শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আর নেই

প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২৫

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আর নেই

Manual4 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১০ অক্টোবর ২০২৫ : দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর ২০২৫) বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

গত ৩ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষার পর তাঁর হার্টে দুটি রিং পরানো হয়। কিছুটা উন্নতি হলেও পরবর্তী সময়ে আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। আজ বিকেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

Manual5 Ad Code

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শনিবার সকাল ১১টায় তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে তাঁকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে।

সাহিত্য ও একাডেমিয়ার উজ্জ্বল নক্ষত্র

Manual3 Ad Code

প্রফেসর সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যয়ন ও গবেষণায় এক অগ্রগণ্য নাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানোন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। অবসরের পর তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও মানবিক বিভাগেও অধ্যাপনা করেন।

তিনি শুধু শিক্ষক নন, ছিলেন একাধারে কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও শিল্প সমালোচক।
তাঁর লেখায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা, রাজনৈতিক চেতনা, শহুরে জীবনের বৈপরীত্য এবং মানুষের আত্মসংগ্রামের কাহিনি।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ১৯৫১ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
শৈশব ও কৈশোর কাটে সিলেট ও চট্টগ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে শিক্ষকতা শুরু করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে তিনি চার দশকেরও বেশি সময় কাটান। এ সময় তিনি বিভাগীয় সভাপতি ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

সাহিত্যকীর্তি ও পুরস্কার

বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় লেখালেখিতে তিনি সমান দক্ষ ছিলেন।
তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস ও প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—

গল্পগ্রন্থ: দরজার ওপারে, ছায়া, কোনো একদিন হয়তো, রাতের যাত্রী।

উপন্যাস: অন্ধকারের গান, তৃতীয় পুরুষ, সেই তোমার ঠিকানা।

প্রবন্ধগ্রন্থ: সাহিত্যের সমাজতত্ত্ব, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও রাজনীতি, লেখকের স্বাধীনতা।

তাঁর রচনাগুলোতে বাস্তবতা, ইতিহাস, রাজনীতি, প্রেম ও মানবিকতার মেলবন্ধন পাওয়া যায়।
বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৬), প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার (২০০৫), কাগজ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৬) সহ একাধিক সম্মাননায় ভূষিত হন।

Manual8 Ad Code

সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভূমিকা

Manual7 Ad Code

শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক নানা ফোরামে তিনি ছিলেন সক্রিয়।
তিনি Centre for Policy Dialogue (CPD)–এর বোর্ড সদস্য ছিলেন। সংস্থাটি তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছে—
“CPD has lost a guardian and leader who steered the organisation with his wisdom and progressive insights.”

তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখতেন, যেখানে শিক্ষা, তরুণ প্রজন্ম, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক চেতনা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করতেন।

বিভিন্ন মহলের শোক

ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কমরেড নূর আহমেদ বকুল শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের সমবেদনা জানিয়েছেন।

কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামানের শোক

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, ইংরেজি দৈনিক দ্য ফিনান্সিয়াল পোস্ট ও সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান। তিনি বলেন,
“সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন এমন এক শিক্ষক, যিনি শুধু পাঠদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তিনি ছাত্রদের মধ্যে চিন্তার আলো জ্বালিয়েছিলেন।”

এ ছাড়া সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুরারিচাঁদ কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান সম্মান ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা হাজেরা সুলতানা (শানজিদা) ও শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের গণিত সম্মান (৩য়) শিক্ষার্থী ও সাবেক ইয়েস দলনেতা সৈয়দ আরমান জামি শোক প্রকাশ করে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

শেষ বিদায়

সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির এই আলোকবর্তিকা চলে গেলেন চিরবিদায় নিয়ে।
তাঁর রেখে যাওয়া অসংখ্য ছাত্র, পাঠক ও অনুরাগী আজ শোকাভিভূত।
বাংলা সাহিত্য ও উচ্চশিক্ষার জগতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ