দেশের ভবিষ্যৎ কী!

প্রকাশিত: ১২:৫৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২৩

দেশের ভবিষ্যৎ কী!

কাজী হালিমা আফরীন |

একটা বিষয় নিয়ে মোটেও লিখতে চাচ্ছিলাম না, কারণ লেখার বিপক্ষে মন্তব্য আসবে শতভাগ। অনেকেই তীব্র ভাষায় গালিগালাজ করবেন আমাকে। কোনো কোনো সত্য অনেক সময় হজম করতে হয়, আবার না বললেও পারা যায় না। আচ্ছা আপনারা বলুন ফেসবুকে কি এখন ঢোকা যাচ্ছে? সমস্ত ভুইফোঁড় চ্যানেল থেকে শুরু করে সমাজের কিছু শ্রেণীর মানুষ হিরো আলমকে নিয়ে তার নির্বাচনী প্রচারণায় যেভাবে উন্মাদনায় মেতেছেন গোটা বিশ্বে এমনকি বাংলাদেশেও এর আগে হয়ত দেখা যায়নি এমনটা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে বড় বড় কলামিস্টরা পর্যন্ত তার ছাপাই গেয়ে ভিডিও দিচ্ছেন। সবই ঠিক আছে কারো ভালো বলা তো আর দোষের কিছু না। দেশের মানুষের সামনে একমাত্র হিরো আলম ছাড়া যেন কেউ নেই, কোনো ভরসা নেই। কিনারাবিহীন সমুদ্রের গভীর জলের উপর ভাসতে ভাসতে মানুষ এতটাই আশাহীন হয়ে পড়েছে যে, দূর থেকে ভেসে আসা একটা পঁচা শলার কাঠি দেখেও মানুষ তা ধরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।

এমনকি তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী পদেও দাঁড়াতেন তাও তিনি হয়ত জয়ী হতেন! চিন্তা করেছেন কত ভয়াবহ দেশের বর্তমান অবকাঠামো? একটা দেশ থেকে কীভাবে শিক্ষিত-জ্ঞানী-সৎ-সাহসী মানুষ বিলুপ্তি হতে পারে তা ভাবাবে যুগ-যুগান্তর ধরে। আর যদি কেউ থেকেও থাকেন, তারা হয়ত দেশের জন্য অযাচিতভাবে জীবন দিতে চান না। তাদের মেধা-যোগ্যতার প্রতিফলনে দারুণভাবে হোঁচট খেয়েছেন তা সহজেই অনুমেয়।

হিরো আলম যেসব মিউজিক ভিডিও বা অশ্লীলভাবে নাচানাচি করে বেড়ান তা কিন্তু কোনোভাবেই সভ্য সমাজের জন্য মানানসই না। তারপরেও এক শ্রেণীর মানুষের বদৌলতে তার ফলোয়ারের সংখ্যা মিলিয়ন মিলিয়ন। আচ্ছা হিরো আলমের কাছ থেকে দেশের জনগণ আসলে কী শিক্ষাটা পাচ্ছে বলুন তো? অনেকেই বলেছেন তিনি কোনোভাবেই তার কার্যক্রম থামান না। তার ধৈর্য্য অনেক। একজনের যদি টার্গেট থাকে সে যেভাবেই হোক টাকা রোজগার করবে, তখন সে সবকিছু করবে endless ভাবে। আর যদি সময় নষ্ট করে তার জোকারি দেখে সেই টাকা ইনকামের সুযোগটা জনগণ করে দেন তাহলে সে থামবে কেনো? যিনি এসব বিনোদন দিচ্ছেন, আর যারা বিনোদন পাচ্ছেন এসব তাদের ব্যাপার।

তিনি বগুড়ার দু’টো আসন থেকে উপনির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী হিসেবে। তিনি হবেন দেশের একটা অঞ্চলের ধারক ও বাহক। বেশ আশা জাগানিয়ার কথা। একজন টোকাই থেকে উঠে আসা একজন এমপি-মন্ত্রী-মিনিস্টার হবেন তাতো কম কথা না। তাতে আশ্চর্য হওয়ারও কিছু নেই। কারণ দেশের সংসদে নাচ-গান-অভিনয়-লিখতে না পারা-পড়তে না পারা-কথা বলতে না পারা মানুষ এসব পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন এমন নজিরও রয়েছে। কাজেই হিরো আলমেরও কোনো যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেব না করলেও চলবে।

হিরো আলম এতদিন যেসব কাজ করে মানুষের যত না আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হতে পেরেছিলেন, একজন এমপি হওয়াকে কেন্দ্র করে তিনি সর্বোচ্চ শীর্ষে চলে গেছেন।

রাজনৈতিকভাবে দেশ এখন যে পর্যায়ে চলে গেছে তাতে মানুষের সমস্ত আশা-ভরসা-বিশ্বাস সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষ এতটাই বিরক্ত দেশের বিগত বা চলমান রাজনীতি নিয়ে তো যেভাবেই হোক মানুষ এর পরিবর্তন চায়। সে হিরো আলমের দিয়ে হলেও। কিন্তু পারত পক্ষে সেটা হবে আবেগের বহিঃপ্রকাশ। যা থেকে বিন্দুমাত্র দেশ বা জাতির কল্যাণকর কিছু হওয়ার নয়। রাজনীতি বা সংসদের মত জায়গায় থাকা উচিত ছিল শিক্ষিত-জ্ঞানী-বিচক্ষণ-সৎ-নির্ভিক ও স্বার্থান্বেষণীহীন ব্যক্তিত্ব। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। তাই যোগ্যতা আজ কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়।

সবচেয়ে দুঃখ লাগে মানুষ যখন কোনো একটা বিষয় সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হন না। আমি একটা বিষয় আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই। হিরো আলমের লিখিত যে একখানা বই আপনারা দেখেছেন সেটা কি তারই লেখা? আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। সমাজের এমন অনেক হীনমন্যতায় ঘেরা লেখক রয়েছেন যারা যেকোরোর জীবনী লিখে দেবেন অত্যন্ত চমৎকারভাবে। পক্ষান্তরে তিনি পান মোটা টাকা। আর লেখক হিসেবে নাম হয় যার জীবনী তার। আই ওয়াশ করারও একটা মাত্রা থাকা উচিত।

হিরো আলমকে ফলো করে দেশের তরুণরা কী শিক্ষা পাচ্ছে? অশ্লীল নাচানাচি ও এরকম জোকারি করে ভাইরাল হয়ে সস্তা জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে দেশ চালানোর বাহকও হওয়া যায়? তাহলে সবাই তো সেদিকেই পা বাড়াবে। নিম্নবিত্তের সবাই বেশি করে অনুপ্রেরণিত হবে শিক্ষা-যোগ্যতা কোনো দরকার নেই।

আমি আরেকটা কথা বলতে চাই হিরো যদি দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান তাহলে সর্বপ্রথম তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি পরিবারের কোনো খবর রাখেন না এমন অভিযোগ কিন্তু পরিবার থেকে রয়েছে। যেটা মোটেও কাম্য নয়। আর তার প্রমাণও কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। একজন নারী সঙ্গে অশ্লীল ও ঘনিষ্ঠভাবে নাচানাচি ও মেলামেশা করে তার নিজের বউ-সন্তানের কতটুকু শ্রদ্ধা বা দায়িত্বশীল হতে পারছেন সেটাও দেখার বিষয়।

এই লেখাটা আমার বিশাল সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু না।
দেশের শাষন ব্যবস্থা চলবে এভাবেই। দেশে যারা থাকবেন মেনে নিয়েই থাকবেন। সবার জন্য শুভকামনা।

কাজী হালিমা আফরীন
টরন্টো, কানাডা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ