খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকে গথ উপজাতি : হানদের আক্রমণ, রোমানদের সাথে সংঘাত ও অ্যাড্রিয়ানোপোলের যুদ্ধ

প্রকাশিত: ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০২২

খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকে গথ উপজাতি : হানদের আক্রমণ, রোমানদের সাথে সংঘাত ও অ্যাড্রিয়ানোপোলের যুদ্ধ

সুমিত রায় |

(পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের ভাঙ্গনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল গথদেরই। এই আর্টিকেলে সেই ভাঙ্গনে গথদের অবদানের সূত্রপাতের আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের এই অংশে তাদের আক্রমণের শিকার পশ্চিম নয়, বরং ছিল পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য। দানিউব ক্রস করে এসে এরা তদকালিন মিশিয়া ও থ্রেস (বলকানের পূর্বাঞ্চল) কাঁপিয়ে সব শেষে আক্রমণ করেছিল রোমান সাম্রাজ্যের তদকালিন কেন্দ্র কনস্ট্যান্টিনোপলকে। যাই হোক, আমার লাস্ট আর্টিকেলটি ছিল বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য নিয়ে লেখা, সেখানে গথ বনাম রোমানদের মধ্যে হওয়া অ্যাড্রিয়ানোপোলের যুদ্ধ নিয়ে লিখেছিলাম, কিন্তু সেটা নিয়ে ভালোভাবে বুঝতেও এর বিস্তারিত পটভূমি জানা দরকার। অধিকন্তু এই আর্টিকেলে রোমান সাম্রাজ্যের হান আক্রমণেরও সূত্রপাতেরও বর্ণনা রয়েছে, যাদের কারণে গথরা বিতাড়িত হয়ে রোমান সাম্রাজ্যে প্রবেশ করেছিল)
গথদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
গথরা ছিল একটি জার্মানীয় বা জার্মানিক জাতি যারা পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন এবং মধ্যযুগীয় ইউরোপের উত্থানে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। ঐতিহাসিক জর্ডানেস তার ৫৫১ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ গেটিকায় (Getica) লিখেছিলেন, গথদের উৎপত্তি দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়ায়, কিন্তু এই বিবরণের সঠিকতা অস্পষ্ট। গুটোনস (Gutones) নামে পরিচিত একটি জনগোষ্ঠী সম্ভবত প্রাথমিক গথ জাতি ছিল, যারা খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীতে নিম্ন ভিস্টুলা নদীর কাছাকাছি বসবাস করত বলে নথিভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে তারা উইলবার্ক প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্কৃতির (Wielbark culture) সাথে সম্পর্কিত। খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দী থেকে উইলবার্ক সংস্কৃতি দক্ষিণ দিকে কৃষ্ণ সাগরের দিকে প্রসারিত হয়েছিল যা গথিক অভিপ্রায়ণকে চিহ্নিত করে। খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দীর শেষের দিকে গথরা চেরনিয়াখভ সংস্কৃতি (Chernyakhov culture) গঠনে অবদান রেখেছিল। খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে বেশ কয়েকটি গথিক গোষ্ঠী আলাদা হয়ে যায়, যেগুলোর মধ্যে থেরভিঙ্গি এবং গ্রেউথুঙ্গি সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। এই সময়ে উলফিলাস গথদেরকে খ্রিস্টধর্মের একটি শাখা এরিয়ানিজমে ধর্মান্তরিত করতে শুরু করেন।
৪র্থ শতাব্দীর শেষের দিকে, গথদের অঞ্চলগুলোতে পূর্ব থেকে আগত হানরা আক্রমণ করা শুরু করে। এই ঘটনার পরে গথদের বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী হানিক আধিপত্যের অধীনে এসেছিল, বাকিরা আরও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হয়েছিল বা রোমান সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছিল। দানিউব অতিক্রম করে রোমান সাম্রাজ্যে প্রবেশকারী গথরা ৩৭৮ সালে অ্যাড্রিয়ানোপলের যুদ্ধে রোমানদের উপর একটি বিধ্বংসী পরাজয় ঘটায়। এই গথরাই পরবর্থিতে ভিসিগথ নামক জাতি গঠন করে এবং তাদের রাজা প্রথম আলারিকের অধীনে তারা একটি দীর্ঘ অভিপ্রায়ণ শুরু করে, আর অবশেষে তারা স্পেইনের টলেডোতে একটি ভিসিগোথিক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এদিকে হানিক শাসনের অধীনস্ত গথরা খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দীতে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করে, যাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও শক্তিশালী জাতি ছিল অস্ট্রোগথরা। তারা তাদের রাজা থিওডোরিক দ্য গ্রেটের অধীনে ইতালির রাভেনাতে একটি অস্ট্রোগোথিক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। অস্ট্রোগোথিক রাজ্য খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়, আর ভিসিগোথিক রাজ্য খ্রিস্টীয় ৮ম শতাব্দীর গোড়ার দিকে উমাইয়া খিলাফত দ্বারা বিজিত হয়। তবে গথদের ইতিহাস এখানেই শেষ নয়। ক্রিমিয়াতে গথ জাতির অবশিষ্টাংশ থেকে গিয়েছিল, যাদেরকে ক্রিমিয়ান গথ বলা হতো। এরা বেশ কয়েক শতক ধরে ক্রিমিয়ায় টিকে থাকে। কিন্তু সর্বোপরি গথরা বিভিন্ন জাতির মধ্যে নিজেদের অস্তিত্বকে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে শেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
রোমান সাম্রাজ্যের সাথে কো-এক্সিস্টেন্স
শুরু থেকে গথদের ইতিহাস নিয়ে এই আর্টিকেলে আলোচনা করছি না। গথদের ইতিহাস একেবারে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের জার্মানিক শাখার পূর্ব উপশাখার ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত, যে উপশাখার বিকাশ ঘটে বর্তমান সুইডেনের দক্ষিণাঞ্চলে। কিন্তু অত পূর্বের প্রাগিতিহাস থেকে আমরা শুরু করছিনা, একেবারে খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকে তাদের ইতিহাস থেকে আলোচনা শুরু করছি।
৩৩২ খ্রিষ্টাব্দে, কনস্ট্যান্টাইন গথ আক্রমণকে প্রতিহত করতে ও রোমান সীমান্তকে শক্তিশালী করার জন্য সারমেশিয়ানদের দানিউবের উত্তর তীরে বসতি স্থাপনে সহায়তা করেছিলেন। কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে (ওইয়াম (Oium)) গথিক আধিপত্যের পূর্ব পর্যন্ত সারমেশিয়ানরা প্রভাবশালী ছিল। গথরা দানিউবের উত্তরে ডাসিয়ায় (বর্তমান রোমানিয়ায়) সারমেশিয়ান উপজাতিদের আক্রমণ করেছিল। রোমান সম্রাট প্রথম কনস্ট্যান্টাইন (৩০৬-৩৩৭) তার পুত্র দ্বিতীয় কনস্টান্টাইনকে গল থেকে দানিউবের উত্তরে সমরাভিযানের জন্য ডেকে আনেন। ৩৩২ সালে খুব ঠান্ডা আবহাওয়ায় গথদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রোমানরা বিজয়ী হয়েছিল। তারা ১০০,০০০ গথকে হত্যা করেছিল এবং গথদের থেরভিঙ্গি উপজাতির রাজা আরিয়ারিকাসের (Ariaricus) পুত্র এওরিককে (Aoric) বন্দী করেছিল।
ইউসেবিয়াস নামে একজন ইতিহাসবিদ খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দীতে গ্রিক ভাষায় লিখেছিলেন, ৩৩৪ সালে, কনস্ট্যান্টাইন সারমেশিয়ান ক্রীতদাসদের বিদ্রোহের পরে দানিউবের উত্তর তীর থেকে প্রায় ৩০০,০০০ সারমেশিয়ানকে সরিয়ে দেন বা ইভ্যাকুয়েট করেন। ৩৩৫ থেকে ৩৩৬ সাল পর্যন্ত কনস্টান্টাইন দানিউবে সমরাভিযান চালিয়ে অনেক গথিক উপজাতিকে পরাজিত করেন। রোমানদের দ্বারা দানিউব থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরে থেরভিঙ্গি তিসজার (Tisza) সারমেশিয়ানদের অঞ্চল আক্রমণ করেছিল। এই দ্বন্দ্বে ভিডিগোইয়ারা (গথদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী) থেরভিঙ্গিদের নেতৃত্ব দেয় এবং তারা এতে বিজয়ী হয়েছিল, যদিও ভিডিগোইয়া নিহত হয়েছিলেন। জর্ডানেস বলেন যে, এওরিক গেবেরিকের (Geberic) স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি তার বীরত্ব এবং বংশের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি হাসিডিঙ্গি ভান্ডাল এবং তাদের রাজা ভিসিমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, এবং তাদেরকে রোমান সুরক্ষার অধীনে প্যানোনিয়ায় বসতি স্থাপন করতে বাধ্য করেছিলেন। (প্যানোনিয়া বর্তমানের পশ্চিম হাঙ্গেরি, পূর্ব অস্ট্রিয়া, উত্তর ক্রোয়েশিয়া, উত্তর-পশ্চিম সার্বিয়া, উত্তর স্লোভেনিয়া এবং উত্তর বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা অঞ্চলে অবস্থিত ছিল।)
থেরভিঙ্গিরাজ আরিয়ারিকাসের পুত্র এওরিককে বন্দী করে এনে কনস্টান্টিনোপলে বড় করা হয়েছিল, সেখানে তার স্মৃতিতে একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। প্যাট্রিক জে. গিয়ারি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে গথদের এরিয়ারিক শাখার অধীনে পশ্চিম গথরা ক্রমবর্ধমানভাবে রোমান সাম্রাজ্য এবং সিস্টেমের মধ্যে একীভূত হয়ে ওঠে, সাসানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জন্য সৈন্য সরবরাহ করে। গ্রেউথুঙ্গি এবং থেরভিঙ্গি উভয়ই খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে ব্যাপকভাবে রোমানাইজড হয়ে ওঠে। এটি রোমানদের সাথে বাণিজ্যের মাধ্যমে এবং সেইসাথে বাইজান্টিয়াম ভিত্তিক সামরিক সহায়তামূলক চুক্তির মাধ্যমে তৈরি একটি রোমান মিলিটারি কোভানেন্টে গথদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। কথিত আছে, কনস্টান্টিনোপলকে তার পরবর্তী শাসনামলে কনস্টান্টিনোপলকে রক্ষা করার জন্য কনস্ট্যান্টাইন ৪০,০০০ গথকে নিয়ে আসেন, এবং তারপর থেকে প্যালেস গার্ড বাহিনী বেশিরভাগ জার্মান যোদ্ধাদের দ্বারাই গঠিত হতো, কারণ এই সময়ের মধ্যে রোমান সৈন্যরা ব্যাপকভাবে তাদের সামরিক মূল্য হারিয়ে ফেলেছিল। গথরা খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে রোমান সেনাবাহিনীতে ক্রমবর্ধমানভাবে সৈনিক হয়ে ওঠে, যার ফলে রোমান সেনাবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য জার্মানীকরণ ঘটে। রোমান সেনাবাহিনীতে জার্মান যোদ্ধাদের নিয়োগ না করা হলে রোমান সাম্রাজ্য যতদিন টিকে ছিল ততদিন টিকতে থাকত না। রোমান সামরিক বাহিনীতে বিশিষ্ট অবস্থান অর্জনকারী গথদের মধ্যে ছিলেন গেইনাস, ত্রিবিগিল্ড, ফ্রেভিত্তা এবং অ্যাসপার। মারডোনিয়াস নামে একজন গথিক ইউনাখ বা খোজা ছিলেন রোমান সম্রাট জুলিয়ানের শৈশবের শিক্ষক এবং পরে উপদেষ্টা, যার উপর তার অপরিসীম প্রভাব ছিল।
কনস্টান্টিনোপলে গথদের পশুচামড়া পরার বিষয়টি স্থানীয়দের জন্যেও ফ্যাশনেবল হয়ে ওঠে। রক্ষণশীলরা আবার এই ফ্যাশহনটিকে উচ্চস্বরে নিন্দা করেছিল। খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দীর গ্রীক বিশপ সিনেসিয়াস গথদেরকে ভেড়ার মধ্যে নেকড়ে হিসেবে তুলনা করেছিলেন, পশুচামড়া পরার জন্য তাদের উপহাস করেছিলেন এবং রোমের প্রতি তাদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “পশুর চামড়া পড়া এক লোক সিনেট হাউজে রোমান ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে বিতর্ক করার জন্য তার চেড়ার চামড়ার বিনিময়ে রোমানদের আনুষ্ঠানিক পোশাক টোগা গ্রহণ করে ও পরিধান করে, এমনকি সে হয়তো একজন রোমান কনসালের পাশে বসেও। তার পেছনে বসে আইন-মানা লোকেরা। এরপর সেই লোকটিই সিনেট হাউজ থেকে যথেষ্ট দূরে গিয়ে আবার তার ভেড়ার চামড়া পরিধান করে এবং নিজেদের লোকেদের মধ্যে গিয়ে তার সেই টোগাটি নিয়ে উপহাস করে এবং বলে এটি পরিধান করা অবস্থায় তরবারিও আরাম করে চালানো যায়না।”
খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে, গেবেরিকের (Geberic) পর গ্রেউথুঙ্গিয়ান রাজা হন এরমানারিক (Ermanaric)। তিনি একটি বৃহত আকারের সম্প্রসারণ শুরু করেছিলেন। জর্ডানেস বলেন, এরমানারিক হেরুলি (যারা আলারিকের নেতৃত্বে ছিলেন), এস্তি এবং ভিস্তুলা ভেনেতি সহ বিপুল সংখ্যক যোদ্ধা উপজাতিকে জয় করেছিলেন, যারা সামরিকভাবে দুর্বল হলেও সংখ্যায় অনেক বেশি সংখ্যক ছিল এবং একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। জর্ডানেস মহান আলেকজান্ডারের সাথে এরমানারিক বিজয়কে তুলনা করে বলেন যে তিনি “সিথিয়া এবং জার্মানির সমস্ত জাতিকে কেবল তার নিজের দক্ষতার দ্বারা শাসন করেছিলেন।” জর্ডানেসকে ব্যাখ্যা করে হার্ভিগ ওলফ্রাম অনুমান করেন যে, এরমানারিক বাল্টিক সাগর থেকে কৃষ্ণ সাগর পর্যন্ত উরাল পর্বতমালার মতো পূর্ব দিকে প্রসারিত পন্টিক স্তেপের একটি বিশাল অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন, যার মধ্যে কেবল গ্রেউথুঙ্গিরাই নয়, বাল্টিক ফিনিক গোষ্ঠী, স্লাভ (যেমন অ্যান্টেস), রোসোমনি (রোক্সোলানি), অ্যালান, হান, সারমেশিয়ান এবং সম্ভবত এস্তিরাও (বাল্টস) অন্তর্ভুক্ত ছিল। ওল্ফরামের মতে, এটা অবশ্যই সম্ভব যে চেরনিয়াখভ সংস্কৃতির (Chernyakhov culture) প্রভাবের ক্ষেত্রটি তার প্রত্নতাত্ত্বিক ব্যাপ্তির বাইরেও প্রসারিত হয়ে থাকতে পারে। চেরনিয়াখভ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনেক উত্তরে ফরেস্ট স্তেপেও পাওয়া গেছে, যা এই অঞ্চলে গথিক আধিপত্যের ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে পিটার হিথার দাবি করেন যে, এরমানারিকের ক্ষমতার এই পরিমাণ অতিরঞ্জিত। ভলগা-ডন বাণিজ্যপথগুলোতে এরমানারিকের সম্ভাব্য আধিপত্য ইতিহাসবিদ গটফ্রিড শ্র্যামকে এই রাজত্বকে ভাইকিং-প্রতিষ্ঠিত রাজ্য কিয়েভান রাসের অগ্রদূত হিসাবে বিবেচনা করার দিকে পরিচালিত করেছে। গথিক অঞ্চলগুলির পশ্চিম অংশ ছিল থেরভিঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত, যেখানে তাইফালি, সারমেশিয়ান এবং অন্যান্য ইরানীয়য় জনগোষ্ঠী, ড্যাসিয়ান, ডাকো-রোমান এবং অন্যান্য রোমানীয় জনগোষ্ঠীর লোকেরাও বাস করত। হেরভোর ও হেইড্রেকের কিংবদন্তী (The Saga of Hervör and Heidrek) ও ১৩শ শতাব্দীর একটি কিংবদন্তী অনুসারে, আরহেইমার (Árheimar) ছিল গথদের ভূমি রিডগোটাল্যান্ডের (Reidgotaland) রাজধানী ছিল। কাহিনীতে বলা হয়েছে যে এটি নিপার নদীর উপর অবস্থিত ছিল। জর্ডানেস এই অঞ্চলকে ওইয়াম (Oium) নামে অভিহিত করেন।
৩৬০-এর দশকে, এওরিকের পুত্র এবং থেরভিঙ্গির নেতা আথানারিক (Athanaric) পূর্ব রোমান সম্রাট ভ্যালেন্সের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রোকোপিয়াসকে সমর্থন করেছিলেন। এর প্রতিশোধ নেবার জন্য ভ্যালেনস আথানারিকের অঞ্চল আক্রমণ করে তাকে পরাজিত করেন, কিন্তু একটি নির্ণায়ক বিজয় অর্জন করতে পারেননি। আথানারিক এবং ভ্যালেনস তখন দানিউব নদীতে একটি নৌকায় থেরভিঙ্গিদের পক্ষে অনুকূল একটি শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, কারণ আথানারিক রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে তার পা ফেলতে করতে অস্বীকার করেছিলেন। এর পরপরই, আথানারিকের প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রিটিগার্ন খ্রিস্টধর্মের একটি শাখা এরিয়ানিজমে ধর্মান্তরিত হন এবং ভ্যালেন্সের অনুগ্রহ লাভ করেন। আথানারিক এবং ফ্রিটিগার্নের মধ্যে এরপর একটি গৃহযুদ্ধ ঘটে, যেখানে আথানারিক বিজয়ী হয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। এরপর আথানারিক তার রাজ্যে খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক অভিযান পরিচালনা করেন।
হানদের আগমন ও গথদের বিরুদ্ধে বিজয়ের ফল
লিখিত সূত্রগুলিতে হানদের আকস্মিক উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়, বলে যে হানরা পূর্ব দিক থেকে খুব বেশি আগে ভলগা নদী অতিক্রম করেনি। (ভলগা নদী পন্টিক কাস্পিয়ান স্তেপ থেকে এসে কাস্পিয়ান সাগরে পড়েছে)। প্রতিবেশীদের উপর হানদের আকস্মিক আক্রমণের কারণ অজানা। একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে জলবায়ুর পরিবর্তন। তবে পিটার হিদার উল্লেখ করেছেন যে নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবে এটি অপ্রমাণিত। দ্বিতীয় সম্ভাবনা হিসাবে হিদার পরামর্শ দেন যে অন্য কোন যাযাবর গোষ্ঠী তাদের পশ্চিমদিকে ঠেলে দিয়ে থাকতে পারে। পিটার গোল্ডেন পরামর্শ দেন যে হানদের সম্ভবত জৌ-জান (Jou-jan) বা রৌরানরা পশ্চিম দিকে ঠেলে দিয়েছিল। তৃতীয় একটি সম্ভাবনা হচ্ছে ধনী ও সমৃদ্ধশালী রোমান সাম্রাজ্যের কাছাকাছি এসে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করার আকাঙ্ক্ষা এই আকষ্মিক আগমনের কারণ হতে পারে। সমসাময়িক অ্যামিয়ানাস মার্সেলিনাস অনুসারে, হানরা পন্টিক স্তেপে পরবর্তীতে আক্রমণ করে ৩৭৬ সালে হাজার হাজার গথকে রোমান সাম্রাজ্যে আশ্রয় নেয়ার জন্য লোয়ার দানিউবে চলে যেতে বাধ্য করলে রোমানরা হানদের সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এমন কিছু ইঙ্গিতও রয়েছে যে হানরা ইতিমধ্যে ৩৬০ এবং ৩৭০-এর দশকে ট্রান্সককেশিয়া আক্রমণ করেছিল। এই আক্রমণগুলি শেষ পর্যন্ত পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য এবং সাসানীয় সাম্রাজ্যকে যৌথভাবে ককেশাস পর্বতমালার মধ্য দিয়ে গিরিপথগুলোকে রক্ষা করতে বাধ্য করেছিল।
হানরা প্রথমে ডন নদীর পূর্ব দিকে অবস্থিত অ্যালানদের ভূমি আক্রমণ করে তাদের পরাজিত করে এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বা ডনের উপর দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। (ডন নদী কাস্পিয়ান স্তেপ দিয়ে এসে আজভ সাগরে পড়েছে)। এই সময়ের একটি উৎস হল রোমান ইতিহাসবিদ আমানিয়াস মার্সেলিনাসের লেখাগুলো, যিনি লিখেছিলেন যে সিথিয়ার গথিক রাজ্যগুলোতে ৩৭০-এর দশকে হানিক আধিপত্য শুরু হয়েছিল। এটা সম্ভব যে হানিক আক্রমণটি পূর্বদিকে গথিক সম্প্রসারণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে এসেছিল। মায়েনচেন-হেলফেন মনে করেন যে সরাসরি বিজয়ের পরিবর্তে হানরা অ্যালানদের গোষ্ঠীর সাথে জোটবদ্ধ হয়েছিল। অনেক পরে ইতিহাসবিদ জর্ডানেস উল্লেখ করেছিলেন যে, হানরা মিওটিয়ান জলাভূমি (আজভ সাগর) এলাকার যুদ্ধে “আলপিডজুরি, অ্যালসিল্ডজুরি, ইতিমারি, টুনকারসি এবং বোইসিদের” জয় করেছিল। এরা ছিল সম্ভাব্য তুর্কি-ভাষী যাযাবর উপজাতি, পরবর্তীতে যাদেরকে হানদের অধীনে দানিউব বরাবর অঞ্চলে বসবাসের কথা উল্লেখ করা হয়। জর্ডানেস দাবি করেন যে এই সময়ে হানদের নেতৃত্বে ছিলেন একজন বালাম্বার (Balamber) নামে এক রাজা। এই রাজার অস্তিত্ব নিয়ে ই. এ. থম্পসন সন্দিহান, কিন্তু তিনি এটা স্বীকার করেন যে, “তাদের এমন নেতৃস্থানীয় লোক ছিল যারা অন্যদের তুলনায় বেশি সেনাকে যুদ্ধে নামাতে পারত।” হিউন জিন কিম দাবি করেন, জর্ডানেস খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দীর অস্ট্রোগথিক রাজা ভালামেরের (Valamer) ওপর ভিত্তি করে বালাম্বার নামক চরিত্রটি তৈরি করেছিলেন। তবে মায়েনচেন-হেলফেন মনে করেন যে, বালাম্বার একজন ঐতিহাসিক চরিত্র অর্থাৎ হানদের রাজা ছিলেন, এবং ডেনিস সিনোর পরামর্শ দেন যে “বালম্বার কেবল একটি উপজাতি বা যোদ্ধাদের একটি অ্যাডহক (পূর্ব পরিকল্পিত নয় এমন, দরকারে সৃষ্ট) গ্রুপের নেতা ছিলেন”।
যাই হোক, অ্যালানদের ওপর বিজয় লাভ করার পর হানরা ও তাদের অ্যালান সহায়করা ডনের পশ্চিমে গ্রিউথুঙ্গি (Greuthungi) বা পূর্ব গথদের ধনী বসতিগুলি লুণ্ঠন করতে শুরু করে। মায়েনচেন-হেলফেন পরামর্শ দেন যে এই অ্যালানদের সাথে তাদের নতুন জোটের ফলে হানরা গথদের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল। গ্রিউথুঙ্গিক রাজা এরমানারিক (Ermanaric) কিছু সময়ের জন্য হানদের প্রতিরোধ করেছিলেন, কিন্তু আমিয়ানাস মার্সেলিনাসের মতে তিনি অবশেষে “তিনি আত্মহত্যার মাধ্যমে তার ভয় থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন”। মার্সেলিনাসের প্রতিবেদনে এরমানারিকের আত্মহত্যা বা তার রিচুয়াল সেক্রিফাইসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার গ্রেট-নেফিউ ভিথিমিরিস (Vithimiris) তার স্থলাভিষিক্ত হন। আমিয়ানাসের মতে, ভিথিমিরিস হানদেরকে গ্রিউথুঙ্গির ভূমি আক্রমণ করা অ্যালানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভাড়া করেছিলেন, কিন্তু তিনি একটি যুদ্ধে নিহত হন। কিম পরামর্শ দেন যে আমিয়ানাস ঘটনাগুলোতে গোল পাকিয়েছেন। অ্যালানরা হানদের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়ে সম্ভবত গথদের আক্রমণ করেছিল, যারা তখন সাহায্যের জন্য হানদের আহ্বান জানিয়েছিল। হানরা অ্যালানদের সাথে মোকাবিলা করার পরে “সম্ভবত ম্যাকিয়াভেলিয়ার রীতিতে দুর্বল গ্রিউথুঙ্গি গথদের ওপর আক্রমণ করেছিল এবং তাদেরও জয় করেছিল।”
ভিথিমিরিসের মৃত্যুর পর বেশিরভাগ গ্রিউথুঙ্গি হানদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এরমানারিকের আত্মহত্যার পর গ্রেউথুঙ্গি ধীরে ধীরে হানিক আধিপত্যের অধীনস্ত হয়ে পড়ে। ক্রিস্টোফার আই. বেকউইথ পরামর্শ দেন যে ইউরোপ এবং রোমান সাম্রাজ্যে হানিক চাপ ছিল পশ্চিমে স্বাধীন গথদের বশীভূত করার একটি প্রচেষ্টা। তাদের হানিমান্ড (Hunimund) নামে এক রাজা ছিল, যার নামের অর্থ হচ্ছে “হানদের আশ্রিত”। গ্রিউথুঙ্গি এবং থেরভিঙ্গি (Thervingi) বা পশ্চিম গথদের ভূমির মধ্যে সীমানা ছিল নিস্তার নদী। গ্রিউথুঙ্গিদের মধ্যে যারা প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা নিস্তারের দিকে যাত্রা করেছিল। তারা আলাথিয়াস (Alatheus) এবং স্যাফ্রাক্সের (Saphrax) অধীনে ছিল, কারণ ভিথিমিরিসের পুত্র ভিদেরিকাস তখন কেবলই শিশু, আলথিয়াস ও স্যাফ্রাক্স ছিলেন শিশু ভিদেরিকাসের দুই কো-রিজেন্ট বা সহ-অভিভাবক। থেরভিঙ্গির নেতা আথানারিক (Athanaric) এই দুই নেতাকে সাথে নিয়ে নিস্তার বরাবর উদ্বাস্তুদের সাথে দেখা করেছিলেন। এদিকে একটি হান সেনাবাহিনী গথদেরকে বাইপাস করে পেছন থেকে তাদের আক্রমণ করে। যার ফলে আথানারিক কারপেথিয়ান পর্বতমালার দিকে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। অ্যাথানারিক যে কারপেথিয়ান পর্বতমালায় পশ্চাদপ্রসরণ করতে বাধ হন তাকে সাগাগুলোতে একে কাউকাল্যান্ড হিসাবে উল্লেখ করা হয়। অ্যামব্রোস তার ডি স্পিরিটু স্যাঙ্কটো (পবিত্র আত্মার উপর) গ্রন্থে ৩৭৬ সালের আগে আথানারিকের রাজকীয় উপাধিগুলোর একটি রেফারেন্স দেন। গথ এবং হানদের মধ্যে যুদ্ধগুলো মধ্যযুগীয় আইসল্যান্ডীয় সাগায় Hlöðskviða (গথস এবং হানদের যুদ্ধ) নামে বর্ণিত হয়েছে। সাগাগুলিতে লেখা হয়েছে গিটদের (Geats) রাজা গিজুর (Gizur) হানদের সাথে একটি মহাকাব্যিক দ্বন্দ্বে গথদের সহায়তা করতে এসেছিলেন, যদিও এই সাগাটি পরবর্তী গথিক-হানিক দ্বন্দ্ব থেকেও উদ্ভূত হয়ে থাকতে পারে।
যাই হোক, আথানারিক তার সীমান্তকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নিস্তারের পশ্চিমে ভূমিতে হানরা অভিযান চালিয়ে যেতে থাকে। বেশিরভাগ থেরভিঙ্গি বুঝতে পেরেছিল যে তারা হানদেরকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। যদিও হানরা সফলভাবে গথদের অনেককে বশীভূত করেছিল, এবং এর ফলে গথদের অনেকেই পরবর্তীকালে হানদের বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। তবুও ফ্রিটিগার্ন সেই পথে যাননি। বরং তিনি ৩৭৬ সালে তার লোকদের একটি অংশকে নিয়ে পূর্ব রোমান সম্রাট ভ্যালেন্সের কাছে গিয়েছিলেন এবং লোয়ার দানিউবের দক্ষিণ তীরে বসতি স্থাপনের জন্য আশ্রয় চান। অ্যালাথিয়াস এবং স্যাফ্রাক্সের নেতৃত্বে গ্রেউথিঙ্গি বাহিনীও তাদের দেখাদেখি নদী পাড় করতে চাচ্ছিল। আর্মেনিয়ার সাসানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বেশিরভাগ রোমান সৈন্যকে বলকান উপদ্বীপ থেকে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সম্রাট ভ্যালেনস থেরভিঙ্গিদেরকে লোয়ার দানিউব অতিক্রম করার এবং ৩৭৬ সালের শরৎকালে রোমান সাম্রাজ্যে বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলেন। জোসিমাসের মতে, থেরভিঙ্গিদের দেখাদেখি গ্রেউথিঙ্গিরাও রোমান সাম্রাজ্যে প্রবেশ করে, সেই সাথে তাইফালি (Taifali) এবং অন্যান্য উপজাতিরা যা পূর্বে গথ এবং তাইফালিদের সাথে পূর্বে নিম্ন দানিউবের উত্তরে বসবাস করত তারাও নিম্ন দানিউব ক্রস করে রোমান সাম্রাজ্যের ভেতরে চলে এলো। খাদ্যের অভাব এবং নিপীড়ন ৩৭৭ সালের গোড়ার দিকে গথদেরকে রোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দিকে পরিচালিত করে। গথ ও রোমানদের মধ্যে পরবর্তী যুদ্ধ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল। ভ্যালেন্স থেরভিঙ্গিদেরকে নদী পাড় করার অনুমতি দান করেন, এবং এমনকি তাদের নদী পাড়াপারের জন্য নৌকা দিয়ে সহায়তাও করেছিলেন। দানিউব জুড়ে গথদের এভাবে সরে আসাটি সম্ভবত স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না, বরং সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় সদস্যদের মধ্যে দীর্ঘ বিতর্কের পরে তারা সাবধানে পরিকল্পিত অপারেশন শুরু হয়েছিল, এবং তাদেরকে দানিউবের দক্ষিণে রোমানদের অঞ্চলে নিয়ে এসেছিল। রোমানদের অঞ্চলে আগমনের পরে, রোমানদের সাথে গথদের চুক্তি অনুসারে তাদেরকে নিরস্ত্র করা হয়েছিল, যদিও তাদের মধ্যে অনেকেই তখনও অস্ত্র রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। মোসোগথরা থ্রেস এবং মিশিয়ায় বসতি স্থাপন করেছিল।
গথিক যুদ্ধের (৩৭৬-৮২ খ্রি.) পটভূমি
৩৭৬ সালের গ্রীষ্মে রোমান সাম্রাজ্যের সীমানা দানিউব নদীতে এসে হানদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য রোমান সম্রাটের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। সেখানে দুটি দল ছিল: ফ্রিটিগার্ন (Fritigern) ও আলাভিভাসের (Alavivus) নেতৃত্বে থেরভিঙ্গিরা আর আলাথিউস (Alatheus) এবং স্যাফ্রাক্সের (Saphrax) নেতৃত্বে গ্রেউথুঙ্গিরা। ইউনাপিয়াস বলেন, বেসামরিক নাগরিকসহ তাদের সংখ্যা ২০০,০০০ হিসাবে বর্ণনা করেছেন তবে পিটার হিদার অনুমান করেছেন যে থেরভিঙ্গিদের মাত্র ১০,০০০ যোদ্ধা এবং মোট ৫০,০০০ বেসামরিক লোক থাকতে পারে, গ্রিউথুঙ্গিদের সংখ্যাও একই রকম হয়ে থাকবে। কেমব্রিজ প্রাচীন ইতিহাস প্রায় ৯০,০০০ মানুষের অনুমান করে।
গথরা পূর্ব রোমান সম্রাট ভ্যালেন্সের কাছে রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করে রোমান সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে তাদের লোকদের বসতি স্থাপনের অনুমতি চেয়েছিল। তাদের আসতে কিছুটা সময় লেগেছিল, কারণ সম্রাট অ্যান্টিয়কে আর্মেনিয়া ও আইবেরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাসানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি সমরাভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার বাহিনীর অধিকাংশই দানিউব থেকে অনেক দূরে প্রাচ্যে অবস্থান করছিল। প্রাচীন সূত্রগুলি সর্বসম্মত যে ভ্যালেন্স গথদের আগমনে সন্তুষ্ট ছিলেন, কারণ এর ফলে তার সেনাদলে কম খরচেই নতুন লোকেদের আগমনের সুযোগ তৈরি হবে। ভ্যালেন্স পূর্ব সীমান্তে বিশাল রোমান সেনাবাহিনী নিয়ে অবস্থান করছেন, এর অর্থ হচ্ছে বলকান অঞ্চলে গথদের নিয়ন্ত্রণ করার মত সেনাবাহিনী রোমান সাম্রাজ্যে নেই। তাই ভ্যালেনস যখন থেরভিঙ্গিদেরকে তার সাম্রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলেন তখন তিনি অবশ্যই বিপদের আশঙ্কা করেছিলেন, এবং তিনি তাদের তাদেরকে শর্তগুলি দিয়েছিলেন সেগুলো তাদের জন্য অত্যন্ত অনুকূল ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের ভেতর বর্বর উপজাতিদের বসতি স্থাপনের ঘটনা এই প্রথম নয়। এক্ষেত্রে যেটা স্বাভাবিক রীতি ছিল তা হচ্ছে এই উদ্বাস্তুদের মধ্য থেকে কিছু লোককে রোমান সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হবে, আর বাকিদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে সম্রাটের বিবেচনার ভিত্তিতে সাম্রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে পুনর্বাসিত করা হবে। এর ফলে এরা সমন্বিতভাবে সাম্রাজ্যের জন্য কোন হুমকিও সৃষ্টি করবে না, আবার তারা বৃহত্তর রোমান জনসংখ্যার মধ্যেও একীভূত হবে। চুক্তিটি থেরভিঙ্গিদের সাথে তাদের বসতির স্থান, থ্রেস বেছে নেওয়ার অনুমতি দিয়ে তাদের সাথে আলাদা ছিল এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুমতি দেয়। আলোচনার সময়, থারভিংরা খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিল। গ্রাথুঙ্গির কথা বলতে গেলে, রোমান সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী নদীটি অবরুদ্ধ করে এবং তাদের অতিক্রম করতে অস্বীকার করে। কিন্তু এবারে থেরভিঙ্গিরা সেই চিরাচরিত চুক্তিটিকে মানতে চাইল না। তারা বলল তারা কিছুতেই বিচ্ছিন্ন হবেনা, বরং থ্রেসে তারা একতাবদ্ধ হয়েই বাস করবে। আর সেভাবেই চুক্তিটি হলো। আলোচনার সময় থেরভিঙ্গিরা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছিল। এগুলো ছিল থেরভিঙ্গিদের কাহিনী। কিন্তু গ্রেউথিঙ্গিদেরকে রোমানরা দানিউব ক্রস করতে দেয়নি। রোমান স্থল ও নৌবাহিনী তাদেরকে ব্লক করে দিয়েছিল।
থেরভিঙ্গিদের সম্ভবত ডুরোস্ট্রামের দুর্গে বা তার কাছাকাছি অতিক্রম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। রোমানরা এদেরকে নদী পারাপারের জন্য নৌকা, রাফট ও ফাঁপা গাছের গুঁড়ি নিয়ে গিয়েছিল। সতর্কতার সাথেই নিশ্চিত করা হয়েছিল যাতে রোমান রাজ্যের কোন ভবিষ্যৎ ধ্বংসকারী যাতে পেছনে না থাকে, এমনকি তার যদি কোন কঠিন রোগ থাকে তবুও নয়। আমিয়ানাস মার্সেলিনাস লেখেন, এত কিছুর পরও নদীটি বৃষ্টিতে ফুলে ওঠে এবং অনেকেই ডুবে যায়। গথদের তাদের অস্ত্র ত্যাগ করার কথা ছিল। কিন্তু সব গথরা সেটা করেনি। রোমানদের অনেকেই ঘুষ গ্রহণের বিনিময়ে তাদের অস্ত্র রাখার সুযোগ দেয়, তার ওপর রোমানদের অত জনবলও ছিল না যে সব গথদের অস্ত্রের উপস্থিতি চেক করে দেখবে। অন্যদিকে রোমান বাহিনীতে নিযুক্ত হওয়া গথদের অনেকেরই তাদের নিজস্ব অস্ত্রের প্রয়োজন হবে – এই ভেবেও অনেক গথকে অস্ত্র রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। ভূমি বণ্টন দীর্ঘ সময়ের কাজ, এই সময়টুকুতে থেরভিঙ্গিদের জন্য রোমানরা লোয়ার মিসিয়ায় (Lower Mœsia) দানিউবের দক্ষিণ তীর বরাবর থেরভিঙ্গিদের আপাতকালিন বসতি স্থাপন করেছিল, এই সময়ে রোমান রাষ্ট্রেরই তাদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করার কথা ছিল।
গথিক যুদ্ধের সূত্রপাত
এত ছোট এলাকার এত মানুষ এসে পড়ায় খাদ্য সংকটের সৃষ্টি হয়, এবং থেরভিঙ্গিরা অনাহারে সময় কাটাতে শুরু করে। রোমান লজিস্টিকস গথদের এই বিশাল সংখ্যার সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি, এবং লুপিসিনাসের কমান্ডের অধীনে কর্মকর্তারা গথদের হাতে পৌঁছানোর আগেই বেশিরভাগ খাবার বিক্রি করে দিয়েছিলেন। মরিয়া হয়ে গথিক পরিবারগুলি তাদের অনেক শিশুকে রোমানদের কাছে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল। এক্ষেত্রে একজন শিশুর দাম ছিল একটি কুকুরের মাংস। ভ্যালেন্সের স্থানীয় মন্ত্রীদের দুর্নীতি দেখা দিলে সমস্যা দেখা দেয়। বেপরোয়া, প্রার্থনাকারী এবং ক্রমবর্ধমান ক্ষুধার্ত ভুক্তভোগীরা ভ্যালেন্সের মন্ত্রীদের মধ্যে প্রলোভনের সৃষ্টি করে। তারা নির্লজ্জভাবে গথদের কাছ থেকে তাদের সম্পত্তি এবং এমনকি তাদের স্ত্রী ও কন্যাদেরও সামান্য কিছু খাদ্য বা অন্য কিছুর বিনিময়ে ছিনিয়ে নেয়। ভ্যালেন্স এই সাপ্লাইগুলোকে গথদের মধ্যে উদারভাবে বিলিয়ে দিতে বলেছিলেন, কিন্তু মন্ত্রীরা এগুলোকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগায়। এই মতও আছে যে লুপিসিনাস নিজেও গথদের নিপীড়ন ও তাদের সম্পদের লুণ্ঠনের ভাগীদার ছিলেন। রোমানদের এই আচরণের ফলে থেরভিঙ্গি গথরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং লুপিসিনাস তাদেরকে দক্ষিণে তার আঞ্চলিক সদর দপ্তর মার্সিয়ানোপলে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন। দক্ষিণের এদের স্থানান্তরনকে সুরক্ষিত করার জন্য লুপিসিনাস দানিউবের পাহারারত রোমান সৈন্যদের বের করে আনতে বাধ্য হন, আর তার ফলে কোন বাধা না পেয়ে গ্রেউথুঙ্গিরাও অবিলম্বে রোমান অঞ্চলে প্রবেশ করে। এর ফলে গ্রেউথুঙ্গিরা যাতে তাদের অভিযানে যোগ দিতে পারে সেজন্য থেরভিঙ্গিরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের মার্চ বা অভিযানকে ধীর করে দেয়। থেরভিঙ্গিরা মার্সিয়ানোপেলের কাছে আসার সাথে সাথে লুপিসিনাস ফ্রিটিগার্ন, আলাভিভাস এবং তাদের পরিচারকদের একটি ছোট দলকে শহরের অভ্যন্তরে তার সাথে খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তিনি হয়তো গথ নেতাদেরকে ঘুষ দিয়ে তাদের বিদ্রোহকে শান্ত করার জন্য ও তাদের ওপর রোমানদের শোষণের ব্যাপারে সম্রাটকে কিছু না জানানোর কথা বলতেই ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন। গথদের বেশিরভাগের জন্য শহরের বাইরে কিছু দূরে ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। তাদের ক্যাম্পের কাছে ও শহরের মধ্যে রোমান সৈন্যরা ছিল। এই সময়ে গথরা রোমানদের বাজার থেকে খাদ্যের সরবরাহ কিনতে চাইছিল। কিন্তু রোমান সৈন্যরা তাদের এই দাবিকে বারবার প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে সেখানে মারামারি শুরু হয় এবং অনেক রোমান সৈন্যই মারা যায় ও তাদের লুঠ করা হয়। লুপিসিনাস ভোজসভায় বসার সময় এই খবরটি পান। খবরটি শুনে তিনি ফ্রিটিগার্ন এবং আলাভিভাসকে জিম্মি করে রাখার আদেশ দেন এবং তাদের সাথে আসা লোকদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন। এই হত্যার খবর গথদের কাছে এলে তারা মার্সিয়ানোপলে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়। ফ্রিটিগার্ন লুপিসিনাসকে পরামর্শ দেন যে, পরিস্থিতি শান্ত করার সর্বোত্তম উপায় হলো তাকে তার লোকেদের সাথে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেয়া এবং তাদের দেখানোর অনুমতি দেওয়া যে তিনি এখনও বেঁচে আছেন। লুপিসিনাস তাতে রাজি হন এবং তাকে মুক্ত করেন। আলাভিভাসের কথা নথিতে উল্লেখ করা হয়নি, আর তার সাথে কী হয়েছিল তা অজানাই থেকে গেছে।
ফ্রিটিগার্ন ফিরে আসেন, কিন্তু এভাবে অপমান নিয়ে বেঁচে থাকার বদলে ফ্রিটিগার্ন ও থেরভিঙ্গিরা সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা রোমানদের সাথে তাদের চুক্তিটি ভঙ্গ করবে এবং রোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। গ্রেউথুঙ্গিরাও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাথে বিদ্রোহে যোগদান করে। ফ্রিটিগার্ন গথদের মার্সিয়ানোপল থেকে দূরে সিথিয়ার দিকে নিয়ে যান। লুপিসিনিয়াস সেই সময়ে যতটা পারেন তত সৈন্যকে জড়ো করেছিলেন, সব মিলে ৫,০০০ এর মত রোমান সেনা নিয়ে তিনি শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ফ্রিটিগার্নের ৭-৮ হাজার এর থেরভিঙ্গি গথ বাহিনীকে অনুসরণ করেন ও পরে আক্রমণ করেন। এর ফলে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তা মার্সিয়ানোপোলের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে রোমানরা রক্ষণাত্মক অবস্থান গ্রহণ করেছিল, আর গথরা একটি তাৎক্ষণিক ও সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। তারা তাদের ঢাল, তলোয়ার এবং বর্শা দিয়ে রোমানদের আঘাত ও হত্যা করেছিল। রোমান বাহিনী সাহসিকতার সাথেই লড়াই করেছিল, কিন্তু বাহিনীর অর্ধেকেরও বেশি সৈন্য মারা গেলে লুপিকিনিউস পালিয়ে যান। এভাবে শেষ পর্যন্ত ক্রুদ্ধ বর্বরদের সংখ্যা এবং নৃশংসতার কাছে রোমানরা পরাজিত হয়। মৃত রোমান সৈন্যদের কাছ থেকে গথরা নতুন অস্ত্র এবং বর্ম লাভ করে। এভাবে রোমান অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গথরা আশপাশের গ্রামাঞ্চলে আক্রমণ ও লুণ্ঠন করে। যা যা নেয়ার মত তারা তা তা গ্রহণ করে, আর যা যা নেয়া সম্ভব না তারা তা পুড়িয়ে ও ধ্বংস করে দিয়ে যায়।
অ্যাড্রিয়ানোপলে রোমানদের দ্বারা নিযুক্ত একটি ছোট গথিক বাহিনীকে সুয়েরিডাস এবং কোলিয়াসের কমান্ডের অধীনে গ্যারিসন বা ঘাঁটি করা হয়েছিল। এই সুয়েরিডাস ও কোলিয়াস নিজেরাই জাতিতে গথ ছিল। যখন তারা এই ঘটনাগুলোর খবর পায় তখন তারা নিজেদের কল্যাণকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করে। সম্রাট ভ্যালেন্স এই সময়ে গথিক নিয়ন্ত্রণে রোমান ঘাঁটির কথা ভেবে গথিক বিদ্রোহের ভয়ে ভীত হয়ে সুয়েরিডাস ও কলিয়াসকে পূর্ব দিকে হেলেসপন্টাসে সরে আসতে নির্দেশ দেন। এই দুই কমান্ডার তখন তাদের যাত্রাপথের জন্য খাদ্য ও অর্থ চান, সেই সাথে যাত্রার প্রস্তুতির জন্য দুই দিনের সময়ও চান। কিন্তু স্থানীয় রোমান ম্যাজিস্ট্রেট এই ঘাঁটির প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন, কারণ এর আগে তারা তার শহরের বাইরের ভিলায় এরা লুণ্ঠন করেছিল। তাই তিনি অ্যাড্রিয়ানোপল শহরের লোকদের অস্ত্রে সজ্জিত করে এই সেনাঘাঁটির বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন। উন্মত্ত জনতা দাবি করে গথদেরকে তখনই শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রথম দিকে সুয়েরিডাস এবং কোলিয়াসের অধীনে থাকা সেনারা এই জনরোষের বিরুদ্ধে স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল, উন্মত্ত জনতা তাদেরকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আঘাত করা শুরু করলে তারা জনতাকে আক্রমণ করে অনেককেই হত্যা করে। এরপর তারা শহর ত্যাগ করে ও ফ্রিটিগার্নের পক্ষে যোগদান করে। এরপর গথরা অ্যাড্রিয়ানোপল শহর অবরোধ করে। কিন্তু অবরোধ পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট সরঞ্জাম এবং অভিজ্ঞতা তাদের ছিলনা। সেই সাথে শহর থেকে ছোড়া মিসাইলের আঘাতে অনেক গথই মারা যায়। এর ফলে তারা শহরটি ত্যাগ করে চলে যায়। এরপর গথরা আরও একবার ধনী এবং অরক্ষিত গ্রামাঞ্চলকে লুণ্ঠন করার জন্য ছড়িয়ে পড়ে। বন্দী এবং রোমান বিশ্বাসঘাতকদের ব্যবহার করে গথরা লুকানো মজুদ ও সমৃদ্ধ গ্রামগুলোতে আক্রমণ করে। গ্রামগুলোতে গিয়ে গথরা বয়স ও লিঙ্গ নির্বিশেষে মানুষ হত্যা করে, সব জায়গাতেই হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিকাণ্ড চোখে পড়ত। মাতৃক্রোড়ে থাকা শিশুদেরকে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করা হতো, বিবাহিতা নারীদের স্বামীদেরকে চোখের সামনে হত্যা করে তুলে নিয়ে যাওয়া হতো, শিশু কিশোরদেরকে তাদের পিতামাতার লাশের ওপর দিয়ে টেনে হিচরে নিয়ে যাওয়া হতো।
৩৭৭ সালে গথদের সাথে সংঘাত
রোমান অঞ্চলের অভ্যন্তরের অনেক গথ ফ্রিটিগার্নের সাথে যোগ দিয়েছিল, যারা রোমান সাম্রাজ্যে ক্রীতদাস, খনি শ্রমিক এবং বন্দী হিসেবে অবস্থান করছিল। দুর্গযুক্ত শহরগুলোতে গথরা আক্রমণ করতে পারত না, কিন্তু শহরের বাইরের গ্রামাঞ্চলগুলো ছিল গথদের সহজ শিকার। গথরা রোমান গ্রামাঞ্চল থেকে চুরি করা সমস্ত লুণ্ঠন এবং সরবরাহগুলো ধরে রাখার জন্য একটি বিশাল ওয়াগন ট্রেন তৈরি করেছিল এবং তারা রোমানদের কাছ থেকে যেসব ভোগান্তি সহ্য করেছিল তার জন্য রোমান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাদের অনেক ক্রোধ ছিল। ক্ষুধার্ত শরণার্থী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল গথরা এভাবে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত হয়েছিল। সম্রাট ভ্যালেনস এন্টিওকে তার বেস থেকে এই পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করেন। তাই তিনি জেনারেল ভিক্টরকে সাসানীয়দের সাথে তাৎক্ষণিক শান্তি আলোচনা করার জন্য প্রেরণ করেন, আর পূর্ব রোমান বাহিনীকে থ্রেসে (থ্রেস তদকালীন রোমান সাম্রাজ্যে থ্রেসিয়া নামক প্রদেশ ছিল) স্থানান্তর করতে শুরু করেন। প্রধান সেনাবাহিনী একত্রিত হলেও, তিনি ট্রাইয়ানাস এবং প্রোফুটুরাসের অধীনে একটি অগ্রিম বাহিনী প্রেরণ করেছিলেন। ভ্যালেনস সাহায্যের জন্য তার সহ-সম্রাট ও নেফিউ পশ্চিম রোমান সম্রাট গ্রেশিয়ানের সাথেও যোগাযোগ করেছিলেন। গ্রেশিয়ান এদিকে চিন্তিত ছিলেন এই গথরা পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের সৈন্যদের ধাওয়ায় পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যে না চলে আসে। তিনি তাই বলকান পর্বতমালার (তদকালীন উৎসে হিমাস পর্বতমালা) গিরিপথগুলো প্রতিরক্ষার জন্য তার গার্ডদের প্রধান রিকোমার ও জেনারেল ফ্রিগেডাসের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন। তবে গথদের পশ্চিম দিকে সরে আসা আটকানো ছাড়াও পূর্বের সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত হওয়াও এদের লক্ষ্য ছিল। এই বিশাল রোমান সেনাবাহিনী গথদের জন্য হুমকি নিয়ে আসে।
ট্রাইয়ানাস এবং প্রোফুটুরাস আর্মেনিয়া থেকে রোমান সৈন্যদের নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু প্যানোনিয়া থেকে রোমান সৈন্যদের ও ট্রান্স-আলপাইন সহায়ক বাহিনীকে নিয়ে আসা ফ্রিগেরিডাস অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। রিকোমার গ্রেশিয়ানের প্যালাটাইন আর্মির একটি অংশ নিয়ে এসেছিলেন। অন্যান্য নেতাদের মত নিয়ে সম্ভবত মারসিয়ানোপলে রিকোমার এই সম্মিলিত রোমান বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। গথরা বলকান পর্বতমালার (Haemus mountains) উত্তরে সরে যায় এবং রোমানরা এদের সাথে সংঘাতে জড়িত হয়। অ্যাড স্যালিসেস (“দ্য উইলোস”) নামে একটি জায়গায়, তারা উইলোসের যুদ্ধে লড়াই করেছিল। রোমানরা সংখ্যায় গথদের তুলনায় কম ছিল। রিকোমেরেসের নেতৃত্বে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের বাহিনীটি পশ্চিমদিকে অগ্রসর হয়, অন্যদিকে ট্রাইয়ানাস এবং প্রফুটুরাসের অধীনে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের বাহিনী উত্তর দিকে অগ্রসর হয় যেখানে তারা গথদের আক্রমণ করার জন্য একটি রোমান পক্ষের গথিক বাহিনীতে যোগ দেয় যারা সম্প্রতি ফ্রিটিগার্নের কমান্ডের অধীনে বিদ্রোহ করেছিল। এই যুদ্ধ নিয়ে আমিয়ানাস কিছু বিবরণ দিয়েছেন, তবে দুই পক্ষের সেনাদের সংখ্যা কত ছিল সেই ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি। একটা সময়ে রোমানদের লেফট উইং বা বাম ডানায় ভাঙ্গন ঘটে। কিন্তু দ্রুত এটিতে নতুন সেনা দিয়ে রিইনফোর্স করে ও রোমান শৃঙ্খলার মাধ্যমে একে ঠিক করে দেয়া হয়। যুদ্ধটি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ও সন্ধ্যায় গথরা যুদ্ধ ক্ষেত্র ত্যাগ করে তাদের ওয়াগন প্রাচীনের ভেতরে চলে গেলে যুদ্ধটি সমাপ্ত হয়। যুদ্ধটি একটি রক্তাক্ত ড্র এর মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছিল বলা যায়, যেখানে উভয় পক্ষই ব্যাপক হতাহতের শিকার হয়। রোমান জেনারেলদের মধ্যে প্রোফুটুরাস যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যান। যুদ্ধের পর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গথরা তাদের এই ওয়ার-ওয়াগন সারকেলের ভেতরে আবদ্ধ ছিল।
যুদ্ধের পরে রোমানরা মার্সিয়ানোপেলে পশ্চাদপসরণ করে, এবং ফ্রিটিগার্নের গথরা বেরিয়ে যাওয়ার আগে তাদের ওয়াগন দুর্গের মধ্যে সাত দিন অতিবাহিত কর। ফ্রিগারিডাস গথিক নেতা ফার্নোবিয়াসের অধীনে লুটপাট করা গথদের একটি দলকে ধ্বংস করে এবং যারা বেঁচেছিল তাদেরকে দাসে পরিণত করে ইতালিতে পাঠিয়ে দেন। সেই শরৎকালে, রিকোমার পরের বছরের সমরাভিযানের জন্য আরও সৈন্য সংগ্রহ করার জন্য গলে ফিরে আসেন। ভ্যালেনস ইতিমধ্যে ম্যাজিস্টার ইকুইটাম স্যাটার্নিনাসের অধীনে সৈন্যদের ট্রাইয়ানাসের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য থ্রেসে পাঠিয়েছিলেন। স্যাটার্নিনাস এবং ট্রাইয়ানাস গথদের ব্লক করার জন্য হেমাস গিরিপথগুলিতে দুর্গের একটি লাইন তৈরি করেছিলেন। রোমানরা আশা করছিল যে, শীতকালীন এবং অনাহারের কঠোরতায় গথরা দুর্বল হয়ে যাবে এবং তারপরে ফ্রিটিগার্ন বলকান পর্বতমালা এবং দানিউবের মধ্যবর্তী সমভূমিতে যুদ্ধ করতে বাধ্য হবে, যেখানে তাদেরকে শেষ করা যাবে। এদিকে অনাহারী গথরা বরাবরই ভয়ঙ্কর। তারা আবারও ক্ষুধার্ত এবং মরিয়া হয়ে গিরিপথ দিয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিল, কিন্তু প্রতিবারই তাদের প্রতিহত করা হয়েছিল। ফ্রিটিগার্ন তখন ভাড়াটে হান ও অ্যালানদের সহায়তা গ্রহণ করে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করেন। যে হান ও অ্যালানদের তাড়া খেয়ে গথরা রোমানদের অঞ্চলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল, এখন রোমানদের বিরুদ্ধে সেই হান ও অ্যালানরাই গথদের পরম মিত্র। স্যাটার্নিনাস বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি আর এই হান ও অ্যালানদের সহায়তায় নতুন এই উত্থিত শক্তি গথদের বিরুদ্ধে গিরিপথগুলো ধরে রাখতে পারবেন না, তাই তিনিও গিরিপথগুলোতে তার অবরোধ পরিত্যাগ করেন এবং পশ্চাদপসরণ করেন। এভাবে গথরা নতুন করে আক্রমণ করার জন্য তৈরি হয়, এবং তাদের এই নতুন মিত্র হান এবং অ্যালানদের সাথে মিলে লুণ্ঠনের সন্ধানে দক্ষিণে চলে আসে। তারা দক্ষিণ তদকালিন থ্রেস ও বর্তমান বুলগেরিয়ার রোডোপ পর্বতমালা (Rhodope Mountains) এবং এশিয়া ও ইউরোপের বিভেদ সৃষ্টিকারী হেলেস্পন্ট (বর্তমান তুরস্কের দার্দানালেস) পর্যন্ত পৌঁছে যায়। বলকান পর্বতমালা থেকে রোডপ পর্বতমালা ও হেলেসপন্টের মধ্যবর্তী দূরত্ব কম নয়, আর এর মধ্যে রোমান সাম্রাজ্যের দুটো প্রদেশ পড়ে – মিশিয়া ইনফেরিয়র (Moesia inferior) একটা বিশাল অঞ্চল অবস্থিত। বলকানের সেই অঞ্চলে এই গথরা তখন প্রচুর লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। অনেক শিশুহত্যা ও ধর্ষণের ঘটনাও তদকালীন বিবরণে পাওয়া যায়।
যাই হোক, এভাবে তারা দক্ষিণ দিকে আসতে আসতে তদকালীন থ্রেসের ডেভেলটোস বা ডেউলটাম বা ডিবালটাম শহরের কাছে পৌঁছে যায়, যা বর্তমান বুলগেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। ৩৭৭ সালে এখানে গথ, হান ও অ্যালানদের সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে রোমানদের মধ্যে ডিবালটামের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ট্রাইবুনাম স্কুটারিওরাম বা গার্ডদের কমান্ডার বারজিমেরেস ও অন্যান্য জেনারেলদেরকে গথদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পূর্ব থেকে থ্রেসে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং এরা এসে ডিবালটাম শহরের আগমনের পরে ডিবালটামের বাইরে শিবির স্থাপন শুরু করেছিল। রোমান সেনাবাহিনী স্কুটারি অশ্বারোহী বাহিনী, কর্নুটি এবং পদাতিকদের অন্যান্য ইউনিট নিয়ে গঠিত ছিল। রোমানদের রাতে শিবির তৈরি করার সময় গথরা তাদেরকে অবাক করে দিয়ে আক্রমণ করে। বারজিমেরেস দ্রুত সেনাবাহিনীকে ব্যাটল ফরমেশনে সংঘটিত করেন। রোমানরা গথদেরকে তাদের আক্রমণটিকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করানোর চেষ্টা করছিল, আর মনে হচ্ছিল যুদ্ধটি রাত পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কিন্তু পরে অশ্বারোহীদের একটি বিশাল বাহিনী যুদ্ধে যোগ দেয় এবং রোমান সেনাবাহিনীকে ঘিরে ফেলে অবাক করে দেয়। এবারে বার্জিমেরেস নিহত হন, ইকুইটিয়াস (একজন কুরা পালাতি বা মার্শাল অফ দ্য কোর্ট) বন্দী করা হয়, এবং রোমান সেনাবাহিনীর বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে যায়। গথ, হান ও অ্যালানরা এরপর ডিবালটাম শহর লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে এবং জেনারেল ফ্রিগেরিডাসকে আক্রমণ করার জন্য বেরিয়া (Beroea) বা অগাস্টা ট্রাজানার (বর্তমান বুলগেরিয়ার স্টারা জাগোরা শহর) দিকে অভিযান পরিচালনা করে, যেখানে তিনি অবস্থান করছিলেন। কিন্তু ফ্রিগেরিডাসের স্কাউটরা আক্রমণকারীদের সনাক্ত করে ফেলে এবং ফ্রিজেরিডাস তাৎক্ষণিকভাবে ইলিরিয়াতে ফিরে যান। কিন্তু এর ফলে অগাস্টা ট্রাজানা শহরটিকেও সম্মিলিত গথ, হান ও অ্যালানদের বাহিনী ধ্বংস করে দেয়। পরে ইকুইটিয়াস বন্দিদশা থেকে পালিয়ে যান। এই অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে সেই সময়ের রোমানদের তাদের ভিলাগুলোর পরিত্যাগ এবং ইচ্ছাকৃত ধ্বংসের চিহ্নের প্রমাণ পাওয়া যায়। গথদের এই ধ্বংসযজ্ঞ ভ্যালেনসকে আনুষ্ঠানিকভাবে মিশিয়া এবং সিথিয়ার জনসংখ্যার উপর কর হ্রাস করতে বাধ্য করেছিল।
৩৭৮ সালের আদ্রিয়ানোপোলের যুদ্ধ
আমার পূর্বের আর্টিকেল “বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের ইতিহাস – পর্ব ১ : টেট্রার্কি, কনস্ট্যান্টিনিয়ান ও ভ্যালেন্টিনিয়ানিক রাজবংশ ও অ্যাড্রিয়ানোপলের যুদ্ধে পরাজয়” এ এই যুদ্ধের বিস্তারিত আছে। কমেন্টে লিংক দিয়ে দেয়া হবে। সেখানে এর ডিটেইল পাবেন। যারা ইতিমধ্যে পড়েছেন, তারাও দেখতে পারেন, কারণ যুদ্ধের কাহিনী এডিট করে আরও বিস্তারিত করা হয়েছে।
৩৭৮ সালে অ্যাড্রিয়ানোপোলের যুদ্ধের পরবর্তী গথ-রোমান সংঘাত
যাই হোক, গথরা তাদের অ্যাড্রিয়ানোপোলের যুদ্ধের অবিশ্বাস্য বিজয় দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে এরপর অ্যাড্রিয়ানোপল শহরকে অবরুদ্ধ করে। কিন্তু শহরটি তাদেরকে প্রতিহত করে। শহরটির প্রাচীরগুলোকে শক্তিশালী করা হয়েছিল, গেটের পেছনে বিশাল পাথর স্থাপন করা হয়েছিল এবং আক্রমণকারীদের উপর তীর, পাথর, জ্যাভলিন এবং আর্টিলারি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এগুলোর ফলে অনেক গথ মারা গিয়েছিল, কিন্তু তারা কোন রকম সাফল্য লাভ করেনি। তাই তারা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছিল। তারা কিছু রোমান বিশ্বাসঘাতককে গথদের কাছ থেকে পালিয়ে এসেছে বলে শহরটিতে ঢুকতে বলেছিল। শহরটিতে ঢুকে তারা শহরের ভেতর আগুন জ্বালিয়ে দেবে, আর নগরবাসী সেই আগুন নেভাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে তারা প্রতিরক্ষাবিহীন প্রাচীরে আক্রমণ করবে। কিন্তু তাদের এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। রোমান বিশ্বাসঘাতকদেরকে নগরে প্রবেশ করানো হয় ঠিকই, কিন্তু তাদের বলা বিবরণগুলো আসল ঘটনার সাথে না মেলায় তারা ধরা পড়ে যায়। ফলে তাদেরকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়। এর ফলে তারা আসল কাহিনী স্বীকার করে, আর তার ফলে তাদেরকে শিরশ্ছেদ করা হয়। গথরা আরও একটি আক্রমণ শুরু করেছিল, তবে এটিও ব্যর্থ হয়েছিল। এই চূড়ান্ত পরাজয়ের পর গথরা হাল ছেড়ে দেয় এবং দূরে চলে যায়। তারা কিছু হান ও অ্যালানদের সাথে নিয়ে প্রথমে পেরিন্থাস এবং তারপরে কনস্টান্টিনোপলে যায়। কনস্ট্যান্টিনোপলে গথদের বিরুদ্ধে রোমানদের একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেখানে তারা শহরের আরব ঘাঁটির সহায়তায় কনস্টান্টিনোপলের ছোট যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল।
৩৭৮ সালের কনস্টান্টিনোপলের যুদ্ধটি ছিল অ্যাড্রিয়ানোপলের যুদ্ধে গথিক বিজয়ের পরে ৩৭৮ সালে ঘটা কনস্টান্টিনোপলের উপর একটি গথিক আক্রমণ। সম্রাট ভ্যালেন্সের বিধবা স্ত্রী কনস্ট্যান্টিনোপলে গথিকদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রস্তুত করেন এবং আরব যোদ্ধাদেরকে নিয়ে তিনি শহরটিকে শক্তিশালী করেন। এই আরব যোদ্ধারা এই যুদ্ধে চমৎকারভাবে বীরত্ব প্রদর্শন করেছিল। কথিত আছে, যুদ্ধের এক মুহূর্তে এক নেংটি পরা আরব গথদের বিরুদ্ধে হঠাৎ আক্রমণ করে, একজন গথের গলা কেটে তার রক্ত পান করে। এটা দেখে গথরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়, আর সেই সাথে শহরটির বিশাল আকার ও এর বিশাল বিশাল প্রাচীর দেখে হীনমন্য হয়ে যুদ্ধ ত্যাগ করে ফিরে যায়। অন্যান্য সূত্রগুলি মনে করে যে গথরা আসলে আক্রমণটি পরিত্যাগ করেছিল কারণ তারা সংখ্যায় রোমানদের তুলনায় অনেক কম ছিল। শেষ পর্যন্ত গথরা শহরে প্রবেশ না করে থ্রেস, ইলিরিয়া এবং ডাসিয়াতে ফিরে যায় ও পুনরায় এই সব অঞ্চলের গ্রামাঞ্চলে পূর্বের মত লুণ্ঠন করা শুরু করে।
ভ্যালেনস মারা যাওয়ার পর কিছু কাল পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যকে কোনও সম্রাট ছাড়াই চলতে হয়েছিল। পূর্বাঞ্চলের ম্যাজিস্টার মিলিটাম জুলিয়াস পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের অন্য কোথাও গথিক জনগোষ্ঠীকে ভয় পেতেন, তা গথ সিভিলিয়ান বা বেসামরিক নাগরিকই হোক, আর রোমান সাম্রাজ্যের অধীনস্ত গথিক সেনাবাহিনীই হোক। অ্যাড্রিয়ানোপলের ঘটনার পরে এই গথরা ফ্রিটিগার্নের সাথে মিত্রতা করে অন্যান্য প্রদেশগুলোতে এই সংকট ছড়িয়ে দিতে পারে – এই নিয়ে অনেক ভয় ছিল। তাই জুলিয়াস সীমান্তের নিকটবর্তী গথদেরকে লোভ দেখিয়ে এক জায়গায় একত্রিত করেন ও তাদের ওপর গণহত্যা চালান। ৩৭৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সীমান্তের নিকট গথদের এই গণহত্যার কথা সাম্রাজ্যের ভেতরের দিকের প্রদেশগুলোতে বাস করা গথদের কাছে পৌঁছে যায়। এর ফলে সেখানকার গথরা, বিশেষ করে এশিয়া মাইনোরের গথরা দাঙ্গা শুরু করে। রোমানরা এই দাঙ্গাগুলো দমন করে এবং সব অঞ্চলেই গথদেরকে হত্যা করা শুরু করে, তা তারা অপরাধীই হোক আর নিরপরাধ।
৩৭৯-৩৮২: প্রথম থিওডোসিয়াস এবং যুদ্ধের সমাপ্তি
৩৭৯ থেকে ৩৮২ সালের মধ্যে গথিক যুদ্ধের ঘটনাগুলির জন্য তেমন উৎস নেই এবং নথিগুলোতে বিভ্রান্তিকর বিবরণ পাওয়া যায়, বিশেষ করে নতুন পূর্ব রোমান সম্রাট হিসাবে প্রথম থিওডোসিয়াসের উত্থানের বিষয়ে নথিগুলো বেশ বিভ্রান্তিকর। হিস্পানিয়ায় জন্মগ্রহণকারী থিওডোসিয়াস একজন সফল জেনারেলের পুত্র ছিলেন। থিওডোসিয়াস হিসাবে ডুক্স মেসিয়া ৩৭৪ সালে সারমেশিয়ানদের বিরুদ্ধে পূর্ব বলকান অঞ্চলে সমরাভিযান চালিয়েছিলেন। পশ্চিম রোমান সম্রাট প্রথম ভ্যালেন্টিনিয়ানের মৃত্যুর পর তার বাবা রাজসভায় ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়ার পর, থিওডোসিয়াস স্পেনে তার এস্টেটে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কেন তাকে পূর্বাঞ্চলে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল তা একটি রহস্য। সম্ভবত তার সামরিক অভিজ্ঞতা এবং একজন নতুন সম্রাটের মধ্যে এর জন্য জরুরি প্রয়োজন তার সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে আসার পেছনে একটি ভূমিকা পালন করেছিল। দেখে মনে হচ্ছিল যে, থিওডোসিয়াস ডুক্স মোসিয়া হিসাবে তার পদটি ফিরে পেয়েছেন। তিনি সম্ভবত ৩৭৮ সালের শেষের দিকে গথদের বিরুদ্ধে সমরাভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ৩৭৯ সালের ১৯ জানুয়ারি থিওডোসিয়াসকে সম্রাট পদে ভূষিত করা হয়। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে ঐতিহাসিক সূত্রগুলো নীরব। গ্রেশিয়ান থিওডোসিয়াসকে সম্রাট হিসেবে উন্নীত করেছিলেন, নাকি পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের বেঁচে যাওয়া সেনাবাহিনী গ্রেশিয়ানকে থিওডোসিয়াসকে তার সহকর্মী হিসাবে গ্রহণ করতে বাধ্য করেছিল তা অজানা। কারণ যাই হোক না কেন, গ্রেশিয়ান থিওডোসিয়াসকে তার সহ-সম্রাট হিসাবে স্বীকার করেছিলেন, তবে তিনি আলেমান্নিদের মোকাবেলা করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পশ্চিমে চলে যান। তাকে ডাসিয়া এবং ম্যাসেডোনিয়ার ওয়েস্টার্ন ইম্পেরিয়াল ডায়োসিস দেয়া ছাড়াও গ্রেশিয়ান গথদের সাথে মোকাবিলা করার জন্য থিওডোসিয়াসকে সামান্য সাহায্য করেছিলেন।
থিওডোসিয়াস থেসালোনিকায় তার সদর দপ্তরে একটি নতুন সেনাবাহিনী নিয়োগ শুরু করেছিলেন। সেখানে কৃষকদেরকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া শুরু হয়েছিল, এবং দানিউবের বাইরে থেকে বর্বর ভাড়াটেদের কেনা হয়েছিল। কৃষকদেরকে সেনাবাহিনীতে নেবার বিষয়টি ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। কেউ কেউ সেনাবাহিনীতে যাতে যোগ দিতে না হয় তাই নিজেদের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে ফেলেছিল, কিন্তু আরও অনেকে ছিল যারা তাদের জমির মালিকদের সহায়তায় লুকিয়ে থাকে বা পালিয়ে যায়। এরা সেনাবাহিনীর কাছে নিজেদের সহকর্মীদের হারিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। থিওডোসিয়াস অনেক কঠোর আইন দিয়ে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। তিনি লুকিয়ে থাকা ও পালিয়ে যাওয়া কৃষকদের শাস্তি দেন, এবং যারা তাদের ধরে নিয়ে আসে তাদের পুরস্কৃত করেন। এমনকি যারা নিজেদের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে ফেলেছিল তাদেরকেও রোমান সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। থিওডোসিয়াসের জেনারেল মোডারেস একজন গথ ছিলেন, তিনি ফ্রিটিগার্নের বিরুদ্ধে কিছু জয় লাভ করেছিলেন। এমনকি এই ধরনের ছোট ছোট বিজয়ও রাজকীয় প্রচারকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল; এই সময়ে অনেক বিজয় উদযাপনেরও রেকর্ড রয়েছে, যেগুলোর সংখ্যা পূর্ববর্তী সাত দশকে হওয়া মোট উদযাপনের অর্ধেক। থিওডোসিয়াসের জয়ের প্রয়োজন ছিল এবং গথিক সংকটেরও মোকাবেলা করার প্রয়োজন ছিল।
৩৮০ সালে গথরা বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রেউথুঙ্গি গথরা ইলিরিকামে যায় এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ প্যানোনিয়ায় আক্রমণ করে। কিন্তু এদের সাথে কী ঘটেছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তারা হয় গ্রেশিয়ানের বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়েছিল, অথবা তারা শান্তিপূর্ণভাবে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল যার মাধ্যমে তারা প্যানোনিয়ায় বসতি স্থাপনের অনুমতি লাভ করে। অন্যদিকে থেরভিঙ্গিরা দক্ষিণে মেসিডোনিয়া এবং থেসালিতে চলে যায়। থিওডোসিয়াস তার নতুন সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের থেরভিঙ্গিদের মোকবেলা করার জন্য অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু অবিশ্বস্ত বর্বর এবং কাঁচা নিয়োগকারীদের দ্বারা পূর্ণ তার সেনাবাহিনীটি সহজেই পরাজিত হয়। বর্বর সৈন্যরা ফ্রিটিগার্নর বাহিনীতেে যোগ দেয় এবং অনেক রোমান পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে বিজয়ের সাথে সাথে থেরভিঙ্গিরা এই নতুন অঞ্চলের স্থানীয় রোমান শহরগুলোকে তাদেরকে নজরানা দিতে মাধ্য করে। তখনই পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য শেষ পর্যন্ত কিছু সাহায্যের প্রস্তাব দেয়। প্যানোনিয়ায় গ্রেউথুঙ্গিদের আক্রমণ মোকাবেলা করার পরে গ্রেশিয়ান সিরমিয়ামে থিওডোসিয়াসের সাথে দেখা করেন এবং তার জেনারেল আর্বোগাস্ট এবং বাউটোকে গথদের থ্রেসে পাঠিয়ে দিতে থিওডোসিয়াসকে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ৩৮১ সালের গ্রীষ্মে এই রোমান জেনারেলরা তা সফলভাবে করেও দেখান। এদিকে থিওডোসিয়াস কনস্টান্টিনোপলের উদ্দেশ্যে রওনা হন, যেখানে তিনি থেকে যান। এভাবে দীর্ঘদিনের যুদ্ধ ও রোমান সেনাবাহিনীর বড় দুই পরাজয় ও অব্যাহত অচলাবস্থার পর শেষ পর্যন্ত শান্তি আলোচনার পথ উন্মুক্ত হয়।
শান্তি ও পরিণতি
রিকোমার এবং স্যাটার্নিনাস রোমানদের জন্য আলোচনা পরিচালনা করেছিলেন এবং ৩৮২ সালের ৩ অক্টোবর শান্তি ঘোষণা করা হয়েছিল। ততক্ষণে, অ্যাড্রিয়ানোপল থেকে গথিক কমান্ডাররা চলে গিয়েছিল; ফ্রিটিগার্ন, অ্যালাথেয়াস ও সাফ্রাক্সের নাম আর কখনও প্রাচীন ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়নি, আর তাদের চূড়ান্ত ভাগ্য নিয়ে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা আছে, যেগুলোর মধ্যে যুদ্ধে তাদের মৃত্যু থেকে শান্তির বিনিময়ে তাদের নির্বাসন পর্যন্ত অনেক ধারণাই রয়েছে। শান্তি আলোচনায় রোমানরা গথদের কোনও সামগ্রিক নেতাকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং গথদেরকে রোমান সাম্রাজ্যে নামমাত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। রোমানরা তাদের সাথে ফোডেরাটি হিসাবে একটি সামরিক জোটের চুক্তি করেছিল। চুক্তি অনুসারে গথদেরকে রোমান সেনাবাহিনীতে যোগ করা হবে এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে রোমানদের জন্য গথদের পূর্ণ বাহিনীকে মোতায়েন করার জন্য আহ্বান জানানো হতে পারে। ঐতিহ্যবাহী রোমান চর্চা থেকে এখানে যে ভিন্নতা ছিল তা হচ্ছে গথদের রোমান সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে সিথিয়া, মিশিয়া এবং সম্ভবত মেসিডোনিয়ার প্রদেশে তাদের নিজস্ব কর্তৃত্বের অধীনে জমি দেওয়া হয়েছিল এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বর্বর জাতির সাথে যেমনটা করা হয় তেমনভাবে গথদেরকে সাম্রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়া হয়নি। তাদেরকে তাদের নিজস্ব আইন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে একীভূত গোষ্ঠী হিসেবে একত্রে থাকার অনুমতি দিয়েছিল। চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করার সময় থিওডোসিয়াস গথদের জন্য একটি বড় ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন।
থিমিস্টিয়াস নামে একজন রোমান বক্তা ও রাজকীয় প্রোপাগান্ডিস্ট উল্লেখ করেন যে, “গথদের সামরিকভাবে পরাজিত করা যাবে না এটা স্বীকার করে নিয়ে রোমানরা তাদেরকে শান্তি চুক্তিতে এনে প্রকৃত বিজয় লাভ করেছিল, তারা গথদেরকে জিতে নেয় এবং তাদেরকে কৃষক ও মিত্রে পরিণত করে। তিনি মনে করতেন, পূর্বে বর্বর গালাটিয়ানরা যেভাবে রোমানে পরিণত হয়েছিল তেমনিভাবে বর্বর গথরাও রোমানে পরিণত হবে। গথদেরকে বোঝানো হয়েছিল যে ধ্বংসযজ্ঞের চেয়ে একত্রে মিলে উন্নতি করাই ভালো, মাঠ ভর্তি লাশের চেয়ে মাঠ ভর্তি ফসল অনেক বেশি ফলদায়ক, থ্রেসকে সমাধিস্থলে ভরিয়ে না দিয়ে কৃষকে ভরিয়ে দিলেই লাভ বেশি।… গথরা বুঝতে পারে, সকল সামরিক দক্ষতাই অর্থহীন, শুধুমাত্র থিওডোসিয়াসের উপদেশ ও বিচারই গৌরব এনে দিতে পারে… এভাবে এই হিংস্র লোকেরা আমাদের পক্ষে আসে, স্তিমিত ও অনুগত হয়। সম্রাট তাদেরকে কৃষক বা সৈন্য যেভাবে ব্যবহার করতে চান্ন না কেন তারা তার জন্য নিবেদিত থাকে।” যাই হোক, ইতিহাসবিদ ইউনাপিয়াস দাবি করেছিলেন যে, থিওডোসিয়াস গথদেরকে জমি এবং গবাদি পশু দান করেছিলেন যাতে তারা হানদের আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি অপ্রতিরোধ্য বাধা তৈরি করে।
এই আশা সত্ত্বেও গথিক যুদ্ধ রোমান সাম্রাজ্যকে সাম্রাজ্যের সীমানার ভেতরে ও বাইরের বর্বর জনগোষ্ঠীদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পালটে দিয়েছিল। এরপর থেকে থেরভিঙ্গি গথরা এখন রোমের সাথে তাদের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করতে সক্ষম হয়, প্রয়োজন হলে তারা জোর করে সাম্রাজ্যের সীমানার অভ্যন্তরে একটি ঐক্যবদ্ধ জনগোষ্ঠী হিসেবে তারা সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ও নিজেদেরকে এরা ভিসিগথ জাতিতে রূপান্তরিত করে। কখনও কখনও তারা রোমানদের বন্ধু এবং মিত্র হিসাবে কাজ করত, অন্য সময়ে কাজ করত শত্রু হিসেবে। বর্বরদের সাথে রোমের সম্পর্কের এই পরিবর্তনের ফলেই ৪১০ সালে এসে রোমকে লুণ্ঠন ও ধ্বংস করা হয়। গথিক যুদ্ধ সাম্রাজ্যের ধর্মকেও প্রভাবিত করেছিল। ভ্যালেনস একজন এরিয়ান খ্রিস্টান ছিলেন এবং অ্যাড্রিয়ানোপলে তার মৃত্যু থিওডোসিয়াসের জন্য নাইসিনীয় খ্রিস্টধর্মকে সাম্রাজ্যের জন্য খ্রিস্টধর্মের সরকারী রূপ হিসাবে গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করতে সহায়তা করেছিল। এদিকে অনেক বর্বর জনগোষ্ঠীর মতো গথরা এরিয়ান খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়।
তথ্যসূত্র
Ammianus Marcellinus , The History, XXXI.
Wolfram, Herwig (1990). History of the Goths. Translated by Dunlap, Thomas J. University of California Press. ISBN 0520069838.
Jordanes (1915). The Gothic history of Jordanes. Translated by Mierow, Charles C. Princeton University Press.
Paul, Petit; MacMullen, Ramsay. “Ancient Rome”. Encyclopædia Britannica Online.
Beckwith, Christopher I. (2009). Empires of the Silk Road: A History of Central Eurasia from the Bronze Age to the Present. Princeton University Press. ISBN 978-1400829941.
Maenchen-Helfen, Otto J. (1973). The World of the Huns: Studies in Their History and Culture. University of California Press. ISBN 978-0520015968.
Kulikowski, Michael (2006). Rome’s Gothic Wars: From the Third Century to Alaric. Cambridge University Press. ISBN 978-1139458092
Waldman, Carl; Mason, Catherine (2006). Encyclopedia of European Peoples. Infobase Publishing. ISBN 1438129181.
Heather, Peter (2010). Empires and Barbarians: The Fall of Rome and the Birth of Europe. Oxford University Press. ISBN 978-0-19-973560-0.
Golden, Peter B. (1992). An Introduction to the History of the Turkic Peoples: Ethnogenesis and State-Formation in Medieval and Early Modern Eurasia and the Middle East. Wiesbaden: Harrassowitz. ISBN 3-447-03274-X.
Gibbon, Edward (1776). The History of the Decline & Fall of the Roman Empire. New York: Penguin. ISBN 978-0-14-043393-7.
Burns, Thomas S. (1994). Barbarians Within the Gates of Rome: A Study of Roman Military Policy and the Barbarians, Ca. 375–425 A.D. Bloomington and Indianapolis: Indiana University Press. ISBN 978-0-253-31288-4.
MacDowall, S. (2001). Adrianople AD 378: The Goths Crush Rome’s Legions. Oxford: Osprey Publishing. ISBN 978-1841761473.
Jan Retso (4 July 2013). The Arabs in Antiquity: Their History from the Assyrians to the Umayyads. Routledge. pp. 518–. ISBN 978-1-136-87282-2. Retrieved 19 August 2013.
Alexander Van Millingen. Constantinople Painted by Warwick Goble. Library of Alexandria. pp. 15–. ISBN 978-1-4655-2780-6.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ