশ হলেও তার বিভিন্ন কৌশলের এই আদেশ স্থগিত করেন ডিপার্টমেন্ট। একই স্থানে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে গরীব অসহায় মানুষের টাকা।
এমন অভিযোগ প্রায় সময় পাওয়া যায়। এর মধ্যে মকবুল চৌধুরীর হাট কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল একজন। বাংলাদেশ ডাকঘর বিভাগের মহাপরিচালক বরাবরে একটি দরখাস্ত করেন তিনি।

ইব্রাহীম খলিল ওই দরখাস্তে উল্লেখ করেন যে, এই আব্দুর রহমান পোস্ট মাস্টার পদে পুনরায় বহাল করবেন ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে। তবে তার কথামত ৪০ হাজার টাকা দেন এবং বাকি ১০ হাজার টাকা চাকরি হলে দিবেন বলে সম্মত হন। বিগত ২০২৩ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি তারিখে নতুন ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করেন এবং ইব্রাহিম খলিল পরীক্ষা দেন কিন্তু এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে আরেক জনের চাকুরী হয় কিন্তু ইব্রাহিম খলিলের চাকুরি হয়নি। তখন ৪০ হাজার টাকা ফিরত চাইলেও এখন পর্যন্ত টাকাটা দেয়নি। এরজন্য ইব্রাহিম খলিল ডাকবিভাগের মহাপরিচালক বরাবরে এই অভিযোগ করেন এবং এর অনুলিপি চট্টগ্রামের পোস্ট মাস্টার জেনারেল, দুদকের হেডঅফিস সহ নোয়াখালীর ডিপিএমজি, দুদক অফিস,জেলা প্রশাসক ও নোয়াখালী প্রেসক্লাব বরাবরে ডাকযোগে প্রেরণ করেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন প্রতিউত্তর কারোর কাছ থেকে পাওয়া যায় নি।

পোস্ট অফিসের বিভিন্ন কর্মচারীরা প্রশ্ন তুলেছেন কিসের ভিত্তিতে আবদুর রহমানকে একই জায়গায় নিয়োগ দিয়ে রাখছেন, কেনইবা তাকে একই জায়গায় বছরকে বছর রেখেছেন, কার স্বার্থ হাসিল করার জন্য উনাকে রেখেছেন এতো সব অভিযোগ উঠার পরেও। তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপও নিচ্ছে না, তার কারনও কারো জানা নেই।
অনেকে সন্দেহ করতেছেন এই দূর্নীতিবাজের ঘোষ থেকে প্রাপ্ত অর্থের ভাগকি উনারাও পায়, তা না হলে কেন আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে কোন প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ভুক্তভোগী সহ মানুষের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কে দিবে।

বিগত ২০২০ সালের ০৫ ই অক্টোবর তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কার্যালয়, পূর্বাঞ্চল, চট্টগ্রাম ৪১০০ থেকে আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৯টি অভিযোগ আনা হয় যার নথি নং – কর্ম-এ/এ/-৮৪/ পরিদর্শক/ লুজ। তারও পরিপেক্ষিতে বিগত ২০২৩ সালের ০৩ ই অক্টোবর তারিখে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কার্যালয়, পূর্বাঞ্চল, চট্টগ্রাম ৪১০০ থেকে একটি আদেশ প্রদান করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, যেহেতু জনাব আব্দুর রহমান, ডাকঘর পরিদর্শক, উপকূলীয় উপ- বিভাগ অতিরিক্ত দায়িত্বে ডাকঘর পরিদর্শক লক্ষীপুর উপ বিভাগ, নোয়াখালী এর বিরুদ্ধে গত ১৮ ই মে ২০০৮ থেকে ০৭ই জুন ২০১০ পর্যন্ত এবং গত ০৭ ই সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখ হইতে ১২ ই ফেব্রুয়ারী ২০১৪ তারিখ পর্যন্ত ডাকঘর পরিদর্শক, রামগঞ্জ উপবিভাগ হিসেবে কর্মরত থাকাকালিন সময়ে বিভিন্ন তারিখে রামগঞ্জ উপবিভাগের অধীনে খিলপাড়া সাব- অফিসে নির্ধারিত পরির্দশন / ভেরিফিকেশন কালে নির্ধারিত প্রশ্নমালা অনুযায়ী পরির্দশন কার্যক্রম সম্পন্ন না করা, উক্ত সময়ে লেনদেন করতে আসা, গ্রাহক হইতে সংগৃহীত ১০টি পাশ বইয়ের স্হিতি যাচাই না করা, পাশ বই যাচাইকল্পে এসবি ৪৬ ইস্যু না করা এবং সময়মত পরির্দন প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার মাধ্যমে উক্ত সাব-অফিসে অর্থ আত্মসাতর সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার দায়ে সরকারি কর্মচারি ( শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধি মালা ২০১৮ এর ৩(ক) ও (খ) বিধি মতাবেক অদক্ষতা ও অসদাচরণের অভিযোগ আনয়ন করে একই বিধি মালার ৪(৩) (খ) ও ৪(২)(গ) বিধি অনুযায়ী বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান ও সরকারি অর্থিক ক্ষতির যৌক্তিক অংশে বেতন বা আনুতোধিক হতে আদায়করন দন্ড প্রস্তাব করে গত ০৫ ই অক্টোবর ২০২০ তারিখে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরনী জারি করা হয়; যার পেক্ষিতে, কর্মচারী গত ৫ ই নভেম্বর ২০২০ তারিখে জবাব অত্র দপ্তরে প্রেরণ করা হয় এবং যেহেতু তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ১০ ই ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে প্রথমে মোহাম্মদ তৈয়ব আলী (ডিপিএমজি তদন্ত) চট্টগ্রাম এবং পরবর্তীতে গত ৮ ই এপ্রিল ২০২১ তারিখে জনাব মো: মনজুরুল আলম (ডিপিএমজি কুমিল্লা) তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়; যার পেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা বিস্তারিত তদন্ত শেষে গত ১২ ই জুলাই ২০২৩ তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং যেহেতু আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে জারিকৃত অভিযোগ নামা, অভিযোগ বিবরণী তার আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক জবাব, তদন্তকারি কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ড পত্র যাচাই করে তার বিরুদ্ধে আনীত অদক্ষতা ও অসদাচরণ এর অভিযোগ আংশিক প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দোষী সাবস্ত করা হয়। তবে তার সুদীর্ঘ চাকরি কাল তদন্তকারী কর্মকর্তার মতামত ও বর্তমান আর্ত সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে তার প্রস্তাবিত শাস্তির পরিবর্তে বেতন বৃদ্ধির স্থগিত করন দন্ড প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং ৩ মাসের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত দন্ড প্রদান করা হল।
তার এই অপরাধের পরিপেক্ষিতে যে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তা শুধু শাস্তি নয় তা একটা দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে উৎসাহ প্রদানের সামিল। এই শাস্তির কারনে দুর্নীতিবাজরা তো ভয় পাবেই না বরং তারা চিন্তা করবে অপরাধ করে বিভিন্ন কৌশলে পূনরায় আবার অপরাধে লিপ্ত হবে।

আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রদান কার্যালয় থেকে বিভাগীয় ব্যবস্হা গ্রহণের জন্য চিঠি দোওয়া হয় যার সারক নং ০০.০১.০০০০.৬০৪.১২.০০১.২৪.২
এই বিষয় টি নিয়ে আবদুর রহমান কে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন আমি এতে জড়িত নই এটা মিথ্যা আমাকে ফাঁসাতে কেউ আমার বিরুদ্ধে এই গুলো চালাচ্ছে।
পিএমজি সালেহ আহমেদকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, পুরো নোয়াখালী সকল কে বদলী করে দেওয়া হবে। আর আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
ডাক বিভাগের কাছে সাধারণ জনগণ জানতে চায় এই আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে আর কত দিন নিরবতা পালন করবে আর এই চিন্হিত দুর্নীতিবাজ থেকে কবে ডাক বিভাগ মুক্ত হবে। তার দুর্নীতি ঠেকাতে তাকে প্রতিরোধ করার জন্য কেউ কি নেই।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ