শহীদ নূর হোসেনের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২৫

শহীদ নূর হোসেনের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Manual5 Ad Code
গণতন্ত্রের শহীদের স্মরণে নানা কর্মসূচি

রাজনৈতিক প্রতিবেদক | ঢাকা, ১০ নভেম্বর ২০২৫ : আজ ১০ নভেম্বর। শহীদ নূর হোসেন দিবস।
বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে এই দিনটি এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।
১৯৮৭ সালের এই দিনে রাজধানীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় তৎকালীন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন তরুণ শ্রমিক ও গণতন্ত্রকামী যুবক নূর হোসেন।

তার বুক ও পিঠে খালি গায়ে লেখা ছিল—
“গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক।”
এই বার্তাই পরিণত হয়েছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতীকে।

গণআন্দোলনের গতি সঞ্চার

১৯৮৭ সালের শেষভাগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চলছিল তিন জোটের যৌথ আন্দোলন—
কমরেড রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ৫ দলীয় বাম জোট, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট,
ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট।
তিন জোট একযোগে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নামে। রাজধানীর জিরো পয়েন্টে (বর্তমান শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার) সেই আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন নূর হোসেন। সেখানেই পুলিশের গুলিতে তিনি শহীদ হন।

তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই তৎকালীন স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন আরও তীব্র হয়।
১৯৮৭ সালের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের মহান গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

Manual6 Ad Code

এক প্রতিবাদী শরীরের প্রতীক

নূর হোসেনের জন্ম ১৯৬১ সালে বরিশালে। জীবিকার টানে তার পরিবার ঢাকায় আসে এবং পুরনো ঢাকার বনগ্রামে স্থায়ী হয়।
তার বাবা মজিবুর রহমান ছিলেন বেবিট্যাক্সি চালক, মা মরিয়ম বেগম গৃহিণী।
নূর হোসেন নিজেও ছিলেন এক পরিবহন শ্রমিক।
জিন্স প্যান্ট, কোমরে বাঁধা শার্ট, পায়ে কেডস, আর খালি গায়ে স্লোগান লেখা— এই অবয়বই হয়ে ওঠে প্রতিবাদের প্রতীক।

গণতন্ত্রের জন্য আত্মত্যাগের সেই দৃশ্য আজও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে etched হয়ে আছে।
বলা হয়ে থাকে, তার পুরো শরীরটাই সেদিন এক প্রতিবাদী পোস্টার ছিল।

Manual1 Ad Code

নৃশংস হত্যাকাণ্ড

সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলিবিদ্ধ নূর হোসেনকে যখন এক যুবক রিকশায় করে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখন পুলিশ তাকে থামিয়ে নূর হোসেনকে নিজের গাড়িতে তুলে নেয়।
রক্তাক্ত অবস্থায়ও নূর হোসেনের বুকের উপর পা রেখে পুলিশ সদস্যরা নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে।
এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড গোটা দেশে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

স্মরণে নানা আয়োজন

Manual6 Ad Code

শহীদ নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকার নামকরণ করা হয় ‘শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার’, আর ১০ নভেম্বরকে ঘোষণা করা হয় ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’ হিসেবে।

দিবসটি উপলক্ষে আজ বিএনপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সিপিবি, জেএসডি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, শহীদ নূর হোসেন সংসদ, ছাত্রমৈত্রী, যুবমৈত্রী, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মোটরচালক লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন রাজধানীর গুলিস্তানে শহীদ নূর হোসেন স্কয়ারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে।

শহীদ নূর হোসেনের উত্তরাধিকার

স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে শহীদ নূর হোসেন শুধু একজন শহীদ নন, তিনি গণতন্ত্র ও প্রতিবাদের প্রতীক। তার রক্তে সিক্ত হয়েছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের মাটি।
তার বুক ও পিঠের স্লোগান আজও মুক্ত চিন্তা, ন্যায়বিচার ও গণঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যোগায়।

শ্রদ্ধা ও স্মৃতিচারণ

শহীদ নূর হোসেনের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘৮৩ থেকে গড়ে ওঠা ছাত্র গণআন্দোলন’ ও ‘৯০-এর মহান গণ-অভ্যুত্থানের’ সংগঠক, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং আরপি নিউজের সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান আজ এক বিবৃতিতে শহীদ নূর হোসেনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

Manual8 Ad Code

তিনি বলেন, “নূর হোসেনের আত্মত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—গণতন্ত্র অর্জন একটি চলমান সংগ্রাম। অন্যায়, দুঃশাসন ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনা জাগ্রত রাখতে হবে প্রতিটি প্রজন্মের মধ্যে।”

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ