স্কুল সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করায় হুমকি প্রদান করা হচ্ছে: সুবল নায়েক  

প্রকাশিত: ১১:২২ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২১

স্কুল সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করায় হুমকি প্রদান করা হচ্ছে: সুবল নায়েক  
নিজস্ব প্রতিবেদক || শ্রীমঙ্গল, ০৫ জানুয়ারি ২০২১ : শ্রীমঙ্গলের কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জগাই রাজবংশীর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীবাসীর পক্ষ থেকে স্কুলের পুরাতন বিল্ডিংয়ের মালামাল তছরূপসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করায় হুমকি প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সুবল নায়েক।

অামাদের প্রতিনিধির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ইউনিয়ন পরিষদের জননন্দিত মেম্বার সুবল নায়েক অারও বলেন, “এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে এ বিষয়ে অভিযোগ করায় ও অারপি নিউজ, মানব সংবাদ, যুগবার্তা, অাই নিউজ বিডি, সাপ্তাহিক নতুন কথা সহ বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ হুমকি দিচ্ছে।”
এলাকাবাসীর অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে তিনি অারও বলেন, “১৯৮৪ সালে বাগানের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করার মহৎ উদ্দেশ্যে সকলের সহযোগিতায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করি। ‘৯৩ সালে বাগান পঞ্চায়েত কমিটিতে ছিলাম। ২০০৩ সালে জনগণের ভোটে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হই।   ১৩ জনের স্কুল কমিটিতে অামিও সদস্য হিসেবে অাছি। কখনও সরকারি ও জনগণের সম্পত্তি অাত্মসাতের চিন্তা করিনি। স্কুলের পুরাতন বিল্ডিংয়ের ২৭ জোড়া বেঞ্চ ও প্রায় ১২ বান টিনসহ অন্যান্য মালামাল ছিল। এসব মালামাল বিক্রির ক্ষেত্রে অামাদের কোনো অনুমতি নেওয়া হয় নি। তাই স্কুল কমিটির সভাপতি হিসেবে অামরা তাকে আর চাই না।”
ওইসব মালামাল বিক্রিলব্ধ টাকা স্কুল ফান্ডে জমা অাছে বলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জগাই রাজবংশীর এ দাবী প্রসঙ্গে সুবল নায়েক বলেন, “এটা অামার জানা নাই।”
উল্লেখ্য যে, ১৯৮৪ সালে স্থানীয় জনসাধারণের উদ্যোগে ও সহায়তায় স্থাপিত এ বিদ্যালয়টি সরকারি হওয়ার পর ২০২০ সালে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ করা হয় বলে জানা যায়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়ে জগাই রাজবংশী ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরাতন বিল্ডিংয়ের মালামাল, কাঠ, টিন, দরজা জানালা, চেয়ার টেবিল, বেঞ্চগুলোসহ ৪টি সিলিং ফ্যান অাত্মসাতের উদ্দেশ্যে করে দিয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
স্কুলের এসব মালামাল বিক্রি করার পর কোনো হদিস পাওয়া না গেলেও রামনগর মনিপুরি পাড়ার শহীদ মিয়ার কাছে রড ও টিনগুলো বিক্রি করেছে বলে এলাকাবাসী জানায়। অার স্কুলের টিনের সাথে সংযুক্ত থাকা কাঠগুলো কাকিয়াছড়ার স্থানীয় বাসিন্দা জালাল মিয়ার কাছে বিক্রি করেছে বলে তারা জানায়। পুরাতন বিল্ডিংয়ের রাবিশ ইট/ কংক্রিটগুলোও বিক্রি করে দিয়েছে বলে জানা যায়।
একজন অক্ষরজ্ঞানহীন হয়েও কমিটির সভাপতি হয়ে জগাই রাজবংশী তার ইচ্ছামত স্থানীয় জনমতের বা কমিটির মতামতের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার বাহাদুরি দেখিয়ে বহু টাকার বিনিময়ে অস্থানীয় সনজু কাহার নামে এক ব্যক্তিকে বিদ্যালয়ে দপ্তরী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বলে এলাকার বিভিন্ন জনের অভিযোগে বলা হয়।
স্কুলের পুরাতন বিল্ডিংয়ের মালামাল তছরূপসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে দরখাস্ত করলে তখন এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মুঠোফোনে কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জগাই রাজবংশী বলেন, “এই অভিযোগ ভাওতাবাজী। এই অামি ইয় করিনা। বুঝছেন, ইয় ভাই, অামি জগাই বলছি। বুঝছেন, অামি এমন কোনো কাজ করিনা যে, পিছনে অামাকে কেউ লাথি মারতে পারে। ইয় থাকবে।”
অারেক প্রশ্নের জবাবে জগাই রাজবংশী অারও বলেন, “পুরাতন কিছু জিনিস অামি মন্দিরে দিছি। যতগুলাই বিক্রি হইছে, উপর লেভেলে অালাপ করেই তা অামি করছি। জহর স্যার অাছে, তার লগে অালাপ করেছি।”
জগাই রাজবংশী অারও বলেন, “জগাই ২৫ বছর যাবৎ কাজ করছে। কোনো বেটার কিছু করার সুযোগ নাই। এইটারও সুযোগ নাই। নিউজ করলে অামার কোনো কিছু অাসে যায়না। অামাকে এখানে সরকারি অনুদান দেওয়া অাছে। পুরাতন বিল্ডিংয়ের মালামাল নতুন ভবনে লাগানো হয়েছে।”
অভিযোগ সম্পর্কে অারও বলেন, “যে বেটায় কইছে সেই বেটা কোনো মানুষ না। যে অভিযোগ করছে, সে একটা অমানুষ। অামার এইরকম বেটা নাই যে, বুকে হাত দিয়ে ইয় করার মত। সুইপার থেকে শুরু করে টপ পর্যন্ত সবাই চিনে জগাই কি জিনিস।”
অারেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “ইউএনও অামাদের অর্ডার দিছে, তাই এইগুলা অামরা বিক্রি করে দিছি।”
বিক্রিলব্ধ টাকাগুলো সম্পর্কে বলেন, “টাকা স্কুলেই অাছে। ফান্ডে জমা অাছে।”
কোনো সরকারি স্কুলের পুরাতন ভবনের মালামাল, কাঠ, টিন, দরজা জানালা, চেয়ার টেবিল, বেঞ্চ ও সিলিং ফ্যান অাত্মসাতের উদ্দেশ্যে বিক্রি করে দেয়ার এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো প্রতিকার অাছে কিনা জানতে চাওয়া হলে মুঠোফোনে চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরফদার বলেন, “অবশ্যই প্রতিকার অাছে।”
কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জগাই রাজবংশীর বিরুদ্ধে স্কুলের পুরাতন বিল্ডিংয়ের মালামাল তছরূপসহ নানা অনিয়মের এলাকাবাসীর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে অামাদের প্রতিনিধিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস এম জাকিরুল হাসান বলেন, “পুরাতন বিল্ডিংয়ের মালামাল, কাঠ, টিন, দরজা-জানালা, চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ ও সিলিং ফ্যান সহ কোনো কিছুই বিক্রি করতে পারে না। বরং এগুলো সংরক্ষণ করে রাখার কথা। এছাড়া নতুন স্কুল ভবনে এর অনেকগুলো ব্যবহারের জন্য কাজে লাগবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলাজনিত অবস্থা স্বাভাবিক হলে স্কুল খুলে দেয়া হলে নতুন স্কুল ভবনের জন্য ওইসব চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ ও সিলিং ফ্যান সমূহ দিয়েই কাজ সারতে হবে। কারণ নতুন পরিস্থিতিতে নতুন চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ ও সিলিং ফ্যান ক্রয়ের সরকারি বরাদ্দ হতে সময় লাগতে পারে। যে কারণে এগুলো সংরক্ষণ করে রাখার কথা। যেহেতু অভিযোগটি প্রথম জানলাম। বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এসব মালামাল বিক্রির সরকারি বিধান সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রকাশ্য নিলামে এসব বিক্রি করতে পারে।”
কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জগাই রাজবংশীর বিরুদ্ধে স্কুলের পুরাতন বিল্ডিংয়ের মালামাল তছরূপসহ নানা অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগপত্র প্রদান করেছে এলাকাবাসী। অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করেছেন এলাকাবাসীর পক্ষে সর্বজনাব মুহম্মদ অালী, হরু অাহমেদ, সালেহ অাহমদ, ধিরেন বাকতি, বিমল দাস, দেবেন দাস ও নকুল দাস প্রমূখ।
কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জগাই রাজবংশীর বিরুদ্ধে স্কুলের পুরাতন বিল্ডিংয়ের মালামাল তছরূপসহ নানা অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার-৪) অাসনের মাননীয় এমপি মহোদয় সহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি / সাধাররণ সম্পাদক, অারপি নিউজের সম্পাদক ও সাপ্তাহিক নতুনকথার বিশেষ প্রতিনিধি সহ জাতীয় পত্রিকার সকল স্থানীয় প্রতিনিধি বরাবরে ওই লিখিত অভিযোগপত্রের কপি প্রদান করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ