মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিশ্বাসীদের মন্ত্রিসভায় দেখতে চাই না: বাদশা

প্রকাশিত: ৭:০৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২১

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিশ্বাসীদের মন্ত্রিসভায় দেখতে চাই না: বাদশা

বিনেরপোতা (সাতক্ষীরা), ০৬ জানুয়ারি ২০২১ : “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা অবিশ্বাসী তাদের মন্ত্রিসভায় দেখতে চাই না।” বুধবার বেলা ১১টায় সাতক্ষীরায় বিনেরপোতায় ‘নদী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ শীর্ষক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির এক পদযাত্রা কর্মসূচি ও জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল ও চিনিকল ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগের সমালোচনা করে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছিল- পাটশিল্প হবে রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প। চিনিশিল্প হবে রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প। আমাদের একটা খাত থাকবে রাষ্ট্রায়াত্ব খাত। সেই খাত লাভ-লোকসানের জন্য নয়, জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য। সংবিধান নিয়ে বঙ্গবন্ধু পার্লামেন্টে বলেছিলেন, এই সংবিধান কলমের কালিতে লেখা নয়। এই সংবিধান ৩০ লাখ শহিদের রক্তের কালিতে লেখা। সংবিধানের বাইরে গেলে ওয়ার্কার্স পার্টি কোন কিছু সমর্থন করবে না। প্রতিরোধ করবে।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, শ্রমিকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আজ তাদের চোখে পানি। তাদের মিল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। কাদের কথায়? কিছু মন্ত্রী আছেন যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সহ্য করতে পারেন না। কারা, তাদের নাম প্রকাশ করা দরকার। যে মন্ত্রীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুসারে, সংবিধান অনুসারে চলতে চান না, তাদেরকে আমরা মন্ত্রিসভায় দেখতে চাই না। তাদের নাম রাজাকারের খাতায় দেয়া হোক।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বার বার বলেন- রাজাকারের তালিকা তৈরি করা হবে। রাজাকারের তালিকার জন্য যে ক্রাইটেরিয়া হবে তার মধ্যে একটা কথা আনা দরকার যে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াস করেন না, তারাও রাজাকারের তালিকায় পড়বেন। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীকে এ কথা বলার আহ্বান জানান বাদশা।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা আরও বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বারবার ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে তাদের সব সহায় সম্পদ হারাচ্ছেন। মানবিক বিপর্যয়ের মুখে তাদের জীবন জীবিকা কৃষি ও অন্যান্য পেশা রক্ষায় জলাবদ্ধতারোধে নদী ও সংযোগ খাল খনন অতীব জরুরী। টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট বা জোয়ারাধার প্রকল্প ) এর মাধ্যমে পলি পড়ে মজে যাওয়া বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী ও খালে পানি প্রবাহ বাড়িয়ে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। তিনি বলেন, নদী খাল শুকিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চল এক বিরানভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। মানুষ তার পেশা হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ছে। অনেকে দেশান্তরী হচ্ছেন। গ্রামের পর গ্রাম সারা বছর ধরে পানিমগ্ন হয়ে থাকছে।

কৃষি ও মৎস্য সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, নদী খাল শুকিয়ে যাওয়ায় লবনাক্ততার তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে এই অঞ্চলের পরিবেশও ভারসাম্য হারাচ্ছে। এ এলাকা মানুষের বসত অনুপযোগী হয়ে উঠছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ অঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাবে। এই জনপদ সমুদ্রগর্ভে চলে যাবে। সুন্দরবন হারিয়ে যাবে। এটা হতে দেয়া যায় না।

জনসভায় ফজলে হোসেন বাদশা ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে টিআরএম পদ্ধতি চালু করা, নদী ও খাল খনন করা, নদীর সঙ্গে খালের সংযোগ স্থাপন, দক্ষিনাঞ্চলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মান, স্লুইজগেট গুলো সচল করা, সকল অবৈধ ইজারা বাতিল এবং নদী তীরে বসবাসকারী মানুষকে সরিয়ে তাদের পুনর্বাসন করা।

কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি। সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি মহিবুল্লাহ মোড়ল। সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুল হক কিসলু।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ