সিলেট ১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২৫
বিশেষ প্রতিনিধি | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ১০ নভেম্বর ২০২৫ : মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল শহর যেন আজ এক বিশাল ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে। কলেজ রোড এলাকার তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে দীর্ঘদিন ধরে থাকা পৌরসভার ময়লার ভাগাড় স্থানান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ভাগাড়টি বন্ধ হয়ে গেলে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ময়লার স্তুপ দেখা যাচ্ছে।
গতকাল রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে কলেজ রোডস্থ ময়লার ভাগাড়ের সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশের দাবিতে প্রতিবাদ জানায়। পরে তারা ভাগাড়ের চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে গেট তালাবদ্ধ করে ঘোষণা দেয়— “এখানে আর কখনও ময়লা ফেলা যাবে না।”
দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা
কলেজ রোড এলাকার তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দি বাডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রায় ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী প্রতিদিন যাতায়াত করে। বছরজুড়ে এই এলাকায় ময়লার স্তূপ থেকে নির্গত দুর্গন্ধ ও ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, “প্রতিদিন সকালে ক্লাসে যাওয়ার সময় নাকে রুমাল চেপে যেতে হয়। এত দুর্গন্ধ যে শ্বাস নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে।”
শহরজুড়েই ময়লার স্তুপ
আজ সোমবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন সড়ক— চৌমুহনা, কলেজ রোড, সেন্ট্রাল রোড, বনবিট অফিস এলাকা ও ভিক্টোরিয়া মোড়ে ময়লার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পৌরসভার নির্ধারিত ভাগাড় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোথাও ময়লা ফেলার জায়গা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা জানান, “একদিকে শিক্ষার্থীরা সঠিক দাবি তুলেছে, অন্যদিকে পৌরসভা বিকল্প ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুরো শহর এখন ময়লায় ভরে গেছে।”
প্রশাসনের বক্তব্য ও নাগরিক ক্ষোভ
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, “ভাড়াউড়া মৌজায় পৌরসভার নিজস্ব জমিতে আধুনিক স্যানেটারি ল্যান্ডফিল্ড ও ফ্যাকাল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ২১ কোটি ২৮ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ইতিবাচক নির্দেশনা দিয়েছে, তবে প্রকল্প এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায়।”
শ্রীমঙ্গল পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, “প্রকল্প অনুমোদন হলেই ময়লার ভাগাড় সরানোর কাজ শুরু হবে। এতে শ্রীমঙ্গলের ৫০ হাজার পৌরবাসী ও আশপাশের মানুষের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উন্নতি ঘটবে।”
তবে পৌর সূত্রে জানা গেছে, বিকল্প জায়গা নির্ধারণ না হওয়ায় সাময়িকভাবে বর্জ্য অপসারণ বন্ধ আছে।
স্থানীয় নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদীরা বিষয়টিকে এতদিনের উদাসীনতা বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের দাবি, শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনই আধুনিকীকরণ না করলে শ্রীমঙ্গলের পর্যটন ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশিষ্টজনের মতামত
এ প্রসঙ্গে শ্রীমঙ্গলের সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “পর্যটননগরী শ্রীমঙ্গলের মতো শহরে কলেজ রোডে এমন দুর্গন্ধময় ভাগাড় থাকা লজ্জাজনক। এখানে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী পড়ে। এদের পড়াশোনার পরিবেশই ধ্বংস হচ্ছে। সরকার ও পৌর প্রশাসনকে অবিলম্বে আধুনিক রিসাইক্লিং প্রকল্প গ্রহণ করে ভাগাড় স্থানান্তর করতে হবে।”

জরুরি পদক্ষেপের দাবি
নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের দাবি— পৌরসভা দ্রুত বিকল্প স্থান নির্ধারণ করে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা চালু করুক। না হলে শহরের স্বাস্থ্যঝুঁকি ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
এদিকে শহরের জনসাধারণের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে— “শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনের পরিণতিতে কি এখন পুরো শহরকেই দুর্গন্ধময় ভাগাড়ে পরিণত হতে হবে?”
(Photo credit by Md. Amjad Hossain: শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা এলাকা থেকে তোলা, সময় সকাল ১০টা ৩০ মিনিট)।

সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি