সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:০৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২০
ঢাকা, ০৩ জুলাই ২০২০ : অবৈধ আয়ের সুযোগ না থাকায় পাটকল ও পাটশিল্পের উন্নয়নে চীনের দেওয়া লাভজনক প্রস্তাব আমলারা গ্রহণ করেননি বলে দাবি করেছেন দেশের প্রবীণ শ্রমিকনেতা বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন।
‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ হচ্ছে স্থায়ী কোনো শ্রমিককে মজুরি কমিশন অনুযায়ী সব পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া।
শ্রমিকনেতা শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ২০১৯ সালে সরকারের আমন্ত্রণে চীনের ডেলিগেটরা আমাদের পাটকলগুলো পরিদর্শন করে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, তোমরা যদি পাটকলের পুরনো যন্ত্রগুলো ফেলে দাও, তাহলে আমরা আধুনিক যন্ত্র দিয়ে সাজিয়ে দেব।
এর ফলে উৎপাদন তিনগুণ বেশি হবে। উৎপাদন বাড়লে এটা বাজারজাতকরণের জন্য বাংলাদেশকে চিন্তা করতে হবে না। মোট উৎপাদনের ৬০ ভাগ আমরা চীনের বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেব। বাকি ৪০ ভাগ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা যাবে।
তিনি বলেন, উৎপাদন বাড়লে পটশিল্পও ধারাবাহিকভাবে আরও উন্নত হওয়ার দিকেই যেত। কিন্তু দেশের আমলারা এই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। কারণ ওই প্রক্রিয়ার মধ্যে আমলাদের উপরি ইনকামের কোনো পথ ছিল না। রাজি হলে চীনারাই সব করে দিত। তাই দেশের পাটশিল্পের উন্নয়নে চীনের এই প্রস্তাব তাদের পছন্দ হয়নি।
পাটকলগুলো বন্ধ হলে তার প্রভাব কী হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। সে কারণে দেশের অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হতে পারে। এটা কোনো মালিকের দোষ না, পরিস্থিতিগত কারণে এটা হবে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এখনই মানুষের ক্রয় ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ক্রয় ক্ষমতা কমার কারণে চাহিদাও কমে গেছে।
সুতরাং আমাদের দেশের রপ্তানি যা ছিল, তা হাজার চেষ্টা করলেও থাকবে না। তাই উৎপাদন করলেও ক্রেতার অভাবে বিক্রি হবে না। দেশের বিভিন্ন শিল্প থেকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ লোক বেকার হয়ে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার নিজেই যখন শ্রমিক ছাঁটাই করবে, তখন সরকার কি কোনো মালিককে বলতে পারবে যে তোমরা মিল ফ্যাক্টরি বন্ধ করোনা? মালিককে এ কথা বলার নৈতিক অধিকার কি তখন সরকারের থাকবে? সরকার যখন ছাঁটাই করবে তখন বেসরকারি মালিকদেরও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের হিড়িক লেগে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের ১ কোটি ২০ লাখ শিল্প শ্রমিক আছে। কোনো কারণে যদি শ্রমিক অসন্তোষ বা ক্ষোভ দেখা দেয়, তাহলে তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। শ্রমিক ছাঁটাই সরকারের জন্য মারাত্মক একটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। দেশের শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের অর্থনীতি বলতে আর কিছু থাকে না। আমাদের রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমে যাবে। এর সাথে আমাদের জাতীয় শিল্পও যদি অচল হয়, তাহলে দেশ যেভাবে এগিয়ে ছিল, আবারও পিছিয়ে যাবে।
প্রবীণ শ্রমিকনেতা সরকারের সিদ্ধান্তে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের এই অপরিপক্ক এবং দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত দুঃখজনক। পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সিদ্ধান্ত অবাস্তব এবং অনুপোযুক্ত। এই সিদ্ধান্ত মারাত্মকভাবে দেশের বর্তমান সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এই কর্মসূচির ফলে দেশ এবং সরকার কারও কোনো উপকার হবে না ক্ষতি ছাড়া।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D