মৌলবাদী আর্থিক বিনিয়োগের নতুন চেহারা: কোন পথে নিচ্ছে বাংলাদেশকে?

প্রকাশিত: ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০২১

মৌলবাদী আর্থিক বিনিয়োগের নতুন চেহারা: কোন পথে নিচ্ছে বাংলাদেশকে?

Manual5 Ad Code

| ফজলে হোসেন বাদশা |

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহজাত ব্যর্থতায় আফগানিস্তানে তালেবানী পুনরুত্থানের প্রকৃত বিপদ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। ধীরে ধীরে বোঝা যাচ্ছে যে, এই ঘটনায় কেবল আফগানিস্তান নয়, সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কঠিন বিপদে পড়তে যাচ্ছে। শুরুর দিকের সেই ‘ভালো ছেলে’ টাইপ কথাবার্তা যে শুধুই কথার কথা, তা এই স্বল্প সময়েই তালেবানী দায়িত্বশীল নেতারা আচরণ ও কর্মকাণ্ডে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। কখনো আধুনিক শিক্ষার উচ্চতর ডিগ্রির বিরোধিতা করে, কখনো মহিলাদের বাড়িতে রাখার কথা বলে।

বেশিরভাগ বিশ্লেষক ও গবেষকরা এখনো মনে করেন যে, আফগানিস্তানের বাইরে তালেবানদের নিজস্ব কোনো পরিকল্পনা নেই। কিন্তু তাতে সব আশঙ্কা দূর হয় না। কারণ তালেবানদের এই পুনরুত্থানের সাথে আরো অনেক কিছু জড়িত। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয় মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় জিহাদি আদর্শের নতুন যুগের সূচনা করতে পারে! তাদের মতে, সবচেয়ে বড় হুমকি আসতে পারে আল-কায়েদা এবং তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সাথে যুক্ত গোষ্ঠীগুলো থেকে, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্বল হলেও পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়নি।

তালেবানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তি সই করেছে যে, তারা এমন কোনো চরমপন্থি গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেবে না, যারা পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে চায়। কিন্তু তালেবানের এখনো আল-কায়েদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আবার আইএস, আল-কায়েদার প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই তালেবানদের সাথেও তাদের বিরোধ। সে কারণেই কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে, আইএস এখন মরিয়া হয়ে দেখাতে চাইবে যে, তারা ফুরিয়ে যায়নি, বরং এখনো অনেক কিছু করার সামর্থ রাখে। এরই মধ্যে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী হামলা তার বড় দৃষ্টান্ত। তাই, তালেবানরা নিজেদের আফগানিস্তানে সীমাবদ্ধ রাখলেও, আল কায়েদা এবং আইএস তাদের পুরনো ভূমিকায় থাকবে-এতে কোনো সন্দেহ নেই।

২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের তৎপরতা ছিল সর্বোচ্চ। জঙ্গি গোষ্ঠীটি মসুল, ফালুজা, তিকরিত ও রাক্কা প্রভৃতি প্রধান সিরিয়া থেকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের উপকণ্ঠে বিস্তৃত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্বযুদ্ধোত্তর রাষ্ট্রীয় মডেলের অবসান ঘটিয়ে তারা ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা করতে চাইতো। আইএস এক কোটি মানুষকে শাসন করেছে এবং ইরাক ও সিরিয়ায় তার শক্ত ঘাঁটি ছাড়িয়ে পুরো অঞ্চলেই কর্তৃত্ব বিস্তৃত করতে চেয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালের মধ্যে, আইএস মধ্যপ্রাচ্যে তাদের দখলীকৃত প্রায় পুরো অঞ্চল হারিয়ে ফেলে। তাদের অনেক স্থানীয় সৈন্য নিহত বা বন্দী হয়েছে এবং অনেক ভিনদেশি যোদ্ধাকে হয় মেরে ফেলা হয়েছে, না হয় নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আইএস কি পুরোপুরি নির্মূল হয়েছে!

Manual4 Ad Code

আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, মধ্যপ্রাচ্যে আইএস দুর্বল হয়ে গেলেও আফগানিস্তানে তার যথেষ্ট উপস্থিতি রয়েছে। দুর্বল নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, তালেবানদের পুনরুত্থান, তাদের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব এবং ব্যাপক দুর্নীতি আফগানিস্তানকে আইএসের জন্য উর্বর ভূমিতে পরিণত করেছে। আইএস-যুক্ত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো মিশরের সিনাই উপদ্বীপ এবং পশ্চিম আফ্রিকায়ও সক্রিয়। সবচেয়ে বড় কথা হল যে, তাদেরকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আপাতদৃষ্টিতে বহিষ্কার করা হলেও পর্দার আড়াালে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা যায়নি।

তালেবানরা আফগানিস্তান দখল করলেও এখনো আইএস এবং আল কায়েদা উভয়েই দেশের বিস্তৃত খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে। তারা এই খনিজ সম্পদ থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। পপি-ব্যবসা আরেকটি উৎস যার মূল চাবিকাঠি তাদের হাতে। বিশ্বজুড়ে মাদক ব্যবসার সব থেকে বেশি অংশ আসে এই পপি থেকে।

আফগানিস্তানের বাইরে আইএস এখনো ইরাকের কালোবাজারিকে কাজে লাগাচ্ছে। ইরাক সরকারের সামরিক বিজয় সত্তে¡ও তারা এখন পর্যন্ত আইএসের আর্থিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে। গ্রুপটি ইরাকে বৈধ ব্যবসায় কমপক্ষে ২৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এজন্য তারা কাজে লাগাচ্ছে স্থানীয় মধ্যস্বত্বভোগীদের, যারা আইএসকে এই ব্যবসায় প্রাপ্ত মুনাফা দিয়ে দিচ্ছে, মূলত ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক লাভের জন্য। তাদের মাধ্যমে, আইএস বিভিন্ন সেক্টরে সক্রিয়। যেমন গাড়ির ডিলারশিপ, ইলেকট্রনিক্স স্টোর এবং ফার্মেসী, এমনকি মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা। ইরাকি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই স্বীকার করেছে যে একমাত্র বাগদাদেই শত শত কোম্পানি রয়েছে, যাদের বিনিয়োগ ও মুনাফা দুটোর নিয়ন্ত্রণই আইএস-এর হাতে।
সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত হওয়াা সত্তে¡ও আইএস সম্পদ আহরণ অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে তাদের অর্থনীতি সচল রেখেছে, যা চূড়ন্তভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের তৎপরতায় ভূমিকা রাখতে সক্ষম। অর্থাৎ আর্থিক সক্ষমতা তাদের নষ্ট হয় নি। আবার হাজার হাজার যুদ্ধ ফেরত আইএস যোদ্ধা তাদের নিজেদের দেশে ফিরেছে। দক্ষিণ -পূর্ব এয়িায় অনেক দেশ রয়েছে এর মধ্যে। এদের মধ্যে কেউ কেউ মত বদলাতে পারে। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই অনেকে তার প্রয়োজনও বোধ করবে না। এর মানে হলো যে, এই গোষ্ঠীর একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক রয়েছে, যাদের মগজধোলাই তারা করে রেখেছে অনেক আগে থেকেই, যারা এখনো মারতে এবং মরতে প্রস্তুত।

Manual4 Ad Code

বাংলাদেশে এই উদ্বেগের ভিন্ন একটি মাত্রা আছে। এই দেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল উদ্যেশ্য ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক সাম্যবাদী রাষ্ট্র গড়ে তোলা। মূলত, স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী তারাই ছিল যারা বাংলাদেশকে ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। অতএব, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুধু পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছিল না, এটি ছিল ধারাবাহিক মতাদর্শগত সংগ্রামের ফল, যেখানে পাকিস্তানের পাশাপাশি স্থানীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোও স্বাধীনতাকামী মানুষের হাতে পরাজিত হয়। স্বাধীনতা লাভের পর বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার পর থেকে বাংলাদেশে সেই উত্থানের পরিণতি আমাদের ভোগ করতে হয়েছে। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিবাদের উত্থান দেখা গেছে। বিএনপির সঙ্গে জামাতের জোট সাম্প্রদায়িক দলগুলোকে শক্তিশালী করেছে। তারা একই উদ্যেশ্যে বারবার ষড়যন্ত্র করেছে। তারা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার জন্য ২১ আগস্টের মতো নৃশংস আক্রমণ চালাতেও দ্বিধা করে নি।

Manual4 Ad Code

এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট গঠিত। ভোটের রাজনীতিতেও সেই জোটের সংগ্রাম সফল হয়। যার ফলে আওয়ামী লীগ এখনো ক্ষমতায়। এমন পরিস্থিতিতে এদেশে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীকে কি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে? হ্যাঁ, তাদের চাপের মুখে ফেলা গেছে, নানাভাবে তাদের প্রকাশ্য তৎপরতা কমানো গেছে, তাদের মধ্যে অনেককে তাদের পূর্ববর্তী অপরাধের শাস্তি দেয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু আজকের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় তা যথেষ্ট নয়। কারণ এদেশেও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর নেপথ্য আর্থিক কর্মকাণ্ড ইরাক বা আফগানিস্তানের মতো এখনও চলছে। এবং এখানেও তাদের বিনিয়োগ ও মুনাফার সুরক্ষা নিশ্চিত করছে কিছু মধ্যস্থতাকারী, যারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

২০১৪ সালে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত মৌলবাদী অর্থনীতির যে চিত্র উপস্থাপন করেছিলেন, আমরা আজো তা কমাতে পারি নি। তার মতে, (সেই সময়কার হিসাব অনুযায়ী) বাংলাদেশে মৌলবাদী অর্থনীতির বার্ষিক নিট মুনাফা ২, ৪৬৪ কোটি টাকা (৩০০ কোটি মার্কিন ডলার)। এই মুনাফার সর্বোচ্চ ২৬ শতাংশ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আসে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ আসে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে, ওষুধ শিল্প ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে। এর বাইরে মিডিয়া, সড়ক পরিবহন, শিক্ষাসহ কত না খাত! এত বছর পর এই চিত্র আরো ভয়ঙ্কর। আবুল বারকাত তার সদ্য প্রকাশিত বইয়ে বলেছেন যে, ২০১৯ সালে মৌলবাদী অর্থনীতির নিট মুনাফা বছরে প্রায় ৪, ২৬২ কোটি টাকা। আগের হিসাব অনুযায়ী মাত্র ৫ বছরে মুনাফার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আরো উদ্বেগজনক যে, দেশের মূল অর্থনীতির বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৭.৫ থেকে ৭.৮ শতাংশ, কিন্তু মৌলবাদী অর্থনীতি বার্ষিক বৃদ্ধি ৯ থেকে ১০ শতাংশ। গত ৪ দশকে দেশে মৌলবাদীদের নীট মুনাফার পরিমাণ ৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। এই বিশাল সঞ্চিত মুনাফার পরিমাণ রাতারাতি গায়েব হয়ে যায় নি। অন্য কোথাও অবশ্যই বিনিয়োগ করা হয়েছে। সেই বিনিয়োগ ভবিষ্যতে অবশ্যই তাদের মূলধন বাড়াবে। কিন্তু কীভাবে তারা এই আপাতদৃষ্টিতে ‘প্রতিকূল’ সময়েও বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে?

গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য প্রবণতা হলো, স্থানীয় পর্যায়ে কিছু নতুন ব্যবসায়িক কোম্পানি দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে বিস্ময়কর গতিতে ফুলেফেঁপে উঠেছে। একের পর এক নতুন ব্যবসা চালু হচ্ছে। প্রচুর বিনিয়োগ, মুনাফা আসছে। এর বড় অংশের মালিকানা বা পরিচালনায় জামাতের সাথে জড়িতরা। তারা কোথাও কোথাও স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের এই নতুন কোম্পানিতে অংশীদার হিসেবে যুক্ত করেছে। এই ক্ষমতাধর নেতাদের সহায়তায় তাদের ব্যবসা ব্যাপক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সমীকরণটি খুবই সহজ, শুধু দেওয়া-নেওয়া সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত-ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা দ্রুত অর্থ উপার্জনের প্রয়োজনে তাদের বিনিয়োগকে সুরক্ষা দিচ্ছেন। তাদের অর্থ নিরাপদ এবং চলমান রাখার পাশাপাশি, মৌলবাদীরা তাদের সামাজিক পরিচয়কে নতুন রূপ দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সহজেই ঘনিষ্ঠ হতে পারছে প্রশাসনেরও। ফলস্বরূপ, কেউ এমনকি একটি প্রশ্নও উত্থাপন করছে না। আর তাই তারা তাদের কোম্পানিতে জামাত ও মৌলবাদী রাজনীতিতে সম্পৃক্তদের নিয়োগ দিচ্ছে। কয়েক বছর আগে যারা নাশকতাসহ নানা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল, এই চাকরির পরিচয়ে তারা ফের ফিরে আসছে। নিঃসন্দেহে, এই ক্রমবর্ধমান ব্যবসার মুনাফা যাবে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ঘরে। অভিজ্ঞতা বলে, এই অর্থ একদিন এই রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে বা জঙ্গিবাদ পুনরায় বিকাশে ব্যয় করা হবে।
ব্যানবেসের হিসাবে দেশে এখন প্রায় ৪০ লাখ কওমি শিক্ষার্থী। যাদের মূল নিয়ন্ত্রণে হেফাজত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্প্রতি নিশ্চিত করেছে যে, নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তান থেকে ফিরে আসা জঙ্গিরা এখনো হেফাজতসহ মৌলবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে সক্রিয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সহিংসতার পেছনে এই জঙ্গিরা। সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজত তার প্রকৃত পরিচয় গোপন করে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছাকাছি থাকার কৌশলও গ্রহণ করেছে। সে লক্ষ্যে তারা সারা দেশে ‘রাবেতাতুল ওয়াইজিন বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন গঠন করেছে। একাধিক কওমি মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে সব জেলায় কাজ চলছে। অর্থদানকারী স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিকরাও সেইসব মাদ্রাসার সাথে জড়িত। এটি হেফাজতের অর্থায়নের একটি নতুন উৎস, যা নিরাপত্তার এক ছাতার তল খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করছে।

Manual8 Ad Code

যদি এই মৌলবাদী অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি অকেজো করা না যায়, তাহলে এই দেশে তাদের নির্মূল করাও কঠিন হবে। যদি আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থান আইএস বা আল কায়েদাকে নতুন আঞ্চলিক সম্প্রসারণে প্রভাবিত করে, তাহলে বাংলাদেশের মৌলবাদীদের কাছ থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের পিছনে ব্যবহার করা হতেই পারে। সেদিন যদি রাষ্ট্রের সবচেয়ে খারাপ সময় আসে, তাহলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা, যারা আজ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক অংশীদার, তারা কোথায় যাবেন? তারা কি মৌলবাদীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করবেন? আমরা এখনো জানি না।

অতএব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে আরো গুরুত্ব দিয়ে নতুন ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পুনর্বিবেচনা করা উচিত। নিজেদের করণীয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, একটি রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মপরিকল্পনা ছাড়া মৌলবাদের অর্থনীতি বন্ধ করা কঠিন হবে। কারণ তাদের অর্থনীতি ভর করে আছে দুর্নীতির ওপর, যা দ্রুত টাকা আয়ের লোভ জাগায়। দ্বিতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে সংবিধানটি অর্জন করেছি তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা এখন খুবই প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র একটি ধর্মনিরপেক্ষ সার্বজনীন বাংলাদেশই পারে সন্ত্রাসবাদ এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে। এ প্রতিরোধ পর্বে উত্তরণ ঘটানো গেলে তা শুধু আমাদের নিজেদের জন্যই নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই মঙ্গল হবে। অন্যথায়, এদেশের বিপদ দক্ষিণ এশিয়াকেও ডুবিয়ে দেবে গভীর সংকটে।
#
ফজলে হোসেন বাদশা এমপি
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি

২১ ডিসেম্বর ২০২১

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code