সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:২০ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২০
ঢাকা, ১৯ জুলাই ২০২০: বাংলাদেশের শ্রমবাজারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে সরকারি উদ্যোগে একটি বিশদ সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
শনিবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেমের আয়োজনে ‘কোভিড-১৯ ও বাংলাদেশের শ্রম বাজারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে তারা এই সমীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন এর সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম।
সানেম চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার, নির্বাহী পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুয়োমো পুটিয়ানেনসহ প্রায় ৬০ জন গবেষক, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক, উন্নয়ন কর্মী, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা ওয়েবিনারে যোগ দেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সানেম গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রভাষক মাহতাব উদ্দীন।
এতে মূল প্রবন্ধে সানেম এর গবেষণা পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, মহামারী আসার আগেই এ অঞ্চলে শ্রমবাজারে কর্মহীনতার অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। বেকারত্ব, চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি না পাওয়া, কর্মমুখী শিক্ষার অভাব, নারী কর্মসংস্থানের স্বল্পতা, শিল্পে প্রযুক্তির সংযোগের কারণে শ্রমনির্ভরতা কমে যাওয়া ও চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চিয়তা ছিল অন্যতম। এখন মহামারী আসার পর এই সমস্যাগুলো আরও তীব্র হয়েছে।
শহরাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমবাজার যেমন সংকুচিত হয়েছে, গ্রামীণ কৃষিখাতেও মহামারীর প্রভাব পড়েছে।
“শ্রমবাজারে কোভিড-১৯ পরবর্তী সঙ্কট কেমন হবে তা নির্ভর করছে মহামারীর স্থায়িত্ব ও মহামারী মোকাবেলায় সরকারের কৌশলের ওপর। এক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সংকটগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। এটা চাকরিদাতা ও চাকরি প্রত্যাশী উভয় দিক থেকেই আসতে পারে। অনেকেই তাদের পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারেন।”
শ্রমবাজারে মহামারীর প্রভাব তুলে ধরে বিদিশা বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া ও মানুষের আয়ের পথ সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে আভ্যন্তরীণ চাহিদাও কমে যেতে পারে। একইভাবে আন্তর্জাতিক চাহিদাও কমে যেতে পারে। প্রবাস থেকে রেমিটেন্স উপার্জনকারীরার দেশে ফিরে আসার কারণে কর্মক্ষেত্রে বাড়তি জটলা তৈরি হতে পারে। শ্রমবাজার সংকোচিত হওয়ার এগুলোই কারণ।
পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে গবেষণায় তথ্যের সংকট একটি বিরাট সমস্যা। এখানে পর্যাপ্ত ডেটা নেই।
“মহামারীর কারণে শ্রমবাজারে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা সঠিকভাবে নিরূপনে একটি বিশদ জরিপ প্রয়োজন। মহামারী পরিস্থিতিতে শ্রমবাজার কোন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বা বিবিএস তা নিয়ে বিশদ জরিপ চালাতে পারে।”
মনসুর আরও বলেন, “বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি হবে না যদি না মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি না হয়। অন্যদিকে সরকারি খাতে বিনিয়োগ হলেও, সম্পদ ও সামর্থ্য নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যায়। চীন থেকে সরে আসা বিনিয়োগগুলোকে আকৃষ্ট করা বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কৌশলের অংশ হওয়া উচিত।”
তিনি বলেন, দেশের সামনে এখন তিনটি চ্যালেঞ্জ: কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার ঠেকানো, কর্মসংস্থান ও জীবিকা, এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার।
আলোচনায় সানেম চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার বলেন, মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক নীতি অন্য দেশের তুলনায় শক্তিশালী নয়। সামাজিক সুরক্ষার ইস্যুগুলোকে আলোচনায় আনা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
ইমরান মতিন বলেন, শ্রমবাজার নিয়ে তথ্য সংগ্রহের সময় আইসিটিভিত্তিক বাজারে শ্রম প্রবাহ বিবেচনায় রাখা উচিত।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জনগণের আশা ও ধারণার ওপর অর্থনীতির নানা সূচক বিভিন্নভাবে নির্ভর করছে। উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন তিনি।
সেলিম রায়হান বলেন, প্রবৃদ্ধি হলেও, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। শ্রমবাজারের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।
তিনি সরকারের পক্ষ থেকে একটি শ্রম ও কর্মসংস্থান কমিশন গড়ে তোলা ও শ্রমবাজারের জন্য বিশেষায়িত নতুন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাব দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে টুয়োমো পুটিয়ানেন সরকারি কর্মসংস্থান কর্মসূচির ওপর জোর দিয়ে বলেন, প্রনোদনা শুধু বড় ব্যবসা বা তারল্যের জন্যই নয়। এর মাধ্যমে চাকরি ও কর্মসংস্থানের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে গ্রামীন অর্থনীতির জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে হবে।
তিনি বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় সরবরাহ শক্তিশালী করে তোলার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন।
সভাপতির বক্তব্যে শামসুল আলম বলেন, অনেক কিছুই নির্ভর করছে আগামী দিনে মহামারী সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী যে পরিমাণে কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার কথা ছিল, সেই পরিমাণে কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, উৎপাদন সক্ষমতা গ্রামে ও শহরে উভয় জায়গাতেই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ছিল এক শতাংশ, সেখানে ২০১৮-১৯-এ এসে এটি ১৬ শতাংশের বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D