অস্থির প্রজন্ম

প্রকাশিত: ৯:৩৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৫

অস্থির প্রজন্ম

Manual3 Ad Code

সৈয়দ আমিরুজ্জামান |

(আমাদের সময়ের আয়না)

Manual4 Ad Code

আমরা এক অস্থির প্রজন্ম।
যাদের চোখে কোনো নক্ষত্র নেই,
যাদের গন্তব্যে নেই কোনো মানচিত্র,
আদর্শের অগ্নিশিখা নিভে গেছে
স্মার্টফোনের নীল আলোয়।

আমরা রোদে হাঁটি না,
বৃষ্টিতে ভিজি না।
ধুলোমাখা ঘাসে বসা আমাদের অভ্যেস নয়।
আধা কিলোমিটার পথেও
রিকশার জন্য অপেক্ষা করি—
যেন পায়ের চলন এক অনাদিকালের স্মৃতি।

Manual5 Ad Code

আমরা বইয়ের গন্ধ ভুলেছি,
খবরের কাগজে চোখ রাখি না।
আমাদের সাহিত্য জ্ঞানে ইমোজির হাসি,
আমাদের ইতিহাসে টিকটকের ক্লিপ।
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ফররুখ—
সবাই দূরের তারকার মতো ঝাপসা।
রুমি, সাদী, হাফিজ—
তাদের নামও উচ্চারণে কাঁপে আধুনিক জিহ্বা।

আমরা সালাম দিতে ভুলে গেছি,
বিনয় এখন পরাজয়ের প্রতীক।
বয়োজ্যেষ্ঠের সামনে হাঁটতে গিয়ে
আমরা চোখ নামাই না।
সারি ভাঙা, কণ্ঠ উঁচু করা—
এ যেন আমাদের নতুন শালীনতা।

আমরা যে মজলিসে দাঁড়ানোর কথা,
সেখানে চেয়ারে বসি।
যে মুহূর্তে নীরব থাকা প্রয়োজন,
সেই মুহূর্তেই আমরা বক্তা হয়ে উঠি।
আমাদের শব্দের ভার নেই,
শুধু শব্দের আধিক্য।

রাত আমাদের রাজত্ব।
আমরা নীল আলোয় জেগে থাকি,
সকাল আমাদের পরাজয়—
সূর্য ওঠে, আমরা ঘুমাই।
সূর্যাস্ত দেখি না,
দেখি স্ক্রল করা টাইমলাইন।

আমরা সাঁতার জানি না,
গাছে চড়ি না, মাঠে দৌড়াই না।
আমাদের শৈশব মাটির নয়,
প্লাস্টিকের বোতল আর স্ক্রিনের আঙুলছাপ।
আমাদের সাহস কীবোর্ডে,
আমাদের প্রতিবাদ স্ট্যাটাসে,
আমাদের ভালোবাসা রিঅ্যাকশনে।

আমরা শ্রদ্ধা হারিয়েছি,
শৃঙ্খলা হারিয়েছি,
মূল্যবোধের জায়গায় স্থাপন করেছি স্বাচ্ছন্দ্য।
আমাদের চোখে সেলফি,
আমাদের কানে হেডফোন,
আমাদের মনে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা।

Manual8 Ad Code

আমরা সত্যিই অস্থির—
প্রচণ্ডরকম অস্থির।
জানি না, কিসের জন্য দৌড়াচ্ছি,
কোনো গন্তব্যও নেই,
তবু থামতে ভয় পাই।

Manual8 Ad Code

তবু—
এই অস্থিরতার ভেতরেও
হয়তো এক সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
যেদিন আমরা একবার থামব,
নিজের মুখোমুখি দাঁড়াব—
সেদিন হয়তো জন্ম নেবে
এক স্থির প্রজন্মের প্রথম সকাল।

#

কবিতা: অস্থির প্রজন্ম (আমাদের সময়ের আয়না)

কবি: সৈয়দ আমিরুজ্জামান

সারাংশ:
কবি “অস্থির প্রজন্ম” কবিতায় আধুনিক সময়ের তরুণ সমাজের মানসিক ও সামাজিক অবস্থার একটি জীবন্ত চিত্র তুলে ধরেছেন। প্রযুক্তি ও ভোগবাদের দৌড়ে তারা হারিয়ে ফেলেছে তাদের মানবিকতা, সংস্কৃতি, ও মূল্যবোধ। স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া আর কৃত্রিম জীবনের মোহে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রকৃতি, বই, সম্পর্ক ও শ্রদ্ধাবোধ থেকে।

এই প্রজন্ম রোদে হাঁটে না, বৃষ্টিতে ভিজে না, বই পড়ে না, ইতিহাস জানে না—বরং স্ক্রিনের নীল আলোয় হারিয়ে যায়। তাদের সাহস, প্রতিবাদ, ভালোবাসা—সবই এখন ভার্চুয়াল জগতে সীমাবদ্ধ। বাস্তব জীবনে তারা এক নিস্তব্ধ, মূল্যহীন যান্ত্রিকতায় বন্দী।

তবুও কবি পুরোপুরি হতাশ নন। তিনি আশার সুরে বলেন—যেদিন এই প্রজন্ম থেমে নিজের অন্তরের মুখোমুখি দাঁড়াবে, সেদিন হয়তো জন্ম নেবে এক “স্থির প্রজন্মের প্রথম সকাল”, যে প্রজন্ম আবার খুঁজে পাবে মানবিকতার আলো, আদর্শ আর সত্যিকারের জীবনের অর্থ।

সংক্ষেপে:
এই কবিতায় আধুনিক প্রজন্মের অস্থিরতা, মূল্যবোধহীনতা ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের সমালোচনার পাশাপাশি ভবিষ্যতের পরিবর্তনের আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ